রাত নয়টা বাজে। মাইশা চুপচাপ ফোন রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আপাতত কিছুই মাথায় কাজ করছে না। আর ছয় মাস পর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। তেমন প্রস্তুতি নেই তার। তবে তার চিন্তা নেই। তার মামা ঢাকা শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রিন্সিপল। কোনভাবে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাশ হলে সে ভর্তি হয়ে যাবে সেখানে। আগে থেকেই পড়ালেখার প্রতি তার অনীহা, তার উপর এই বিষয়টি তাকে আরো অলস করে দিয়েছে।
“আপু স্টেক রেডি।“ শিখা দরজার কাছে এসে বলে। শিখা তার জন্য রাখা পিএ। শিখার কাজই হচ্ছে মাইশার সাথে থাকা সারাদিন, সে যা যা বলে শোনা। সে মহাখালীর কোন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স করছে। মাইশা কখনো জানার চেষ্টা করে নি কোন ইউনিতে শিখা পড়ে। তবে মেয়েটা যে নিজের টাকায় পড়ালেখা করছে তাতে সন্দেহ নেই।
শিখা তার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু মাইশার আম্মু মাইশাকে আপু বলে ডাকতে নিয়ম করে দিয়েছে। তাই আপু করেই ডাকে শিখা মাইশাকে। মাইশা চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। এসির বাতাসে জানালা বাইরে থেকে ঘোলা হয়ে আছে। ভালো লাগে ঘোলাটে শহর দেখতে। মনে হয় কল্পনার তুলি দিয়ে আঁকা পেইন্টিং।
“আপু-“
“স্টেক খাবো না।“
“আন্টি রেঁধেছে।“ শিখা বলে। কথাটি আশা করে নি মাইশা। সে সাথে সাথে জিজ্ঞাস করে, “আম্মু রেঁধেছে মানে?”
“আন্টি বাসায় ফিরেছে আজ সন্ধ্যায়।“
“ওহ।“ মাইশার ইচ্ছে নেই তার মায়ের সাথে দেখা করার। তার মা মাসের অর্ধেক সময় কাটায় পতেঙ্গার পোর্ট অফিসে, অর্ধেক সময় কাটায় মালয়েশিয়াতে। মাইশার বাবা অনেক আগেই তার মা’কে ডিভোর্স দিয়ে নতুন সংসারে ব্যস্ত। মাইশা বাবাকে দোষারোপ করে না। তার বাবা অনেক সুখে আছে এবং সবারই অধিকার আছে সুখে থাকার।
“ওকে আসছি।“ অনিচ্ছা স্বত্বেও মাইশা বলে। শিখা স্যালোয়ারের কোন দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে চলে যায়। এই মেয়েটা ঘামছে কেন? পুরো ডুপ্লেক্স বাসাই তো সেন্ট্রাল এসি কাভার করে। ঠান্ডায় মাইশা আরো ফুল হাতা জামা পরে আছে। মাইশা হাফপ্যান্ট পরে ছিল। বাসায় সাধারণত সে আর শিখা থাকে তাই কাপড় চোপর ঠিক রাখার কোন মানে হয় না। এখন সে ফুল হাতা শার্টের সাথে হাফ প্যান্ট পরে আছে। খুবই বেখাপ্পা লাগছে নিজেকে দেখতে। বেগুনী চুলগুলো তার ফুলে ফেঁপে আছে। ইচ্ছে করে না নিজেকে ঠিক করতে। সে দোতালা থেকে নিচে নেমে আসে। ডাইনিং টেবিলে স্টেক রাখা আছে অনেকগুলো। দেখেই বোঝা যায় বেঙ্গল মিটস থেকে কেনা মেরিনেটেড স্টেক, যাকে শুধু ভাজা হয়েছে।
নীল রঙয়ের টি শার্ট গায়ে ত্রিশ-পয়ত্রিশ বয়সের এক ছেলে স্টেক খাচ্ছে খুব তৃপ্তি সহকারে। হঠাৎ করে ছেলেটির সামনে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় লজ্জ্বা পেয়ে যায় মাইশা। ছেলেটি স্টেক খাওয়া বাদ দিয়ে মাইশার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ মাইশার চেহারার দিকে না, তার বুকের দিকে। মাইশা খেয়াল করে তার শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা। সে চটফট বোতাম দুটো লাগিয়ে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দেয়। ছেলেটি এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে নির্লজ্জ্বের চোখে।
মাইশার মা ফোনে কথা বলছে আর বাটার ফিশ ভাজছে। মাইশাকে দেখে সে প্লেট এগিয়ে দেয়।
“কখন আসছো?”
“সন্ধ্যায়। কি খাবি?”
“কিছু খাবো না।“ মাইশা বলে। তার মা ফ্রিজ থেকে জুস বের করে এগিয়ে দেয় মাইশার দিকে।
“জুস?”
“জুস খাবো না। ভুড়ি বেড়ে যাচ্ছে। সুগার লেভেল হাই, ডায়েবেটিস হয়ে গেলো কি-না সন্দেহ।“ মাইশা বলে। মাইশা’র মা ফোন রেখে বিরক্তি চোখে বলে, “এই বুড়ি তোর বয়স কত রে?”
