“ক্ষুধিত যৌবন”- দ্বিতীয় অধ্যায় – ১১তম পর্ব

This story is part of the ক্ষুধিত যৌবন series

    *গত পর্বে যা ঘটেছে..সুলেখা শুরের বাড়ি থেকে ফিরে দেখে অর্পন এসে উপস্থিত ৷ তারপর ঘাটশীলা ট্যুরের জন্য অনন্যাকে রাজি করিয়ে নেয়..তারপর কি..১০ম পর্বের পর..
    পর্ব:-১১,

    ঘাটশিলা নাম শুনলেই যে লেকের কথা মাথায় আসে তা হলো বুরুডি লেক l বুরুডি লেক ছাড়া ঘাটশিলা ভ্রমণ যে অসম্পূর্ণ তা বলাই বাহুল্য l ঘাটশিলা ভ্রমণ এর এক অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো পাহাড়ে ঘেরা এই সুন্দর হ্রদটি l অসাধারণ সুন্দর একটা জায়গা l অপূর্ব তার রূপ l সবুজ পাহাড়ের মাঝে শীতল টলটলে জলের হ্রদ l ধারে লাল মাটির তীর l নিরিবিলি আর স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ l হ্রদের জলে বোটিং এর ব্যবস্থা আছে ৷

    অনন্যারা গতকালই এখানে পৌঁছেছে ৷ অর্পনের গাড়ি নিয়ে গতরাতে রাজপুরের ফ্ল্যাটেই ছিলো ৷

    অমিত শেষবেলায় বলে ‘ওর নাকি অফিসে কি জরুরি কাজ পড়েছে তাই ও এখন যেতে পারছে না ৷ দিন দুই ফরে ও বাই ট্রেন এসে ওদের জয়েন করবে ৷
    অনন্যা তখন অমিতকে বলেছিলো তাহলে আমি আর একলা যাবো কেন ?

    সেই শুনে অমিত বলে- এই না,তুমি যাও..আমিতো আসছি দুদিন পরে..তাছাড়া অর্পনদার বন্ধু ও তার স্ত্রীও রেডি হয়ে থাকবেন ৷
    ভোর ৫.৩০ নাগাদ ওরা রাজপুর থেকে রওনা দেয় ৷ পথে অর্পনের বন্ধু ও তার স্ত্রীকে পিক করে অর্পন ৷
    বেশ গরম এখানে ৷ গতকাল দুপুরে এসে ওরা ‘বিভুতি লজ’ বলে একটা দোতালা বাড়িতে ওঠে ৷ তারপর প্রায় আধঘন্টা ধরে স্নান করল ৷ প্রখর তাপে স্নান করে শরীর ও মন শীতল হয়ে গেলো ৷ তারপর লজের রাঁধুনির হাতে গরম ভাত,করলা ভাজা, বিউলির ডাল রাঙাআলু দিয়ে, আলুভাজা, রুইমাছের কালিয়া ও জলপাইয়ের টক দিয়ে মধ্যাণভোজ সেরে এসি রুমে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্রাম নেয় ৷

    অনন্যা ও অর্পন পাশাপাশি দুটো রুমে ও অর্পনের বন্ধু পরেশ প্রামানিক ও মঞ্জুলা প্রামানিক একটা রুমে ৷
    সন্ধ্যা হয়ে এলে দোতালার ছাদঢাকা বারান্দায় সকলে সমবেত হয় ৷ চা পর্ব মেটার পর মঞ্জুলা বলে- আচ্ছা অর্পনদা কাল আমরা কোথায় যাবো ? ব্বাবা কি গরম এখানে ৷ বলে নিজের পড়ণের শেমিজ টাইপ একটা পোশাকের গলার দিক থেকে ফুঁ দিয়ে বাতাস দেয় ৷

    অর্পন হেসে বলে- হুম,একটু গরমতো হবেই..কাল আমরা গাড়িতেই ঘুরে নেব ৷ লজের দেখাশোনা করে যে ছেলেটি ওই ড্রাইভ করে নিয়ে যাবে ৷
    ইতিমধ্যে পরেশ টেবিলের উপর বিয়াযর ,হুইস্কি, চিপস হাজির করে ফেলেছে ৷ তারপর রাঁধুনিকে হাঁক পাড়তেই রাঁধুনি ও তার বউ ঠান্ডা জল,বরফ, চিকেন পকোড়া ইত্যাদি এনে হাজির করে বলে- আপাতত আপনারা এই দিয়ে শুরু করুন..পরে লাগলে ডাকবেন.. পরেশ পেগ তৈরি করতে শুরু করে ৷

