সালাম আলেকুম, দোস্তোওঁ! আমি আসিফ ইকবাল। পাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী ইলাহাপূর নগরের বাসিন্দা। বাড়ীতে আমি আর আমার সুন্দরী আম্মিজান, লায়লা ইকবাল, থাকি। আমার আব্বু দুবাইয়ে কর্মরত, বছরে একবার ছুটিতে পাশ্মীরে বেড়াতে আসে। আর আমার বড় বোন, ২৩ বছর বয়স্কা আয়শা ইকবাল (বর্তমানে নাম আয়েশা আনসারী) শাদী করে শোওহরের সাথে দুবাইয়ে বসবাসরতা।
ওহ! থোড়া গলতি হয়ে গেলো। পাশ্মীরের রাজধানীর নাম ইলাহাপূর আর নেই। মুখ্যমন্ত্রী বরেন্দ্র লোদীজীর হিন্দুত্ববাদী সরকার আমাদের মুসলমান অধ্যুষিত পাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ ৭৩০ ধারা বাতিল করার পর থেকে এখানে ব্যাপক পরিমাণে হিন্দু অভিবাসীরা, বিশেষ করে হিন্দু মরদের দল, আগমন করতে শুরু করেছিলো। বহিরাগত হিন্দুরা বেশিরভাগই চতুর, কুটিল আর ষড়যন্ত্রী, খুব অল্প সময়েই তারা পুরো রাজ্যের সমস্ত ব্যবসা, শাসনক্ষমতা কব্জা করে ফেলে। আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের স্থানীয় সরকারও হিন্দুদের হস্তগত হয়ে যায়। হিন্দু স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তথা HSS নামক কট্টর সাম্প্রদায়িক দলের নেতারা ভোটে কারচুপি করে রাজ্যের সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ক্ষমতা পাকড়াও করে তারা আমাদের ঐতিহ্যবাহী নগরের নাম ইলাহাপূর পাল্টে নতুন করে “রামনগর” নামকরণ করে।
বিগত কয়েক বছর ধরে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের সমস্ত ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজনীতি ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই কট্টর হিন্দুদের দাপট চলে আসছে। নিজেদের রাজ্যে আমরা মুসলিমরাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। বিশেষ করে মুসলিম পুরুষরা।
তবে মানতে হবে, হিন্দুরা ক্ষমতা দখল করে নেবার পর থেকে আমাদের পাশ্মীরী মুসলমান আওরতদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। হিন্দুরা এসে নারীমুক্তির স্বাদ দিয়েছে আমাদের সম্প্রদায়ের জেনানাদের। সমস্ত বড়বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দফতরগুলো হিন্দু মালিকদের দখলে। লোদী সরকারের “পাশ্মীরী বেটী বাঁচাও” কর্মসূচীর আওতায় সেসব প্রতিষ্ঠানে পাশ্মীরী মুসলমান মেয়েদের খুব সহজে চাকরীতে নিয়োগ করা হচ্ছে। আগে ইলাহাপূর… থুড়ি, রামনগরের সড়কে বুরখাওয়ালী তো বটেই, হিজাব ছাড়া কোনও মেয়েলোক দেখা যেতো না। আর এখন বুরখা তো বলতে গেলে কার্যতঃ নিষিদ্ধই, হিন্দুরা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে আমাদের মুসলমান রমণীরা হিজাবও ত্যাগ করতে আরম্ভ করেছে।
শাদীশুদা হোক কিংবা কুনওয়ারী মুসলিম লড়কী, সকলেই এখন খোলা রেশমী চুল উড়িয়ে চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এমনকী, গায়র-মাযহাবী হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি অনুকরণ করে অনেক মুসলিমাকে তো পেট-নাভী-পিঠ দেখানো শাড়ী-সায়া পরে রাস্তাঘাটে দেখা যায়, যা কয়েক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিলো। আর বাদবাকী মুসলমান আওরত শাড়ী পরার সুযোগ বা সাহস না পেলেও পিছিয়ে নেই, তারাও বগল দেখানো স্লীভলেস আর বুকের খাঁজ বের করা লোকাট কামিয পড়ে ঘোরাফেরা করে।
সম্প্রতি লোদী সরকার তিন ত্বালাক প্রথা বাতিল করার পর থেকে রাজ্যের মুসলিমাদের মধ্যে হিন্দু স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (HSS) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেক মুসলমান আওরতকেই হিন্দু পুরুষবন্ধুর সাথে ডেটিং, শপিং, ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজী করতে দেখা যায়। কয়েকজনা উদ্যোগী ও মুক্তমনা মুসলমান আওরত মিলে ম্লেচ্ছ স্বয়ংসেবিকা সঙ্ঘ (MSS) নামে সামাজিক সংগঠন তৈরী করেছে। বর্তমানে পাশ্মীরের সকল মুসলমান মহল্লায় MSS-এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কট্টর হিন্দুদের HSS-এর সহপ্রতিষ্ঠান মুসলমিা পরিচালিত MSS-এর মূল কার্যসূচী হলো হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রীতি ও সম্প্রীতির সম্পর্ক নিশ্চিৎ করা।