“সতেরো।“
“নো ফাকিং ওয়ে। মিথ্যে বলছোস। দাঁড়া-“ বলে উনি গননা করতে থাকে, “দুই হাজার দুই এ কন্সিভ করলে তিনে তোর জন্ম হলে… আম্ম, সতের, আঠারো, উনিশ! উনিশ বছর তোর।”
“আমি সতেরো। এগুলো মিথ্যে কথা।“ মুখ ভেঙচিয়ে বলে মাইশা। হেসে দিয়ে মাইশার মা বলে, “বয়স আমরাও লুকাতাম রে। এনিওয়ে, কখনো শুনেছিস উনিশ বছরে কারোর ডায়েবেটিস হয়?”
“অফ কোর্স হয়ে। টাইপ ওয়ান ডায়েবেটিস বলে সেটাকে।“
“ওমা তাই নাকি। জানতাম না।“ বলে মাছ ভাজতে ব্যস্ত হয়ে যায় মাইশার মা। মাথার চুলগুলো বেধে উনি বলেন, ”বাই দ্য ওয়ে, তোর ইশিকা আপুকে দেখতে আসবে। পুরো ফ্যামিলিকে দাওয়াত দিয়েছে। যাবি না??”
“হ্যা, মেসেঞ্জারে গ্রুপে দেখলাম। শাড়ি পরে যেতে বলতেছে। আমি শাড়ি পরতে পারি না।“
“ইউটিউব দেখে পরে নিস। আমি যদি সামনে সপ্তাহ নাও থাকি তুই একা চলে যাইস।“
“ওকে।“ মাইশা বাটার ফিশ মুখে দিয়ে জিজ্ঞাস করে, “লোকটা কে?”
“শিখার হাজব্যান্ড।“
“ওমা শিখা আবার বিয়ে করলো কবে?”
“কেন তুই জানোস না?” মাইশার মা জিজ্ঞাস করে অবাক হয়ে। মাইশা অবশ্য অবাক হয় না। এমন না যে শিখার খোজ নেয় সে। তবে এখন ঠিকই জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছে করছে। সে চুপচাপ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে লোকটির উল্টোদিকে বসেই প্লেটে স্টেক নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
“আপনি নিশ্চয়ই মাইশা আপু।“ বিনয়ী কন্ঠে লোকটি বলে, “আমি শুভ্র।“
“হ্যালো।“
“শিখা আমাকে আপনার কথা অনেক বলেছে।“
“তাই নাকি?” মুখ ভরা স্টেক নিয়ে মাইশা বলে, “কই শিখা যে বিয়ে করলো সেটা তো আমিই জানি না।“
“পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে আরকি।“ সে চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বেসিনে হাত ধুয়ে বলে, “আজ যাই।“
“স্টেক খেতে এসেছেন শুধু?”
“আপনাকে দেখতে এসেছি।“ শুভ্র বলে।
“আমাকে?”
উত্তর দেয় না শুভ্র। চোখ টিপে সে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। অদ্ভুত লাগতে থাকে মাইশার ব্যাপারটি। লোকটি যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিল, কোন সাধারণ মানুষ সেভাবে তাকায় না। একটু চিন্তা করতেই বুঝতে পারে লোকটি মিথ্যে বলছিল না। লোকটি আসলেই তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তার দেহ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল। ব্যাপারটি মাথায় ঢুকতেই মাইশার দেহ শিরশির করে ওঠে লজ্জ্বায়। বমি বমি লাগতে থাকে কেন যেন। বলবে কি সে এ ব্যাপারে শিখাকে? কতদিন হয়েছে শিখার সাথে শুভ্রর বিয়ে হয়েছে? এত তাড়াতাড়িই কি সে নতুন সংসারে আগুন লাগাতে চায়?
উত্তর খুজে পায় না মাইশা। বিরক্তি লাগে খুব। সে নিজের রুমে ফেরত চলে যায়।
**
সকাল সকাল উঠে যায় মাইশা। আজকে ক্লাস না করলেই নেই। সে কলেজ ড্রেস পরে যেই না বাসা থেকে বের হতে নেয়, খেয়াল করে রাস্তার ওপাশ থেকে শুভ্র তাকে পর্যবেক্ষন করছে সরু চোখে। তার সাথে আজ অন্য আরেকটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা কলেজ ড্রেসের স্কার্ফ দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে গাড়িতে ওঠে। হয়তো অন্য কোন কাজে শিখার সাথে দেখা করতে এসেছে, নিজেকে শান্তনা দেয় মাইশা। ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না সে। ফিজিক্স ক্লাসে কি পড়াচ্ছে রিফাত স্যার সেটা উনিই জানেন। কিছু ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র আছে উনার লেকচারের সাথে হু হু করছে। খাতার পেছনে স্কেচ করতে করতে মাইশা পুরোটা সময় পার করে।
কলেজ থেকে বের হওয়ার সময়ও সে খেয়াল করে শুভ্রকে রাস্তার ওপারে।
এর পর থেকে শুরু হয় শুভ্রকে এখানে সেখানে দেখা। ফ্রেন্ডদের সাথে মার্কেটে, রেস্টোরেন্টে, এখানে সেখানে। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তা পার হয় মাইশা। সরাসরি শুভ্রকে জিজ্ঞাস করে,
“আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন?”
