একদিন বাজারে হঠাৎ দেখা। উঠতি যৌবনে পড়া কিশোর যেন হাতে চাঁদ পেল। স্বপ্নলোক আর ফ্যান্টাসির জগতের সেই ৪৫ ছুইছুই মহিলা সব্জি কিনছেন। কতদিন পর চাক্ষুষ করলাম। না ওকে ওর শরীরটা কে পাবার আশায় শুধু ভাল লাগে না। কেমন যেন একটা মায়া আছে স্নেহ হয়। গায়ে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে। হাসিটা দেখলে ত্রিভুবন এক হয়ে যায়। ভাবলাম গিয়ে কথা বলি ওর সাথে।
বয়স ৪৫, এখনো যৌবনটা কেমন ধরে রেখেছে। মর্ডান এরা বলে কথা। আমতা আমতা হয়েই সাহস করে এগোলাম ওর দিকে। আমাকে চিনবে না ঠিকই তবে আমি তো চিনি। মিষ্টির মত চিনি। কচি ছেলেদের মধ্যে এই মাঝবয়সী মহিলাদের প্রতি একটা নুও রোমান্টিকতা আছে, তবে তা হাল্কা পাতলা সব সময় নয়, বেশ ঘন হয়ে রাতে সব রস নিংড়ে বের করে ছাড়ে।
ভাবছি সিগারেটটা ধরাবো না ইন্ট্রো করে নেব। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে একজন বলে উঠলো “আগুনটা দাও তো ভাই..”। ব্যস এই হল কাল। ঘুরে দেখি নেই। কোথায় গেল রাজরানী। এমন একটা রাগ হল সেই লোকটার ওপর যে আবার এলে কচু কাটা করি। নাহ হাল ছাড়বো না। এগিয়ে গেলাম মাছ বাজারের দিকে.. একি নেই। হতাশ লাগছে নিজেকে।
ধুস কিসসু ভাল লাগছে না। কত ইচ্ছে ছিল আজ কথা বলবই। ভাল লাগা, দেখা করতে চাওয়া গুলো না হয় আজ বলতাম না, কিন্তু এভাবে এমন করে কেন চলে গেলে। ঈশ্বর অসম বয়সের প্রেম বলো বা শারীরিক চাহিদা এতে কোথায় ভূল!! নাহ খালি হাতে রুমে এলাম। চান করতে বেলা গেল। সেই কখন সকাল সকাল করব শুধু টাইমিং করার জন্য বাজার গেলাম, নইলে এতদিন সন্ধ্যে ছাড়া বাজারমুখী হয় নি যে।
বিকেলে ভাবলাম খুব বোরিং লাগছে। একবার চাটা খাওয়াই যায়। বাইক নিয়ে বেরলাম। চা খাচ্ছি আর সিগারেট টানছি.. আর ভাবছি মাছ ফস্কে যাওয়ার ইতিবৃত্ত। রিক্সার পেছনের ত্রিপল টানা জানলাটা পরিচিত লাগলো। ক্রমশঃ দূরে সরে যাচ্ছে রিক্সাটা। চেনা পিঠ, চেনা চুল। নাহ আমার ভূল হয় নি। বাইকটা নিয়ে সটান ধাওয়া।
ক্রশ করার সময় আড় চোখে দেখে নিলাম। ব্যস ফিদা ম্যায় হু ফিদা, আব কউন করেগা তুমকো মুঝসে জুদা। কিন্তু যাচ্ছে কোথায়?? মাথা চুলকানো অবস্থা। কুল ডাউন.. উত্তেজনায় সংযম আনো- মন কে বলছি। ওয়াচ এন্ড সী এই রুল ফলো করতে হবে। নামলেন তিনি সামনেই এক্কেবারে সামনে। আসেপাশে তাকিয়ে ভাড়াটা দিয়েই এগিয়ে আসছে।
আমি আমার পেছনে ফিরে দেখছি কেউ আছে নাকি। নাহ আমার দিকেই তো আসছে। ঢোক গিলবো না রেখে দেব- হাওয়া ঢুকে হালকা হয়ে যাচ্ছি। ” এই শোনো? তুমি কি এখানকার? বলছি যে শ্রেয়ান দের বাড়ি চেনো? ” নাহ আন্টি আমি তো আপনার পরের গলিতে থাকি। এখানে এমনি বাইকে ঘুরতে এসেছি। আচ্ছা ওই যে কি নাম বল্লেন ওরা কি আত্মীয়?