মুসলমান পুরুষদের হালৎ যাই হোক, লোদীজীর সরকার এসে আমাদের পাশ্মীরী মুসলিমাদের নারীসাম্যতার স্বাদ যে দিয়েছে তা অস্বীকার করার নেই।
তবে নারীস্বাধীনতার কিছুটা খারাপ প্রভাবও আছে। হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রশ্রয়ে আমাদের স্বামী-অনুগতা, ঐতিহ্যবাহী মুসলমান মেয়েরা ঈদানীং একটু অসহিষ্ণু, স্বাধীনচেতা হয়ে উঠছে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরাচরিত পরম্পরা ভুলে যাচ্ছে মুসলমান মেয়েরা।
যেমন, আমারই আপন বেহেন – আয়শা – স্বামীর সাথে ঝগড়া করে সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফিরে এসেছে। মাস আটেক আগে দুলাভাইয়ের সাথে নিকাহ হয়েছিলো আমার বেহেনের। এখন শোওহরের সাথে কাজিয়া করে একাই দুবাই থেকে চলে এসেছে আয়শাবু – আর ফিরে যাবে না বলে জেদও ধরেছে। শুধু তাই না, নিকাহের রেজিস্ট্রীতে ওর পদবী পাল্টে “আয়েশা আনসারী” লেখা হয়েছিলো, পাশ্মীরে ফিরে এখন ও শাদী-পূর্বের “আয়েশা ইকবাল” নামেই নিজের পরিচয় দেয়া শুরু করেছে।
আম্মি অনেক বুঝিয়েসুঝিয়েও আয়েশাবুকে রাজী করাতে পারছে না। একদিন রাতে আমি আড়ি পেতে আম্মি, বেহেন আর মামী, খালাদের আলোচনা শুনে বুঝতে পারি আসল কারণ। আয়েশাপুর মূল অভিযোগ হলো ওর শোওহর অর্থাৎ আমার দুলাভাই আবদুলের শারীরিক অক্ষমতা, অর্থাৎ দুলাভাইয়ের বীর্য্যদৌর্বল্য আর পাতলা সমস্যা আছে, যার কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম। আর নিজের শারীরিক অপূর্ণতার কারণে দুলাভাই অনেক সময় আমার আপুকে মানসিক অত্যাচারও করে। তাই আর সহ্য করতে না পেরে শোওহরের সংসার ত্যাগ করে আয়েশাপু পাশ্মীরে ফিরে এসেছে। আম্মি আর খালা অনেক করে বুঝিয়েও কোনও লাভ হলো না। বাচ্চাকাচ্চা নেবার খুব খায়েশ আয়েশাপুর, ছোটোবেলা থেকেই বাচ্চা পছন্দ করে আপু। বিয়ের আগে ঠাট্টা করে বলতো ওর নাকি এক ডজন বাচ্চা হবে। এহেন সন্তানকামী আওরতের কিসমতে নপুংসক জামাই জুটলে কিভাবে নিকাহ টিকে থাকে বলুন তো?
সে যাই হোক। আম্মি, গাজালা মামী আর ফারাহ খালা সবাই মিলে অনেক করে বুঝিয়ে স্বামীকে ত্বালাক দেয়া থেকে আয়েশাপুকে বিরত করতে পারলো। তবে নিকাহ ভাংতে নারাজী হলেও আয়েশাপুর সাফ কথা, যেকোনও মূল্যে ওর বাচ্চা চাই।
এ কথা শুনে আমার মুক্তমনা, ফ্যাশন সচেতন ফারাহ খালা টিপ্পনী কেটে মন্তব্য করলো, “বেটী, পাশ্মীরে তো ফিরে এসেছিস, পেট ফোলাতে সময় লাগবে না…”
বলে ওরা তিনজনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। ফারাহ খালা খুব শৌখীন রমণী। এক হিন্দু প্রতিষ্ঠানে পার্সোনাল সেক্রেটারীর চাকরী করে। আম্মির স্মার্ট ছোটোবোন ফারাহ ইকবাল আবার “ম্লেচ্ছ স্বয়ংসেবিকা সঙ্ঘ” তথা MSS-এর একজন সদস্যাও। তবে উদারমনস্কা হলেও আমার ফারাহ খালা ধর্মপ্রাণ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে। হরদম নিত্যনতুন পশ্চিমা আর হিন্দুয়ানী পোশাকে ওকে দেখা যায়। আজকেও শাড়ী-কাঁচুলী পরে আমাদের বাসায় এসেছে। মূলতঃ সুন্দরী, লাস্যময়ী ফারাহ খালার খোলা বগল, দুধের খাঁজ আর পেটের ভাঁজ দেখার জন্যই আমি রমণীদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলাম। আর তখনই কানে আসছিলো আমার বেহেন-এর সংসার বিষয়ক আলোচনা।
আয়েশাপু বুঝে নাকি না বোঝার ভান করে প্রশ্ন করলো, “তার মানে?”
তখন আম্মি মুখ টিপে হেসে দিলো। আর গাজালা মামী হেসে বললো, “বুদ্ধু বেটী, মতলব বুঝতে বেশি ওয়াক্ত লাগবে না…”