“আপনাকে দেখার জন্য? আপনার রুটিন জানার জন্য।“ ছেলেটি হাসিমুখেই সত্য কথাটি বলে।
“আমাকে দেখার কি আছে? আমার রুটিন কেন আপনাকে জানতে হবে?”
“আছে। একদিন আপনার বাসায় এসে আপনাকে বিস্তারিত বলবো।“ শুভ্র বলে। মাইশা বিরক্তি কন্ঠে জিজ্ঞাস করে, “আপনি প্লিজ আমাকে ফলো করা বন্ধ করুন। নাহলে আমি শিখাকে বলে দিবো আপনার ব্যাপারে।“
“সে জানে মিস মাইশা।“
“শিখা জানে যে আপনি আমাকে স্টক করছেন?”
“ইয়েপ।“ সেই হাসিমুখেই কথাটি বলে শুভ্র। মাইশা চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সে জানে না কি অনুভব করবে সে। অপেক্ষায় থাকবে শিখার সাথে কথা কিভাবে বলবে এ ব্যাপারে। বিশ্বাস হয় না যে শিখার হাজব্যান্ড এমন কিছু একটা করবে শিখাকে জানিয়েই।
*
সন্ধ্যায় বেল চাপ দেয় মাইশা। শিখা তার রুমে এসে হাজির হয়। হাতে তার আইফোন। সে আইফোন চালায়? আগে খেয়াল করে নি মাইশা।
“আপু কিছু লাগবে? চা বানিয়ে দিবো?”
“হ্যা কিন্তু এখানে আসো আগে। কথা আছে।“ মাইশা বলে।
“এক সেকেন্ড তাহলে।“ ফেইসএপ এ কল কেটে সে রুমের ভেতরে ঢুকে।
“তোমার হাজব্যান্ড আমাকে ফলো করছে কেন? তুমি নাকি জানো এই ব্যাপারে?” মাইশা সরাসরি কথা না বাড়িয়ে জিজ্ঞাস করে শিখাকে। শিখা চুপচাপ মাইশার দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,
“আমি জানি।“
“এটা কেমন কথা?”
“ইয়ে মানে-“ শিখা বলে, “আপু আমি এক্সপ্লেইন করতে পারবো না। ওকে ডাকি? সে নিজেই বলুক?”
“মানে কি?!”
“আই এম স্যরি আপু আমি বলতে পারবো না। ওকে বললে আজ রাতে আপনাকে এক্সপ্লেইন করে যাবে।“
মাইশা কি বলবে বুঝতে পারে না। সে জিজ্ঞাস করে, “আম্মু কই?”
“মালয়েশিয়া চলে গিয়েছে গত সপ্তাহে।“
“ওহ।“ এক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে, “আজ রাতেই আমাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে। নাহলে আমি পুলিশে কমপ্লেইন দিবো কিন্তু।“
“আপু আমার মনে হয় না আপনি প্রস্তুত এখনও এটা শোনার জন্য।“
“মানে কি?” আবার জিজ্ঞাস করে মাইশা। এবারও উত্তর দেয় না শিখা, বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, “ওকে আজকেই সে আপনাকে বলবে। কিন্তু আপু ওয়ার্নিং দিয়ে রাখলাম, হজম করতে কষ্ট হবে।“
“ট্রাই মি।“ বলেই কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরে মাইশা। শিখা জিজ্ঞাস করে, “আপু কি চা খাবেন না?”
“ওকে বানায় নিয়ে আসো।“ উঠে বসে মাইশা।
**
রাত এগারোটার দিকে শুভ্র আসে। সরাসরি তার রুমেই নিয়ে আসে শুভ্রকে শিখা। তারপর দরজা চেপে বাইরে চলে যায়। বেশ অবাক হয় শিখার এই ব্যবহারে মাইশা। শুভ্র তার বিছানার উল্টো দিকে কাঠের চেয়ারে বসে আছে। তার আত্মবিশ্বাস দেখার মত!
“কেমন আছেন মিস মাইশা?”
“ভদ্রতা বাদ দিবেন?”
“ওকে দিলাম।“
“আপনি আমাকে স্টক করছেন কেন?” মাইশা জিজ্ঞাস করে।
“বললাম তো, আপনাকে দেখার জন্য?”
“আমার- কি দেখার জন্য?” মাইশা জিজ্ঞাস করে। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে শুভ্র, তারপর ঠান্ডা কন্ঠে বলে, “আপু আপনার বয়স কত?”
“সতেরো।“ মিথ্যে বলে মাইশা।
“আরেকটি প্রশ্ন। আপনি কি স্ট্রেইট?”
“হ্যা আমি স্ট্রেইট।“
“ওকে নাইস।“ একটু থেমে বলে, “খারাপ ভাবে নিবেন না প্লিজ। যদিও যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো সে বিষয়টি আসলেই অনেক খারাপ লাগবে শুনতে।“
“জ্বি বলুন প্লিজ।“ এখন বিরক্তিবোধ চলে গিয়ে উৎসাহবোধ ভর করেছে মাইশার মাথায়। কি বলতে চাচ্ছে এই লোকটি?
“আপু আমি আপনাকে স্টক করেছি- আপনার দেহ দেখার জন্য।“
“এক্সকিউজ মি?”
