আমার নাম অভিক। আমি বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। আমার জন্ম আমেরিকাতে। আমার বয়স এখন ২৫ বছর। আমি একজন লেখক। বলা চলে একজন জনপ্রিয় লেখক। গত কয়েক বছর ধরে আমার লেখা বই আমেরিকাতে বেস্টসেলার ছিল।
২০১৯ এ এখনো আমার কোন বই বের হয়নি। তাই আমার পাঠকরা খুবই হতাশ। আমিও নতুন কোন গল্প পাচ্ছিনা লেখার জন্য। তাই আজ সকালে লস এঞ্জেলসে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম কান্ট্রিসাইডের দিকে।
কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে একঘেয়েমি চলে এসেছিল।
তাই একটু রিফ্রেশ হওয়ার জন্য ও কাজ থেকে একটু বিরতির জন্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
আমার উদ্দেশ্য আশেপাশের ছোট কোন শহর বা গ্রামে ১ সপ্তাহের ছুটি কাটানো। এর মাধ্যমে আমার একঘেয়েমিও দূর হবে, মন মানসিকতাও ভালো হবে।।
আমি গাড়ি চালিয়ে অনেক দূরে চলে এসেছি। বিকেলে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়ায় এখন সন্ধ্যা শেষে রাত ঘনিয়ে এসেছে। বাইরে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।
আমি রেডিও চালু করে ছোট রাস্তা দিয়ে ড্রাইভিং করতে লাগলাম।চারপাশে পাহাড় ও বন।
কিছুক্ষণ পর রেডিওতে সমস্যা দেখা দিল। আমি ড্রাইভিং এ এক হাত রেখেই অন্য হাত দিয়ে রেডিও য়ে হাত দিয়ে বাড়ি দিলাম। রেডিও কাজ করতে লাগলো। আমি রেডিওর দিক থেকে দৃষ্টি সামনে আনতেই দেখি সামনে একটা বিশাল গাছ! রাস্তায় মুহূর্তেই একটা গাছ কিভাবে এলো চিন্তা করার সময়ও পেলাম না। সজোড়ে ব্রেক চাপলাম কিন্তু কাজ হলো না। গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা খেল… এরপর কিছু মনে করতে পারলাম না।।
কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো। কার যেন কথা ভেসে আসলো।।
– Is someone alive there?
– Ughh here I’m. Help me.
আমি মাথা ব্যথা নিয়ে কথা বলতে
পারছিলাম না। লোকটি এগিয়ে এলো আমাকে উদ্ধারের জন্য।
– দ্রুত গাড়ি থেকে বের হও।
– তোমার কি মনে হয় আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি!
– হ্যা, দ্রুত করো। এখানে এখন কারফিউ চলছে।
লোকটি টেনে আমাকে গাড়ি থেকে বের করলো। লোকটি একজন Sheriff পাশেই পুলিশের গাড়ি রাখা। আমি ব্যথায় মাথা ধরে রাখলাম। Sheriff আমায় ওর হাত দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– এখানে কয়টা আঙুল বলো?
– হুম
– কয়টা আঙুল?
– তিনটা
– আজ কি বার?
– শনিবার
– ওকে। এটা কোন বছর?
– ২০১৯
– তোমার নাম?
– আমার নাম অভিক খান।
আমি শেরিফকে থামিয়ে বললাম,’ আমি এখানে কিভাবে আসলাম? আমিতো রাস্তায় ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার মাঝে গাছ কিভাবে এলো??’
শেরিফ আমার প্রশ্ন থামিয়ে ওর গাড়িতে চড়তে বলল
আমি বললাম আমার গাড়ির কি হবে।
ও বলল চিন্তার কারণ নেই। আমি শীঘ্রই তোমার গাড়ি ম্যাকানিক্সের
কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।।
আমরা দুজন গাড়িতে চড়লাম।
– আমি এখনো বুঝতে পারছিনা। আমি এখানে কিভাবে এলাম। I was somewhere else.হঠাৎ রাস্তার সামনে গাছ কিভাবে এলো??
– তুমি ক্রাস নিয়ে এখনো কনফিউজড। তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি আমার গাড়ি নিয়ে শহরের শেষ চক্কর দিচ্ছিলাম।
– তুমি কারফিউ নিয়ে কি যেন বলছিলে
– ও হ্যা।এখানে পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা বন্য ভালুকের উৎপাত শুরু হয়েছে। তাই আমি শহরের নিরাপত্তার জন্য টহল দিচ্ছি। লোকজনকে নিরাপদে রাখা আমার একান্ত দায়িত্ব।
– ওহ। এখন তো রাত অনেক হলো। তো আমি থাকবো কোথায়। কোন মোটেল আছে শহরে?
আমার কথা বলা শেষ না হতেই শেরিফ বলল।
‘Welcome to Pine Falls.’ সামনে একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল এই বাসায় ঢুকে পড়ো। দরজায় চাবি ঝুলানো আছে। জলদি ঢুকে পড়ো
– কি? কার বাসা এটা। আমি কিভাবে অন্যের বাসায় থাকবো
।কোন মোটেল নেই এই শহরে?