    মঞ্জুলা জায়গা পাল্টে অনন্যার পাশে এসে বসে ৷ তারপর ওকে বলে- তুমি,এই গরমে শাড়ি পড়ে আছো কি করে ?
    অনন্যা হেসে বলে- না,আমি ঠিক আছি ৷

    তখন মঞ্জুলা ফিসফিস করে বলে-পেটে মদ পড়লে দেখবে কেমন গরম ছোঁটে..ফিক্..ফি্ক করে হাসতে থাকে মঞ্জুলা ৷
    অনন্যাও হেসে বলে- হুম..কি আর করা যাবে ৷
    মঞ্জুলা বলে-হুম,ডিনারের পরে দেখি গরম কমানোর কি উপায় হয় ৷
    সূর্য ডুবতে তাপপ্রবাহ কমে বেশ একটা ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে ৷ ধীরে ধীরে অনন্যাদের ড্রিঙ্কস ও আড্ডা জমে ওঠে ৷
    পরেশ অনন্যাকে বলে- আপনি কোন স্কুলে পড়ান ৷
    অনন্যা মৃদু হেসে বলে-N.P.Sএ আপাতত ট্রেণি টিচার হিসেবে আছি ৷
    অর্পন হেসে বলে- বুঝলে পরেশ,আমার এই ভাইবৌটি ব্রিলিয়ান্ট ৷ স্কুলে পড়ানোর সাথে সাথে এম.এ কোর্সটাও চাল্লাচ্ছে..এর সাথে সংসার এবং আগামীতে বি.এড..৷
    মঞ্জুলা বলে- ব্বাবা,এতো কিছু সামলাও কি করে ?
    আমি তো অফিস থেকে ফেরার পর..একদম ধেড়িয়ে পড়ি ৷
    অনন্যা জিজ্ঞেস করে কোথায় চাকরি করেন ?
    মঞ্জুলা বলে- একটা Law Farm এ আছি ৷
    এইসব টুকটাক কথায় রাত বাড়তে থাকে ৷
    লজের ম্যানেজার এসে অর্পনকে বলে- আপনারা ডিনার করে নিন ৷ কালতো আবার সকালে ঘুরতে যাবেন ৷
    পরেশ বলে-কটা বাজে ভাই ?
    লজের ম্যানেজার বলে-৯.৩৯ হয়ে গিয়েছে স্যার ৷
    অর্পন তখন বলে-হ্যাঁ,তুমি রেডি করতে বলো..আমরা ৫মিনিটের মধ্যেই আসছি ৷
    ***
    ডিনার শেষ করে অনন্যা নিজের রুমে ঢুকে শাড়ি ছেড়ে বাথরুমে গিয়ে একটু গা ধুয়ে নিল ৷ তারপর একটা সুতির হাতাকাটা ম্যাক্সি পড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল ৷ হঠাৎ একটা দরজা নক করার আওয়াজ শুনে কৌতুহলী হয়ে দরজটা খুলে ডানদিকে তাকিয়ে দেখে মঞ্জুলা অর্পনের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো ৷ একটু মুচকি হেসে মনে মনে বলে- ও,এই তাহলে মঞ্জুলার গরম কমাবার প্ল্যান ৷ আর অর্পনও এই কারণে অনন্যাকে নিজের রুমে ডাকে নি ৷ যাক বাবা,যা গরম একটু ঘুম দরকার ভেবে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে ৷
    ***
    পরদিন ৫টা নাগাদ দরজায় নক শুনে অনন্যা বেরিয়ে দেখে অর্পন দাঁড়িয়ে ৷ অনন্যাকে দরজা খুলতে দেখে বলে- কি রেডিতো?
    অনন্যা হেসে বলে- হ্যাঁ ৷ আর মনে মনে ভাবে ব্বাবা কালরাতে অতো দেরিতে শুয়েও অর্পন একদম
    রেডি ৷
    অর্পন বলে- তাহলে চলো..
    অনন্যা দরজা বন্ধ করে অর্পনকে অনুসরণ করে ৷ লবিতে নেমে দেখে মঞ্জুলা একটা থাইচাপা আকাশী জিনস ও একটা সরু ফিতেওয়ালা হলুদ গেঞ্জি পড়ে আছে ৷ এতে ওর শরীরের ৬০% প্রকট হয়ে আছে ৷
    পরেশ একটা সাদা থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট ও সাদা পোলো টি-শার্টে সজ্জিত ৷
    অর্পন সাদা পায়জামা আর খাদির পাঞ্জাবী পড়েছে ৷
    অনন্যা নিজে পড়েছে একটা শান্তিপুরী সাদাখোলের উপর সুতোরকাজের তাদের শাড়ি..সাথে লাল কুনুই অবধি হাতাওয়ালা ব্লাউজ ৷ পায়ে কাপড়ের জুতো ৷ কপালে বেশ বড় করে একটা টিপ..সিঁথিতে সিঁদুর ৷ হাতে,কানে গলায় সামান্য অলঙ্কার ৷ একদম cool লাগছে অনন্যাকে..৷
    পরেশ ওকে দেখৈ বলে- ওয়াও! কি অপূর্ব দেখতে লাগছে আপনাকে অনন্যা..৷
    অনন্যা একু লাজুক হেসে বলে- ধন্যবাদ ৷