“আপনার দেহ, আপনার সৌন্দর্য, আপনার রুটিন, আপনি কখন কখন ফ্রি থাকেন এগুলো জানার জন্য।“ শুভ্র বলে শান্ত কন্ঠে। মাথা হ্যাং হয়ে যায় শুভ্র’র কথাগুলো শুনে।
“মে আই নো, হোয়াই?”
“যেন আপনাকে একটি জব অফার দিতে পারি।“ হাসিমুখে শুভ্র বলে। কি বলতে চাচ্ছে লোকটি? জব? তার কি বয়স হয়েছে জব করার? তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ন, মাইশার কেন লাগবে জব করার? তার মা কোটি টাকার প্রপার্টি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। আর যত ইনকাম করেছে তার মা তার অর্ধেকও তো মাইশা একা খরচ করতে পারবে না। তাহলে কিভাবে এই লোকটি চিন্তা করলো তার চাকরী প্রয়োজন?
“আমি রিচ! আমার কেন জব লাগবে?”
“আপনি রিচ একজন উপুযুক্ত মেয়ে যে কি-না ঢাকা শহরে একা বসবাস করেন গার্ডিয়ান ছাড়া। আপনি এমন একজন মেয়ে যার ফ্রিডোম আছে যা ইচ্ছে তাই করার। আপনি খোলামেলা কাপড় পরতে আপত্তি করেন না এবং আপনার ইন্সটাগ্রাম হচ্ছে তারই প্রমান। আপনি হচ্ছেন গোল্ডেন টার্গেট।“
“মানে? কিসের? কাদের?”
“আপনিই বলুন?”
“আমি জানি না।“ মাইশা বলে।
“অফ কোর্স আপনি জানেন। আপনি যথেষ্ট বড় মেয়ে। বলুন একটু চিন্তা করে?”
বড় একটি শ্বাস নিয়ে মাইশা লোকটির চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে। সে কি আসলেই জানে কাদের কথা বলছে শুভ্র। সে বলে, “আমি জানি না। কাদের টার্গেট?”
“আমাকে বলতে হবে? আপনি কি একটুও অনুমান করতে পারেন না?” শুভ্র জিজ্ঞাস করে। কোন উত্তর মাইশার মাথায় আসে না। সে অনেকক্ষণ চিন্তা করে বলে, “আমি জানি না।“
“পুরুষদের।“ শান্ত কন্ঠে শুভ্র বলে।
“এক্সকিউজ মি?”
শুভ্র সোজা হয়ে বসে, “এখন কাজের কথায় আসি। আপনাকে আমি যে জবটি অফার করবো এখন, সেটি হচ্ছে খুবই সিম্পল। আমি আপনাকে কিছু পুরুষ এনে দিবো প্রতি রাতে। আপনি তাদের সাথে রাত কাঁটাবেন। সকালের আগেই উনারা চলে যাবেন আমাকে পেমেন্ট করে। তার কিছু অংশ আপনি রাখবেন, আর কিছু অংশ রাখবো আমি আর শিখা।“
কি বললো লোকটি। মাথার ভেতরে সব যেন গোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাইশার। সে বলে,
“র…র্…রাত কাটাবো মানে?”
“আপনার জন্য এটি জব। কিন্তু উনাদের জন্য এটি এক্সপেরিয়েন্স। উনারা যা বলবেন তাই করবেন রাতে। যেখানে আপনাকে স্পর্শ করতে চাবে দিবেন। যেখানে চুমু দিতে চায় সেখানেই তা করতে দিবেন। যতক্ষন আপনার সাথে সেক্স করতে চায় ততক্ষন সেক্স করতে দিবেন। আমাকে নিশ্চয়ই আর বিস্তারিতভাবে বলতে হবে না কোন জবের কথা বলছি?” হাসিমুখে শুভ্র বলে।
হা করে তাকিয়ে থাকে মাইশা। লজ্জ্বায় গালদুটো তার লাল হয়ে যায়। সে নিজের অজান্তেই কম্বল কাছে টেনে লুকিয়ে যায় কম্বলের আড়ালে। কি শুনছে সে এগুলো? এই লোক অভ্যস্ত এগুলো বলতে তাই না? অবশ্যই। না হলে নির্লজ্জ্বের মত এই কথাগুলো বলতে পারে না।
“আপনি আ… আআ… আপনি আমাকে কি অফার দিচ্ছেন এটা?”
“প্রস্টিটিউশন!”
“কেন?!”
“কেন না?” শুভ্র বলে। “আপনি সুন্দরী, আপনি কমবয়সী কিন্তু তার তুলনায় আপনার দেহ যথেষ্ট উপযুক্ত, আপনার সব সামর্থ্য আছে একজন পুরুষকে সন্তুষ্ট করার। একজন কেন, একাধিক পুরুষকে এক সন্ধ্যায়।“
“ছি! জাষ্ট বিকজ আমি পারি তার মানে এই না আমি প্রস্টিটিউট হব! আমার চরিত্র এত খারাপ কিভাবে তা আপনি কল্পনা করলেন?” প্রতিবাদ না করলেই নেই। নিজের মান সম্মানকে রক্ষা করতে হবে প্রতিবাদ করে। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে মাইশার। সে সোজা হয়ে বসে। এখন আর লজ্জ্বা বা ভয় লাগছে না। কৌতুহল তাকে সব ইন্দ্রিয় দখল করে রেখেছে।
“চরিত্র, হুম, চরিত্র একটি ফানি ওয়ার্ড।“
“মানে কি?!”
