প্রথম প্রেম – পর্ব ৩

আগের পর্ব

বেশ কিছুদিন পর আবার ফিরে এলাম এই মিষ্টি প্রেমের গল্পের সিরিজ নিয়ে। এবার নিয়মিত পর্ব আসতে থাকবে। যারা আগের পর্ব গুলো পড়েননি, তাদের প্রথম প্রেম সিরিজ এর আগের গুলো পড়ে নেওয়ার অনুরোধ রইল।

বাসে উঠে জানলার ধারে সীট পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কলেজ থেকে বেড়িয়ে মৌমিতার বাড়ির পথ ধরেছি। আজ মাথা থেকে একটা বোঝা নামল। কলেজে সেমিস্টার চলছিল, আজ সেটা শেষ হল। শহর কোলকাতা থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। আকাশে বেশ নানা রকম রঙের আঁকিবুঁকি। কিন্তু আমার সেসবে কোনো উৎসাহ নেই। পরীক্ষার জন্য বেশ কয়েকদিন মৌমিতার সঙ্গে ঠিকমত কথা হয়নি। তাই আজ দেখা করার উৎসাহে মন অস্থির হয়ে আছে।

মৌমিতার সঙ্গে আমার শেষবার দেখা হয়েছিল প্রায় মাস তিনেক আগে। সেদিন সিনেমা হলের মায়াবী অন্ধকারে ওর নরম শরীরের প্রতিটি ভাঁজে আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিতে ইচ্ছে করছিল। সেদিনের পর থেকেই প্রায় রাতেই ফোনে আমদের কথপোকথন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরেই সেক্সের দিকে টার্ন নেয়। আমরা দুজনেই যৌন অনুভূতিটাকে ভীষনভাবে উপভোগ করি। মৌমিতার মধ্যে আর আগের মত জড়তা নেই। মৌমিতা এক অদ্ভুত মেয়ে। ওর মধ্যে সারল্য আছে। স্নিগ্ধতা আছে। আবার নিবিড় মূহুর্তে কামনার আগুনও আছে। যে আগুনের আঁচে প্রতি মুহুর্তে আমার নিজেকে সেঁকে নিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে হয় আরো প্রখর হয়ে উঠে সেই গনগনে আঁচ আমাকে পুড়িয়ে দিক। শুধু একটা নিভৃত স্থানের অভাবে আমাদের দুটো কামসিক্ত শরীর এক হতে পারছে না। এই নিয়ে ফোনেও আমরা অনেক আলোচনা করেছি। কিন্তু সুরাহা হয়নি। একদিনের জন্য যে কোথাও ঘুরতে যাব, তার উপায় নেই। মৌ বাড়ি থেকে পারমিশন পাবে না। হোটেলে যেতেও ও রাজী না।

কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা অদ্ভুৎ মেসেজ দেখি। মেসেজটি পাঠিয়েছে মৌমিতা। তাতে শুধু লেখা – একটা ঠিকানা পাঠালাম। আজ পরীক্ষা শেষে এই ঠিকানায় চলে এসো। ঠিক বিকেল পাঁচটা। অনেকদিনের ইচ্ছেপুরনের সুলুকসন্ধান হয়তো পেয়েছি। বাকী কথা সামনা সামনি হবে। ঠিক সময়ে চলে এস….। মেসেজটা দেখে আমি ওকে ফোন করি। কিন্তু ফোনে এই বিষয়ে একটা কথাও বলল না। যা বলার নাকি সামনাসামনি বলবে। তাই মনটা আরও বেশী উত্তেজিত হয়ে আছে। দেখতে দেখতে আমার স্টপেজ এসে গেল। কন্ডাকটরকে ভাড়া মিটিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ি। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেখি সেটা একটা ছোট ক্যাফেটেরিয়া। ফোন করলাম মৌ কে। বললাম, এসে গেছি, তুমি কোথায়? বলল ক্যাফের ভিতরে চলে এসো, আমি এখানেই আছি। ঢুকে দেখি ডানদিকের রো এর একেবারে শেষ টেবিলে বসে আছে মৌমিতা। লাইট অরেঞ্জ কালারের টপ, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক।

প্রারম্ভিক বিহ্বলতা কাটিয়ে এবার একটা অদ্ভুৎ দৃশ্য নজরে এল। একই টেবিলে ঠিক মৌয়ের উলটোদিকে বসে আছে অন্য আরেকটি মেয়ে। ব্ল্যাক টিশার্ট, স্ট্রেইট করা চুল থেকে যেন একটা রশ্মি নির্গত হচ্ছে। যেন তার নিজস্ব একটা আলো আছে, আর সেই আলোয় আলোকিত হয়ে আছে গোটা ক্যাফেটেরিয়া। এতক্ষণে মৌ আমাকে দেখতে পেল। হাতের ঈশারায় ওড় দিকে ডাকলো। কাছে যেতেই ওর সেই মন ভোলানো মিষ্টি হাসি। আমার শিঁড়দারায় একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল যেন। মৌ ওর পাশের চেয়ারটা হালকা পিছনে টেনে আমাকে বসতে আহ্বান জানালো। এবার সামনে থেকে দেখলাম অপর মেয়েটিকে। স্থির নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে ঈষৎ হাসি। মুখে আর কোনো প্রসাধনীর ছাপ নেই। শুধু চোখের নীচে সুনিপুণ টানে এক লাইন কাজল টানা। গভীর চোখদুটোর যেন একটা সম্মোহনী শক্তি আছে।