    গাড়িতে উঠে জানালার পাশের সিটে বসে ও ৷ তারফর বসে অর্পন আর অর্পনের পাশে ওঠে
    মঞ্জুলা ৷ পরেশ সামনের সিটে বসে ৷ লজের রাঁধিন একটা বেতের বাস্কেট,চা’য়ের ফ্ল্যাস্ক,চারটে ভিজে কাপড়ে মোড়া জলের বোতল গাড়ির পিছনে তুলে দেয় ৷ সবাই গুছিয়ে বসতেই লজের ম্যানেজার ড্রাইভিং সিটে বসে বলে- আমার নাম বিপুল পাত্র ৷ আপনাদের একটু ঘাটশীলা সর্ম্পকে কিছু জানিয়ে দেই..

    অনন্যা বলে- হ্য,হ্যাঁ বলুন..আমরা সকলেই শুনতে চাই ৷ বাকিরাও ওর সাথে গলা মেলায় ৷
    তখন বিপুল বলতে শুরু করে..
    ঘাটশিলা, হচ্ছে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভুম জেলার একটি শহর। এই শহরটি সূবর্ণরেখা নদীর তীরে এবং এটি বনভূমি এলাকায় অবস্থিত। এখানকার রেলওয়ে স্টেশনটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। ঘাটশিলা অতীতে ধলভূম রাজ্যের সদরদপ্তর ছিলো। দর্শনীয় জায়গা বলতে..ভীষণা দেবী রংকিনীর মন্দির, সুবর্ণরেখা নদী, ফুলডুংরি, গালুডি, কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, বুরুডি লেক ৷ এছাড়া
    সুবর্ণরেখা নদী ও নদীর তীরে বিচ্ছিন্ন পাহাড় ও অরণ্য পরিবৃত আমাদের এই শহরটির মনোরম পরিবেশ । অতীতে আবহাওয়া বদল করতে বাঙালিরা ঘাটশিলা আসতেন। ঝাড়খন্ডে অবস্থিত হলেও স্থানীয় অধিবাসীদের বৃহৎ অংশ বাংলা ভাষাভাষী।