“আপনি কি মনে করছেন অন্য পুরুষের সাথে রাত কাঁটালে আপনার চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে?”
“অবশ্যই?!”
“সমস্যাটা এখানে। চিন্তাভাবনায়। আপনিই বলুন, সেক্স কি মানুষের মানবিক চাহিদাগুলোর একটি না?”
উত্তর দেয় না মাইশা।
“আপনি মনে করছেন সেক্স একটি খারাপ চাহিদা কারন আপনাকে আমাকে সবাইকে এই শিক্ষাটিই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি খারাপ হত ঠিকই কেন রাতের আঁধারে আমরা অপরের স্পর্শ কামনা করি?”
“যেন… যেন…” উত্তর খুজে পায় না মাইশা।
“আমি বলি, যেন বিষয়টি পরিস্কার হয়। সেক্স খারাপ চাহিদা না। একটি ছেলে একটি মেয়ে যখন একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, একজন আরেকজনকে উপভোগ করে, এর চেয়ে পবিত্র মুহুর্ত আর কিছু নেই। ছেলেটি আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে তার ভেতরে অবস্থিত শুক্রগুলোকে মেয়েটির গর্ভে স্থাপন করতে এবং মেয়েটি আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে যেন সে শুক্রগুলোকে তার গর্ভে স্থাপনা দিতে পারে ঠিকমত, কেন? যেন একটি নতুন প্রানকে তারা দুনিয়াতে আনতে পারে।“
এভাবে কি মানুষ কথা বলে? শুভ্র ভুল বলছে না কিন্তু তার কথার সাথে যুক্তি মেলাতে পারছে না মাইশা। সে প্রতিবাদ করে, “ইয়েস, এটা তো ঠিক আছে। এবং এজন্যই তো বিয়ে আছে! আমি তো রিপ্রোডাকশন রিজেক্ট করছি না। আমি বিয়ে করবো নেচে গেঁয়ে, বিশাল বড় আয়োজন করে, সন্তান নিবো স্বামীকে ভালোবেসে, কত আশা বুকে আপনি জানেন?”
“ইয়েপ, সব মেয়ের বুকেই এই আশা থাকে।“
“তাহলে কেন পরপুরুষের সাথে?!” মাইশা খেয়াল করে এসির বাতাসে তার কন্ঠ ভেঙ্গে গিয়েছে। যদিও গরম লাগছে প্রচুর।
“মাইশা আপু-“
“মাইশা আপু ডাকবেন না প্লিজ। আপনি আমার চেয়ে অনেক বড়।“
“মাইশা, তুমি করবে কারন তোমার সুযোগ আছে। ব্যাস, এই।“ সরাসরি এখন তুমি তে লোকটি।
“সুযোগ থাকলেই দেহ পুরুষদেরকে বিলিয়ে দিতে হবে?”
“হ্যা!“
“আপনি কি পারবেন আপনার ওয়াইফের দেহ অন্য পুরুষকে বিলিয়ে দিত?”
“আমার ওয়াইফের সেটা দরকার নেই। আমার ওয়াইফকে উপভোগ করার জন্য আমি আছি, আমাকে উপভোগ করার জন্য আমার ওয়াইফ আছে। যদি রিপ্রোডাকশনের দরকার হয়, একজনের জন্য আমরা অপরজন আছি।“
“তাহলে?”
“শিখা’র সাথে তুমি তোমার নিজের তুলনা দিলে তো হবে না বোকা মেয়ে।“
তাকে বোকা ডাকলো কেন শুভ্র?!
“শুনো।“
“জ্বি বলেন।“
“আমি ইতিহাসের ছাত্র। তোমাকে একটা কাহিনী বলি। কাহিনীটি হচ্ছে ডিডে’র।“
“ডিডে’র?”
“হ্যা। তখন ১৯৪৪ সাল। নরম্যান্ডি, ফ্রেঞ্চ কোষ্টলাইন দখল করে রেখেছে জার্মানির নাৎজি পার্টি। নরম্যান্ডিকে জার্মানদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবেই মিত্র বাহিনীদের। কিন্তু তাদের একটাই পথ, বিচ থেকে সরাসরি কোষ্টলাইনে আঘাত করা। কিন্তু পুরো ৫০ মাইল কোষ্টলাইন দখল করে রেখেছে জার্মানরা। মিত্র বাহিনী নৌকা থেকে নামলেই তাদেরকে নিহত হতে হবে জার্মানদের গুলি খেয়ে।“
চুপ থাকে মাইশা।
“এবং, এটা মিত্র বাহিনী জানতো। যখন শহরে শহরে মাইকে করে যুদ্ধের আহ্বান করা হয়, এবং যখন সাধারণ জনগন সে আহবানে সাড়া দেয়, তাদেরকে শুরুতেই বলা হত, তোমরা ফ্রন্টলাইনে থাকবে, তোমরা ব্যাকলাইনে থাকবে। তোমরা ফ্রন্টলাইনে থেকে গুলি খাবে যেন ব্যাকলাইন তোমাদের দেহকে ব্যবহার করে নরম্যান্ডি পর্যন্ত পৌছাতে পারে। ফ্রন্টলাইনের কোন যুক্তি ছিল না যুদ্ধে যাওয়া। কেন শুধু শুধু তারা প্রাণ হারাবে?”