হঠাৎ মৌমিতা বলে উঠল- ও হল মোহর, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বলতেই মোহর ওর হাতটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমিও হাত ছোঁয়ালাম ওর হাতে।
তারপর মোহর বলতে শুরু করল- কী জাদু করেছো বলতো আমার বন্ধুটার ওপর? উঠতে বসতে শুধু একটাই নাম জপে যাচ্ছে মেয়েটা। শুভম, শুভম আর শুভম! তাই আজ মানুষটাকে চাক্ষুস করতে চলেই এলাম।
আমি ঈষৎ হেসে বললাম ভালোই করেছো। তা, তোমরা চুপচাপ বসে আছো? কিছু অর্ডার করনি?

মৌ – না, তোমার আসার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। বলো, কি খাবে?
আমি – এনিথিং, বেটার ইউ চুস….
মোহর – আমার শুধু একটা কফি হলেই চলবে।
মৌ – না, শুধু কফি নয়। শুভম পরীক্ষা দিয়ে সোজা কলেজ থেকে এখানে এসছে। He must be hungry. আমরা নুডলস অর্ডার করি?
মোহর – বাবাহ্! কত চিন্তা! You are very lucky Shubham. এরকম একটা মিষ্টি কেয়ারিং গার্লফ্রেন্ড পেয়েছো তুমি..
আমি – হ্যাঁ জানি আমি। She is a very nice girl. আচ্ছা আজকের এই ট্রিটটা কিন্তু আমার তরফ থেকে।
মৌ – মোটেই না, আমি ডেকেছি তোমাকে এখানে, So, treat is mine.
আমি – হ্যাঁ ভালো কথা, কেন এখানে আজ ডাকলে সেটাই তো এখনও জানা হল না। বলো কিসের জন্য ডাকলে?
মোহর – তোমার কথা ভেবে ভেবে মৌ ভীষণ হর্ণি হয়ে গেছে, তাই আজ তোমাকে এখানে ডেকেছে।
মৌ – আহঃ মোহর, বাজে কথা একটু কম বল না!
মোহর – ও আচ্ছা! এখন আমি বাজে কথা বলছি? আর কদিন ধরে যে আমার রুমে বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে Pre Honeymoon করার প্ল্যান করে আমার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছিস, তার বেলা?
আমি – মানে?
মোহর – মানে আবার কী! তোমাদের দুজনেরই নাকি সেক্সের খুব বাই উঠেছে, তাই আমার ঘরটাকে কয়েকঘন্টার জন্য তোমাদেরকে উৎসর্গ করে দিতে হবে।
আমি – বাঃ! তুমি তো বেশ মহানুভব বন্ধু দেখছি!
মোহর – থাক, আর টুপি পরাতে হবে না। আমার বাবা, মা দুজনেই চাকরি করে। বাবা ব্যাঙ্কে, আর মা স্কুল টিচার। তাই সারাদিন বাড়ি ফাঁকাই থাকে। এই সুযোগে তোমার গার্লফ্রেন্ড আমার ফ্ল্যাটে এসে তোমাকে দিয়ে সিল ফাটানোর প্ল্যান করেছে।
মৌ – তুই না বেশী কথা বলিস মোহর। ফালতু কথা গুলো একটু কম বল না… আমি যখন ওকে ডেকেছি, তখন বিষয়টা আমিই বলি ওকে।
মোহর – উফ!.. পুরো মা-কাকিমা সেন্টিমেন্ট! এদিকে শুভম এর মেশিন এর কথা ভেবে দিনে ৫বার প্যান্টি চেঞ্জ করছে, আর মুখে “মৌ অতি সুবোধ বালিকা”!
আমি – Okay I have got the point. এবার বলো, আমরা কবে যাচ্ছি মোহরের ফ্ল্যাটে?
মোহোর – বাবা! তুমি তো দেখছি পারলে এখনই আমার ফ্ল্যাটে চলে আসতে চাও!
আমি – Why not? শুভস্য শীঘ্রম!
যদি সুযোগ থাকে বল, আমি এখনই যেতে প্রস্তুত।
মৌ – না না শুভম, আমরা next বুধবার টাইম ফিক্স করেছি। যদি তোমার অসুবিধা না থাকে, তাহলে ঐ দিন সকাল ১১টা নাগাদ আমরা মোহরের ফ্ল্যাটে চলে যাব। ওর ফ্ল্যাটটা গল্ফগ্রীন-এ। Address আমি তোমাকে মেসেজ করে জানিয়ে দেব।
আমি – ওকে, আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি ঠিক পৌঁছে যাব।

চলবে…
(গল্প কেমন লাগছে তার ফীডব্যাক জানাতে বা আমার সাথে যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে মেইল করুন [email protected])