    প্রথমে আপনাদের ভীষণা দেবী রংকিনীর মন্দির, সুবর্ণরেখা নদী, ফুলডুংরি, গালুডি, কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি দেখিয়ে শুরু করি ৷
    অর্পন বলে – তোমার হাতে গাড়ি আর আমাদের ছেড়ে দিলাম যা যা দেখাবার দেখাও ৷
    পরেশ জিজ্ঞেস করে- বিপুলবাবু..দুপুরে লাঞ্চ কোথায় করাবেন ?
    বিপুল কুন্ঠিত হয়ে বলে- আমাকে আর বাবু বলবেন না ৷ বিপুলই বলুন ৷ আর লাঞ্চ করাবো ধারাগিরিতে ৷
    এখান থেকে 7/8 কিমি দূরে ধারাগিরি ফলস ওখানে যাওয়ার আগে কিংবা পরে এখানে বিশ্রাম ও খাওয়ার জন্য বেশিরভাগ পর্যটকই এখানে গাড়ি থামান ৷ উঁচু রাস্তার ধারে ছোট ছোট খাওয়ার হোটেল যেখানে পাওয়া যায় সুস্বাদু খাবার বেশ কম দামে ৷ দেশি মুরগির ঝোল খেতে চাইলে আগে থেকে অর্ডার করে ধারাগিরি গিয়ে ঘুরে আসার পথে খেতে হয় ৷ সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার করে দেশি মুরগির মাংস নাও পাওয়া যেতে পারে ৷ অফ সিজিন এ তো ভাত এর জন্যও অর্ডার দিতে হয় কিছুক্ষন আগে ৷ আমার চেনাজানা দোকানে আমি গতরাতেই খবর পাঠিয়ে অর্ডার করে দিয়েছি ৷
    মঞ্জুলা হেসে বলে- বাহ্,তুমি দেখছি বেশ করিৎকর্মা ছেলে..৷

    অনন্যা মঞ্জুলার মুখে করিতকর্মা ছেলে শুনে মনে মনে হেসে ভাবে..হুম,মঞ্জুলা বেশ করিতকর্মা ছেলে চিনতে পারে ৷ আজ রাতে হয়তো বিপুল পাত্রের ভাঁড়ার পূর্ণ হতেও পারে ৷
    বিপুল দর্শনীয় জায়গা গুলো ঘুরিয়ে যখন বুরুডিতে পৌঁছল তখন দুপুর হয়ে এসেছে ৷ পথে একটা পুকুর ও গাছপালা ভরা জায়গায় ওরা গাড়ি থামিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছিল ৷ কিন্তু কলা,কেক, ডিমসিদ্ধর ব্রেকফাস্টর কখন তলিয়ে গিয়েছে ৷ এখন মাঝ দুপুরে ক্ষিদেতে সকলেরই পেটে ছুঁচো ডন মারছে ৷ খেতে হবে আগে l কিন্ত গরমে ওরা ঘামের সমুদ্রে ভাসছে ৷ দোকান পাট সব বন্ধ l দুটি হোটেল কেবল খোলা ৷ আসলে এমন গরমের দিনে অর্থাৎ অফ সিজিনে গিয়েছে যে এখন পর্যটক আসেনা বললেই চলে ৷ ওরা চারজন আর বিপুল এবং দোকানের কয়েকজন ছাড়া গোটা বুরুডি লেক অঞ্চল খাঁ খাঁ করছে ৷ প্রখর রোদ্রে সব কিছু যেন তপ্ত তামা হয়ে পুড়ছে ৷ এক ভয়ানক অথচ সুন্দর জনশূণ্যতা বিরাজ করছে ৷ এই জায়গায় শীতের সময় গমগম করে ৷ তখন লোকের মেলা আর পিকনিক পার্টির ভিড় জমে থাকে ৷

    যাইহোক ওরা ঠিক কুঁয়োর জলে হাত-মুখ ধুয়ে একটু ঠান্ডা হয়ে বসলো ৷
    ততক্ষনে ওদের ভাত ডাল সবজি আর কষা করে দেশি মুরগির মাংস ৷
    খাওয়ার পর সিঁড়ি বেঁয়ে রাস্তা থেকে নীচের দিকে নেমে লেকের তীরে এসে বসল ৷

    তারপর আবার ওপরে উঠে এলাম l ততক্ষনে আকাশে কোথা থেকে খন্ড খন্ড মেঘ এসে সূর্যটাকে আড়াল করে ওদের ছায়া দিতে লাগলো l কালো মেঘে চারদিকটা বেশ মেঘলা আর অন্ধকার হয়ে এলো ৷ একটু আগে পর্যন্ত যে ঝলমলে রোদে চারদিক আলো বিচ্ছুরণ করছিলো সেই ভাব টা কেমন ম্লান হয়ে গেছে ৷ হ্রদের জলে মেঘেদের লুকোচুরির ছায়া আর পাহাড়ের রঙ বদল দেখতে দেখতে বিমোহিত হয়ে পড়ে ওরা ৷ অসাধারণ অনুভূতি হ্রদের ধারে ধারে বহু দূর হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে ছবি তোলাতুলি চলল ৷