“তারপর?”
“কিন্তু ঠিকই রাজী হয় তারা। একজন না, দুজন না, প্রায় ১৫০০ ট্রুপ। কেন বলোতো?”
“কেন?”
“কারন তারা যদি না ফ্রন্টলাইন না হয়, তাহলে কারা হবে বলো?”
উত্তর নেই মাইশার কাছে।
“তুমি একজন স্বাস্থ্যবান মেয়ে যার সামর্থ আছে নিজের দেহকে ব্যবহার করে অন্য পুরুষকে সাময়িকভাবে ভালোবাসা দেওয়ার। পরিচিত-অপরিচিত শত পুরুষ তোমাদের দেহের ভেতর অবস্থান করবে তোমার জরায়ুকে নিজের শুক্র দিয়ে ভরাট করে প্রেম স্থাপন করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটাই মূল নৃত্য। তোমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করবে তারা এবং এতে তারা সাময়িক আনন্দ পাবে।“
“তাদের সাময়িক আনন্দের জন্য আমি নিজের মান সম্মান বিলিয়ে দিবো? দেহ দিয়ে দিবো?”
“হ্যা! কারন এখানে তারা তোমাকে গর্ভবতী করছে না, কারন তোমাদের মধ্যে থাকবে প্লাস্টিকের ব্যারিয়ার, অথবা কন্ট্রাসেপ্টিভের প্রোটেকশন। এটা পরিণতিহীন ভালোবাসা। এটাই প্ল্যাস্টিক লাভ। এবং এটা একমাত্র তোমাদের মত মেয়েরা, যাদের সুযোগ আছে, তারাই দিতে পারো। এখন তুমি আমাকে বল, তোমার সুযোগ থাকা অবস্থায় তুমি যদি না কর, তাহলে কে করবে বল?” বলে এক গ্লাস পানি তুলে খায় শুভ্র। মাইশা খেয়াল করে তার সামনে মগ আছে। সে নিজেও পানি ঢেলে খায়।
“কিন্তু- কিন্তু-“
“হ্যা বল?” শুভ্র মনে হয় সেটারও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে যে প্রশ্ন মাইশা করবে। মাইশা মাথার চুলগুলো শক্ত করে ধরে বলে,
“তাহলে আমার স্বপ্নগুলো? আমার যে ইচ্ছে আছে শুধুমাত্র একজন পুরুষকে ভালোবাসার? শুধুমাত্র একটি পুরুষের সাথে সংসার বাঁধার? জাঁকজমক করে সাতদিনব্যাপী বিয়ে করার প্রতি রাতে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে এলাকা মাথায় তোলার? হাজব্যান্ডের সাথে বিয়ের মন্ডপে নাঁচার? বাসর রাতে তাকে জড়িয়ে ধরার এবং নয় মাস পর ছোট্র মনির ছোট ছোট হাতদুটো ধরার?” মাইশা বলে, “সেগুলো? সেগুলোর গ্যারান্টি কে দিবে? সেগুলো কি আমি আদৌ পাবো এই জীবনে পা দিলে?”
“মাইশা মাইশা, আমাকে হাসাইও না।“
“আপনি যাই শুনেন তাই তো আপনার কাছে হাস্যকর!” কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মাইশা বলে।
“তুমি ছোট মেয়ে। বাস্তবতা এখনো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো না।“
“বুঝিয়ে দেন?”
“তুমি কি মনে করছো তোমার স্বপ্নগুলো বাস্তব করার সুযোগ থাকবে প্রস্টিটিউট হলে?”
বাক্যটি নিতে পারে না মাইশা। সে একজন পতিতা হবে?!
“ডি ডে’র ফ্রন্টলাইনে যারা ছিল, তারা কি আশা করেছিল বাসায় ফিরে গিয়ে সংসার করবে?”
উত্তর নেই মাইশার।
“না রে বোকা মেয়ে। এইসব স্বপ্ন ভুলে যাও। মনে রাখবে প্রস্টিটিউশন একটা জব প্রথমে। সেখানে কে তোমাকে কিভাবে ট্রিট করে তা তুমি অনুধাবন করতে পারবে না। কেউ তোমাকে আনন্দ দিয়ে তৃপ্তি দিবে তো কেউ কাঁদিয়ে ছাড়বে। প্রথম সপ্তাহের শেষেই তোমার হাইমেন ছিড়ে গায়েব হয়ে যাবে। এক বছরের শেষে তুমি ভুলেই যাবে যে সেক্স উপভোগের একটি উৎস। পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত দু বার প্রেগনেন্ট হবাই। ভুলে জমা হতে থাকবে পরপুরুষের সিমেন তোমার ভেতরে। সাথে আসবে এসটিডি। ছয় মাস পর পর ক্ল্যামাইডিয়ার ট্রিটমেন্ট করতে হবে। বছরে একবার গনোরিয়া ধরা পরবে। হেপাটাইটিস বি অথবা সি তে লিভার ফুলে সিরহোসিস হয়ে যাবে। দশ বছর পর এইডস কনফার্ম এবং বয়স যখন ৩৫-৪০ হবে এইচআইভি পজিটিভ কোনদিক দিয়ে এসে পরবে টের পাবা না। বিয়ে যদি করেও ফেলো হাজব্যান্ডের কাছে অতীত লুকোতে পারবে না। একটা না, দুটা না, একাধিক ডিভোর্স হবে শত চেষ্টার পরেও। উল্টোপাল্টা সেক্সুয়াল এক্টের কারনে দেখা যাবে ওভারি নষ্ট হয়ে গিয়েছে কোন একদিক দিয়ে। অথবা ইউটেরাস প্রল্যাপ্স হয়ে যাচ্ছে ৪০ না পার হতেই। অন্য মেয়েরা এগুলো মেনে নেয় কারন তাদের টাকার প্রয়োজন। কিন্তু তুমি- তুমি এগুলো টাকার জন্য মেনে নিবে না। তুমি এগুলো চোখ বন্ধ করে মেনে নিবে, কারন-“
“কারন?”