আমি জিজ্ঞেস করলাম ওকে। হ্যা আমার বোনের বাড়ি এখানে। তুমি কোথায় থাকো বল্লে? ৩৪/৩ এ আন্টি আরে বাহ তুমি তো আমার এলাকার। বেশ বেশ। আমি ভাবছি কিভাবে শুরু করবো। আচ্ছা আন্টি আপনি কি বাড়িতে একা থাকেন? ভাবলাম জিজ্ঞেস করি। দ্বিধাতে ঘেটে ঘ। এ যেন জয় আর পরাজয়ের মধ্যবর্তী অবস্থানে আছি।
বুকে সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম উঠুন বাইকে, আশে পাশের দোকান কোথাও জিজ্ঞেস করে আপনাকে ড্রপ করে দেব। ও রাজী হল। কেমন যেন আপন আপন মনে হল, মনে হল অনেক দিনের চেনা মানুষ, গায়ের সুগন্ধ হৃদয়কে মাতাল করে দিচ্ছে৷ নার্ভাস লাগছে আবার উদ্যমতায় বিহ্বলিত হয়ে পড়েছি যেন। ওঠুন.. বল্লাম ওনাকে। হ্যা চল তাহলে, খুব ভাল হল- মধুর কন্ঠ কানে বারি খেতে লাগল।
বাইক স্টার্ট দিলাম, স্পীড ব্রেকারে ব্রেক কষতেই উনি আমার পিঠে লেপ্টে গেলেন। ইচ্ছা করে করি নি যদিও। ঝাকুনি থেকে রেহাই পেতে বলেই ফেল্লাম – কাধে হাত দিতে পারেন নতুবা পেছনের গার্ডে ধরে থাকুন। ওনার স্পর্শ পা থেকে মাথায় ঘুমন্ত বিষুবিয়াস জাগিয়ে তুললো। খানিকটা এগিয়ে একটা চায়ের দোকানে বলাতে দেখিয়ে দিল শ্রেয়ান মানে ওনার বোনের বাড়ি টা। বোন ওনার ভাড়া থাকেন। এক ছেলে স্বামী কে নিয়ে ছোট্ট সংসার। উনি মাঝে মাঝে উইক এন্ডে আসেন বেড়িয়ে যান। আচ্ছা আমি আসি, থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
কি নাম তোমার? — উনি বল্লেন।
জীবন, আন্টি। আপনার নাম আন্টি?
লীনা… লীনা সরকার। হৃদয় বয়ে নদী, পেতাম তোমায় যদি, হতেম তবে বিলীন তোমাতে। মনে একটা উৎফুল্লতা চেগে উঠলো। একগাল হাসি দিয়ে বল্লাম ফিরবেন কখন? আপনি চাইলে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসব। রাত হলে এ পথে তো গাড়ি ঘোড়া চলে না তেমন। আমি এ পাড়াতেই আমার এক বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি, বেশ কিছুক্ষণ থাকবো ৮-৮.৩০টা নাগাদ ফিরবো।
” আরে না না আমি ঠিক বেরিয়ে পড়বো। খুব ভাল লাগলো, এই শোনো এস, একটু চা খেয়ে যাও।” না আন্টি পরে একদিন আপনার বাড়িতেই এই অধম হাজির হবে খন। আপনি যান ওনারা অপেক্ষা করছেন। একটা কিছু জয় করলাম ভাব নিয়ে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে উঠলাম। চা খেলাম। ক্যারম খেল্লাম।
৭/৩০টা বাজতেই মনের ঘন্টা লীনা লীনা করছে। ক্যারমেও আর মন বসছে না। সাদা গুটি ফেলতে গিয়ে কালো গুটি ফেলে দিচ্ছি। সহজ গুটি আর নেট করতে পারছি না। হেরে গেলাম। হওয়ারই কথা, মন ফেসেছে লীনায়, একদিনে সব দিকে জিত ধাতে সইবে না যে। কনসেনট্রেট অন হার বলে মাথায় যুদ্ধ চলছে। নাহ লীনা আন্টি মাছ নয়, সেটা কখনো ভাবি নি। নিছক টান কাজ করছে মস্তিষ্কে। রহস্যের কিনারায় দাড়িয়ে আছি আর ফেলুদার সিগারেটে ধোয়া যেন। নারী তুমি কতই শক্তিমান, কত বীর বাহাদুর কে নাচিয়ে কাদিয়ে একাকার করে দিলে আর আমি তো সামান্য মাত্র। আলবাত তোমার লাটাইএর ঘুড়ি বনে গেছি।
বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে আমার ঘোড়া ছুটছে এক রহস্যের মায়াজালে আটকাতে। স্বেচ্ছায়, বাধনহারার মত। অলীক কিছু পেতে ব্যাকুল আমি। চায়ের দোকান টার পাশে এক ভদ্র মহিলা না, চেনা সেই নীল শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজ। পেয়েছি পেয়েছি বলে, আমায় কে দেখে। গন্তব্যের ঠিক দু ফুট দুরে ব্রেক কষলাম। ” বলেছিলাম এই সময় গাড়ি পাওয়া যায় না। আন্টি আপনি অধম কে তো পাত্তাই দিলেন না। ” আগ বাড়িয়ে বলে ফেল্লাম।
” এই তুমি! আর বলো না, এমন পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতেই পারিনি। সেই কখন থেকে দাড়িয়ে। ” আন্টি বললো। উঠুন কি আর, চলুন। ৯ টার মধ্যে ওনার বাড়ি পৌছালাম। কি সুন্দর বাড়ি। ওনার পছন্দ আছে। সাজানো গোছানো ঘর গুলো। নিজে যেচেই বল্লাম – এবার চা খাওয়ান। আপনি খুব ভাল মানুষ।’ মিষ্টি হাসি খানা প্রাণ খুলে নিল যেন।
“হ্যা অবশ্যই, দাড়াও সোফা তে বসো। উনি বল্লেন। এদিক ওদিক দেখতে থাকলাম। ওয়াল কেসে ঘুরতে যাওয়ার ছবি গুলো চোখে পড়লো। উনি চা নিয়ে এলেন। কি দেখছো, এটা সিমলার ছবি, আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগের- আন্টি বলল। ”
আপনি সেই একি আছেন কি সুন্দর দেখতে আপনি- মন থেকে বলে দিলাম। থ্যাংক্স। এই তোমার লজ্জা করে না। আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখছো নাকি। ” নাহ না- আমি বল্লাম. তাহলে কি দেখে এত সুন্দর মনে হল। আপনি দেখুন সেই পাচ বছর আগে যেমনটি ছিলেন এখনো সেই একি আছেন। আচ্ছা তাই বুঝি। বেশ। – চাপা হাসি হাস্লেন উনি।
রাতে কি আছে ডিনারে- জিজ্ঞেস করলাম। ” এই হ্যা, তুমি প্লিজ খেয়ে যেও। একা থাকি ভাল লাগে বল। একটু কোম্পানি পাওয়া যেত।- উনি বললেন। মন্দ নয়। যাকে নিয়ে এত ভেবেছি, দেহ রস নিংড়ে বের করেছি রাতের পর রাত। তার হাতের রান্না খাব না! এ হতেই পারে না। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না।
” মানে লেট হয়ে যাবে তো? আচ্ছা ঠিক আছে। ” ওনাকে বল্লাম। মনটা একটা কি দারুণ শান্তি পাচ্ছে। লীনা আন্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সারা বাড়িটা দেখালেন। এই কিছুক্ষণের মধ্যে যেন অনেক আপন হয়ে গেছেন উনি। আব্দার করার জোর টাও যেন বেড়ে গেছে। ওনার গভীর চোখে হারিয়ে যাচ্ছি । রাত ৯টা, পশ্চিম আকাশে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে উঠলো।