    সন্ধ্যা পার করে ওরা লজে ফিরে এলো ৷ গরমের ধকলে সকলেই বেশ ক্লান্ত ৷ ওরা যে যার রুমে গিয়েই স্নান করে ঠান্ডা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো ৷

    পরের তিনটি দিন গতানুগতিক ভাবে কাটলো ৷ অমিত যথারীতো ওদের সাথে জয়েন করে নি ৷ তাই মর্ণিংওয়াকে গিয়ে সুর্বণরেখার তীরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ৷ বিকেলে হেটে বা রিকশা করে বেড়ানো ৷ সন্ধ্যায় দোতালার বারান্দায় বসে আড্ডা ও সুরা পান ৷ রাতগুলো মঞ্জুলাই অর্পনকে দখল করে রাখতো..এতে অবশ্য অনন্যা অখুশি ছিলো না ৷ অর্পন পরে ওকে বলেছিল.. Sorry, ভ্রমণসাথী র্নিবাচন সঠিক হয় নি ৷ তোমাকে সময় দিতে পারলাম না ৷
    অনন্যা হেসে বলে- না,না,আমি ঠিক আছি ৷

    তখন অর্পণ হেসে বলে- তোমাকে একলা একলা ঘুমাতে হোলো ৷
    অনন্যা অর্পনের ইশারা বুঝে বলে- যাহ্,ভারি অসভ্য তুমি অর্পন দা ৷
    ২০তারিখ ব্রেকফাস্ট করে ওরা ঘাটশীলা থেকে রওনা দেয় ৷
    অর্পন অনন্যাকে রাজপুরের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয় ৷
    ঘাটশীলা থেকে ফেরার দিন কয়েকপর অনন্যা ওর স্টাডি নিয়ে বসেছে ৷ এমন সময় সুলেখা শুর ফোনে অনন্যাকে বলেন- অনন্যা তোমার সাথে দেখা করতে চাই ৷ একটা জরুরি দরকারে তোমার হেল্প লাগবে ৷
    অনন্যা জিজ্ঞেস করে-কোথায় ?
    সুলেখা বলেন- আগামীকাল বেলা ১১টা নাগাদ আমার বাড়িতেই এসো..একসাথে লাঞ্চ করবো ৷ প্লিজ,না কোরোনা ৷
    অনন্যা হেসে বলে- না,না আমি আসবো ৷

    পরদিন অনন্যা ঠিক ১১টা নাগাদ নিউগড়িয়ায় সুলেখা শুরের বাড়িতে পৌঁছায় ৷ ওকে দেখে সুমনা বলে- আরে মিস আসুন..কেমন আছেন ? মা মিস এসেছেন ৷ বলে সুমনা অনন্যাকে টেনে নিয়ে যায় ৷
    ড্রয়িংরুমে পৌঁছে অনন্যা দেখে ওখানে সুলেখা শুর ও এক ভদ্রলোক বসে আছেন ৷
    অনন্যাকে দেখে সুলেখা ওকে বসতে বলে ভদ্রলোক ওর পরিচয় দিয়ে বলেন- যোগেশ,উনি অনন্যা রায়,সুমনার ক্লাস টিচার ৷ উনিই ওকে সর্বনাশা কাজ করা থেকে বাঁচিয়েছেন আর ওই প্রস্তাবটা ওই দিয়েছে ৷
    যোগেশ অনন্যাকে হাতজোড় করে নমস্কার করে বলেন- আপনার কাছে আমাদের অনেক ৠণ জমে গেল ম্যাডাম ৷
    অনন্যা প্রতি নমস্কার করে বলে- আহা,ৠণ কেন বলছেন ? সুমনা আমার ছাত্রী তাই ওইটুকু তো করতেই হয় ৷
    এই কথার মাঝে সুলেখা বলেন- অনন্যা তোমাকে সাক্ষী হতে হবে ৷
    অনন্যা অবাক হয়ে বলে- কিসের সাক্ষী সুলেখা দি ৷