“কারন তুমি তোমার দেহকে স্যাক্রিফাইস করছো তাদের খানিকের আনন্দের জন্য। যেমনটি করেছিল ডি’ডে এর মিত্রবাহিনী। কারন, কারন- তুমি না করলে কে করবে বলো?”
হা করে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে মাইশা।
“এখন তুমি বল, তুমি কি রাজী?”
“আমার কি আর কোন অপশন আছে? না বলার?”
“অফ কোর্স না বলার অপশন আছে। তুমি তোমার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারো। জাঁকজমক সাতদিনব্যাপী কেনাকাটা, বিয়ে, স্বামী, সন্তান, রিটায়ারমেন্ট হোম সবই তুমি পেতে পারো, অথবা, বয়স ৪০ এর শেষে নিজের জরায়ু নষ্ট করে এসটিডি নিয়ে একা একা মোটেল রুমে সিগারেট টানতে পারো। দুটো পথ তোমার কাছে খোলা আছে। প্রথম পথটি তুমি মেনে নিতে পারো নিজের জন্য, আর দ্বিতীয়টি তুমি মেনে নিতে পারো হাজারো অপরিচিত পুরুষের কয়েক সেকেন্ডের অরগাজমের জন্য। কোনটি ভালো বা মন্দ তা আমি বেছে দিতে পারবো না। তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোনটি তোমার কাছে মহৎ। এবং সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তোমাকে বাকি জীবন কাঁটাতে হবে মেয়ে।“
চুপ করে থাকে মাইশা। বুক ধরফর করছে তার। উত্তরটি কি এখনই দিতে হবে?
“আমার দেহ-”
“হ্যা তোমার দেহ মাইশা। বিলিয়ে দাও অপরিচিত পুরুষদের কাছে। তারা অনেক অসুখী। তাদেরকে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও দুনিয়া থেকে মুক্তি দাও তোমার ভেতর অরগাজম করতে দিয়ে।“
“ওহ গড।“
“এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে না মাইশা। সময় আছে অনেক।“
“আপনি প্লিজ এখন বাসা থেকে বের হন।“
“হচ্ছি। আমাকে জানানোর জন্য ফোন দেওয়া লাগবে না। তোমার জন্য একটি গিফট এনেছি।“ বলে সে উঠে দাঁড়ায়। তারপর রুম থেকে কয়েক মিনিটের জন্য বের হয়। মাইশা পুরোটা সময় থ হয়ে নিজ স্থানে বসে থাকে। ভেতর থেকে ভয়ে আর উত্তেজনায় সবকিছু গুলিয়ে আসছে। সে কম্বল দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে।
শুভ্র রুমে ফেরত আসে একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে। সে ব্যাগ খুলে মাইশার জন্য একটি সুন্দর শাড়ি বের করে। আর কিছু কিছু আর্টিফিসিয়াল গোলাপ ফুল বের করে যেগুলো চুলের ক্লিপ। ব্লাউজপিস সহ শাড়িটি সে এগিয়ে দেয় মাইশার দিকে।
“আমি জানি তুমি ওয়েষ্টার্ন পরতে পছন্দ কর। কিন্তু এভাবে হবে না। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে সুন্দর করে সেজেগুজে এই শাড়িটি পরে আমার সাথে দেখা করো ট্রি হাউজ রেস্টোরেন্টে। ফ্রি ট্রিট দিবো।”
মাইশা শাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রে শাড়িটির মধ্যে গ্যালাক্সির স্পাইরাল প্যাটার্ন, খুব সুন্দর।
“আর আমি যদি না রাজি হই?”