– এত কিছুর জবাব দিতে পারবোনা এখন। আগামীকাল দেখা হবে। আর হ্যা যদি বুনো ভালুকের খাবার না হতে চাও তবে বাইরে বের হওয়ার চিন্তা করোনা
বলে শেরিফ গাড়ি নিয়ে চলে গেল।।
আমি দরজা খুলে ঘরে ঢুকলাম। দেখে মনে হলো একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। অনেকদিন ধরে কোন মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি মনে হলো।
আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম তাই। অপরিষ্কার সত্ত্বেও বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভাবতে লাগলাম, শেরিফ একটা wired প্রকৃতির। accident এর সময় কোন শেরিফ কোন প্রকার scene evidence, Doctors call ইত্যাদি না করেই ভিক্টিমকে নিয়ে এমন ব্যস্ততা দেখায়! নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে বলে মনে হলো। আমি চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে পাকা রাস্তা দিয়ে চলার পথে মধ্যে গাছ চলে এলো। আর পাকা রাস্তা থেকে আমি কিভাবে কর্দমাক্ত কাচা রাস্তায় চলে গেলাম। মনেহলো আমি যেন এক অন্য কোন জগতে চলে এসেছি!আমি কোথায় ছুটির জন্য বেরিয়েছিলাম। এদিকে এক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে গেলাম!
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙলো। রাতে ব্যথা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ায় অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। এখন ব্যথা একটু কম মনে হলো।
রাতে শেরিফের সাথে ভালোমতো কথা হয়নি। মনে হয়েছিল সে দৌড়ের ওপরে আছে। আমাকে দ্রুত গাড়ি ঠিক করে এই শহর থেকে বের হতে হবে। তাই আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম পুলিশ স্টেশন খোজার জন্য।
দরজায় দাড়াতে দেখি দুটা মেয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছে। দুটা মেয়েই অসম্ভব সুন্দরী! এমন সুন্দরী মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি!
– See? there he is.. আমি তোমাকে যা বলেছিলাম তাই সত্য!
– হ্যা। এতো সত্যিই একটা যুবক!
– আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না চলো আপু।
– আরে দাড়াও। কিছু হবে না আমি ওই কুসংস্কার বিশ্বাস করি না।
– তুমি থাকো আমি গেলাম
বলে ২য় মেয়েটি দৌড়ে রাস্তা থেকে বাসার পাশে ঝোপের আড়ালে লুকালো।
আমি দাঁড়িয়ে থাকা ১ম মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটি বলল
– Hello!
– Hey! তোমরা কি আমাকে নিয়ে কথা বলছিলে?
– না তেমন কিছুনা। by the way,
I’m Alice & you are?
– I’m Avik. Nice to meet you Alice.
– The pleasure is also mine.
ওইযে দৌড়ে পালালো সে আমার ছোট বোন। ওর নাম Mia. সে একটু shy. hehe
– তা আমি ওর দৌড় দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম।।
– তো তুমি এখানে কেমন করে এলে?
বলে Alice আমার খুব কাছে চলে এলো। সে আমাকে আলিঙ্গনের মতো করে ধরতে লাগলো। আমি একটু awkward ফিল করতে লাগলাম। যেভাবে আমাকে embrace করছে মনে হলো সে একটু বেশিই friendly হয়ে যাচ্ছে!
– মানে গতরাতে আমার গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। তাই শেরিফ আমাকে এখানে নিয়ে আসে। তুমি কি বলতে পারো যে কোথায় গেলে শেরিফকে দেখতে পাবো?
– বলতে পারি কিন্তু তার আগে আমাকে বলতে হবে তুমি কি করো?
বলে Alice আমার আরো কাছে এগিয়ে এলো। সে আমাকে গার্লফ্রেন্ডের মতো জড়িয়ে ধরতে লাগলো।
– মানে আমি একজন লেখক। উপন্যাস লিখি
– ওহ! তোমার কয়েকটা উপন্যাসের নাম জানতে পারি?
– Ray of Sunshine. Rainbow Castle, The Love ইত্যাদি আমার জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে কয়েকটি।
– ওয়াও। you are a famous writer. it’s my good luck to see you
বলে সে ও তার বোন দৌড়ে আমাকে ফেলে পালাতে লাগলো। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না!
Alice যাওয়ার সময় বলে গেল এই রাস্তা ধরব সোজা চলে গেলে শেরিফের গাড়ি দেখতে পাবো।।
কি অদ্ভুত! আমি ভাবতে লাগলাম। এই শহরের লোকজন খুবই অস্বাভাবিক!
whatever, আমি শেরিফের খোজে সামনে এগিয়ে যেতেই শেরিফের গাড়ি দেখে এগিয়ে গেলাম সেখানে।
মনে হলো এটাই শেরিফের বাসা।
আমি মিঃ শেরিফ বলে ডাকতে লাগলাম।
আমার ডাক শুনে সে বেরিয়ে এলো।
– you are still here?
– আমার গাড়ি ছাড়া আমি কোথায় যাবো?
– ও হ্যা। তোমার গাড়ি।
– আমার গাড়ি কি ঠিক হলো
– না। যেখানে ছিল সেখানেই আছে।
– তো ম্যাকানিকের কাছে কখন নিবে?
– তুমি চিন্তা করোনা। আমি আজকেই তোমার গাড়ি ম্যাকানিক্সের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া আজ রবিবার তাই ম্যাকানিক ছুটিতে আছে। তোমাকে কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে
– কাল পর্যন্ত অপেক্ষা মানে! আমি কোথায় থাকবো?
– আপাতত যেখানে
আছো সেখানেই। ওই বাসা শহরের সম্পত্তি তাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। তাছাড়া শহরের মাঝখানে একটা কফিশপ আছে। সেখানে গেলে নাস্তার ব্যবস্থা হবে। bye
– Thanks. Bye
এই শহরের নাম Pine Falls. ছোট কিন্তু অদ্ভুত এক শহর বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে।
আমি সামনে এগিয়ে যেতেই একটা মেয়েকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম শহরের একমাত্র কফিশপটা কোথায়। কিন্তু মেয়েটি আমাকে দেখে Get Away বলে উল্টো পথে দৌড়তে লাগল।
get away, Leave me alone বলতে বলতে মেয়েটা দৌড়ে পালিয়ে গেল।
Strange কিছুই বুঝলাম না।
রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চে বসলাম।