“তাহলে শাড়িটি পরতে পারবে না। শিখা কে বলো সে আমাকে ফেরত দিয়ে দিবে শাড়িটি। এই শাড়িটি শুধু শাড়িই না, এটা তোমার সম্মতি।”
সে মাইশার সাইডে রেখে যায় শাড়িটি। তারপর কোন কথা না বলে চলে যায়। ছুয়েও দেখে না মাইশা শাড়িটি। বাকি কয়েক ঘন্টা সে একই স্থানে বসে কাটায়। বসে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পরে সে।
*
তার পরের দিন সকালে সে খুব সুন্দর ব্রেকফাষ্টের আয়োজন পায় সে। শিখা এক্সট্রা বাটার দিয়ে ডিম আর মাছ ভেজেছে। সাথে এভাকাডো আর এল্মন্ড তফু। মাইশার সাথে সে এমন ব্যবহার করে যে গত রাতে তার স্বামী এসে মাইশাকে কোন কুপ্রস্তাব দেয় নি। এমনকি সে শুভ্র’র কথা তুলেও ধরে না একটি বারও।
মাইশা সারাটা দিন পড়ালেখা করে কাটায়। আজকে কেন যেন পড়া ঢুকছে মাথায়। সে বসে বসে ফিজিক্সের পর পর চারটি চাপ্টার এক বসায় পড়ে শেষ করে। তারপর খেয়াল করে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। পানি খেতে উঠে দাঁড়ায় সে, এবং চোখ পরে বিছানায়। বিছানায় এখনোও সেই শাড়িটি। পুরো রুম দিনে শিখা কয়েকবার পরিস্কার করেছে কিন্তু শাড়িটি সে নিয়ে যায় নি। মাইশা এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় শাড়িটির দিকে। প্যাকেট থেকে শাড়িটি খুলে সে একবার দেখে নেয়। আসলেই সুন্দর এই শাড়িটি। কিন্তু এই শাড়িটি দেহে জড়িয়ে নেওয়া খুব বড় একটি সিদ্ধান্ত। শাড়িটি দেহে জড়িয়ে নেওয়া মানে ভবিষ্যৎ নষ্ট করা। নিজের দেহকে নষ্ট করা। শাড়িটি পরা মানে হাজার হাজার পুরুষের সাথে সহবাস রাতের পর রাত। শাড়িটি জড়িয়ে নেওয়া মানে জীবন থেকে স্বামী সন্তানকে বিদেয় দেওয়া। শাড়িটি পরা মানে- প্রমান করে দেওয়া যে সে আসলেই নষ্ট চরিত্রের একটি মেয়ে।
সে একবার শুভ্র যা বলেছে সব কিছু মনে করার চেষ্টা করে। যতই চিন্তা করে, ততই কেন যেন মনে হতে থাকে, লোকটা পাগল। হাস্যকর তার কথাবার্তা। কোন যুক্তি নেই তার কথায়। একটা মেয়ে কেন হুট করে নিজের ভবিষ্যতকে এভাবে নষ্ট করে দিবে দেহকে অন্য পরপুরুষের কাছে রাতারাতি বিলিয়ে দিতে রাজি হয়ে-
“কিরে মাইশা, এত সুন্দর স্পাইরাল গ্যালাক্সি শাড়ি কই পেলি?” ইশিকা আপুর আম্মু মাইশাকে জিজ্ঞাস করে।
“এক ভাইয়া গিফট করেছে!”
“ভাইয়া নাকি অন্যকিছু?”
“নাহ খালামনি। অন্য কিছু না! উনি ম্যারিড। শ্রেফ ভাই টাইপের!” মাইশা হেসে বলে।
“খেয়েছো?”
“উনার জন্য ওয়েট করছি। উনাকে আসতে বলেছি দাওয়াতে।“
“ওকে।!”
মাইশা আয়নার সামনে দাঁড়ায়। কি সুন্দর লাগছে আজ তাকে! শাড়িটির সাইজ তার দেহের সাথে মিলেছে। সে সময় নিয়ে সেজেছে সে। মাথায় গোলাপটি বেশ সুন্দর ফুটেছে। বেশ লম্বা পনিটেইল করেছে সে। শাড়িটির স্লিভলেস ব্লাউজটি বেশ ছোট এবং বুকের দিক দিয়ে খোলামেলা। ক্লিভেজ দেখা যায় তাই মাইশা আঁচল দিয়ে নিজের বুক ঢেকে রাখে। মেহমান উপেক্ষা করে বারান্দায় এসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার পেছন থেকে শুভ্র এসে তার কানে ফিসফিস করে বলে,
“বাসা খুজে পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে। এত সুন্দর ডেকোরেশন!”
“যাক পেয়েছেন তো।” মাইশা মোলায়েম কন্ঠে বলে, “কেমন লাগছে আমাকে?”
“অপরূপা!”
“থ্যাংক ইউ।”
“খাওয়া দাওয়া করেছো?” শুভ্র জিজ্ঞাস করে।
“করি নি। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” মাইশা বলে।
“বাহ।” শুভ্র বড় বড় চোখে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, “আসলেই অপরূপা তুমি। শাড়িটি যেহেতু পরেছো, আমাকে আশ্বাস দেও যে তুমি তোমার পরিচয় জানো আজ থেকে।“
মাইশা শুভ্র’র চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে। তারপর চুলগুলো পেছনে নিয়ে আলতো হেসে বলে, “আমি জানি।“
“বল আমাকে?”
“লজ্জ্বা করছে।“
“লজ্জ্বা নেই বোকা মেয়ে।“ শুভ্র হাত এগিয়ে দেয়, “গর্ব করে বল।“
মাইশা নিয়ে বুকের আঁচল সরিয়ে মিষ্টি কন্ঠে শুভ্র’র কানে কানে বলে, “আমি মাইশা মাহাবুব, একজন প্রস্টিটিউট আজ থেকে। কারন শুভ্র নামের পঁচা নাছোড়বান্দা ছেলেটি আমাকে কনভিন্স করেছে।“
“সো প্রাউড অব ইউ!” হেসে দেয় শুভ্র।
(to be continued)