    সুলেখা শুর হেসে বলেন-বারে,বুঝলে না ৷ তোমার ওইদিনের প্রস্তাবটা নিয়ে আমরা কথা বলে ঠিক করলাম..তোমার প্রস্তাবটাই আমরা গ্রহণ করবো ৷
    অনন্যার তাও খেয়াল পড়তে না দেখে সুলেখা লজ্জা লজ্জা মুখে বলেন- ওই যে বিয়ে করার কথাটা বলেছিলে না ৷ আমরা আজ বিয়েটা করছি রেজিস্ট্র করতে যাবো..তুমি সাক্ষী হবে ৷
    এতোক্ষণে অনন্যা বোঝে তাকে কেন ডেকেছেন সুলেখা ৷ আর সুলেখা ও যোগেশের পোশাকটাও এখন লক্ষ্য করে দেখে..সুলেখা একটা আকশী বেনারসী পড়েছে,সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ,যৎসামান্য গয়নায় কণের সাজে সজ্জিতা ৷ আর যোগেশের পড়ণেও বরের বেশ ধুতির বদলে পায়জামা ও পাঞ্জাবী ৷
    সুলেখা বলে- কি হোলো অনন্যা..তুমি কিছু বলছো না যে..আমাদের বিয়েতে সাক্ষী দেবেতো..আসলে তুমি ছাড়া আর কাউকে তো বলার নেই ৷
    সুলেখার কথায় অনন্যা বলে- হ্যাঁ,আমি সাক্ষী থাকব..৷
    অনন্যার কথা শুনে সুলেখা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে- thakns sister. তারপর যোগেশের দিকে তাকিয়ে বলেন- তাহলে চলো আমরা বেরোই ৷

    যোগেশ ঘড়ি দেখে বলেন- হ্যাঁ চলো গাড়ি এসে গিয়েছে নীচে..এই বলে – একটা সুন্দর চটের ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হতে বলেন- এসো তোমরা আর অনন্যা আপনাকে ধন্যবাদ জানাই ৷
    যোগেশ রুম ছেড়ে গেলে অনন্যা বলে- সুমনা কি বলছে ? এই বিয়ে নিয়ে ৷
    সুলেখা বলেন- তোমার প্রস্তাবটা নিয়ে আমরা আলোচনার সময়ও এটাই ভাবছিলাম..সুমনাতো এখন আর ছোট্টটি নেই..তা ওকে কিভাবে ম্যানেজ করবো ? তারপর একদিন যা হয় হবে ভেবে..ওকে জানালাম আমি বিয়ে করবো ৷ ও তখন যা বললো শুনেতো আমি হতবাক হয়ে পড়লাম ৷
    কি বলল? অনন্যাও কৗতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ৷
    সুলেখা বলেন- ও বলল..তুমি মেসোদাদু ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করলে আমি রাজি না ৷ তারপর আমার গলা জড়িয়ে বলে- মামণি তুমি মেসো দাদুকেই বিয়ে করো ৷
    অনন্যা হেসে বলে-যাক,সুমনার দিক থেকে তাহলে গ্রীণ সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছে ৷ কিন্তু দিদি তোমার বাবা-মা’র কি বক্তব্য..৷

    সুলেখা বলেন- জাত মিলেছে যে..যোগেশের পদবি যে ‘ব্যানার্জ্জী’ আর আমার বাপের বাড়িও ‘গাঙ্গুলী’ তাই ওদিক থেকেও খুব একটা আপত্তি হয়নি ৷ মা একটু গাইগুঁই করছিলেন বটে..তার আপন বোনের স্বামীর সাথে নিজের মেয়ের এই বিয়ে নিয়ে ৷ কিন্তু বাবার ধমকে উনিও আর কিছু বলেন নি ৷
    সুমনা এসে বলে- কি হোলো চলো? মেসোদাদু ডাকছে তোমাদের..যেতে হবে তো..চলুনতো মিস..বলে সুমনা অনন্যার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে ৷ সুলেখাও পিছন পিছন আসতে থাকে ৷
    অনন্যা সুমনার সাথে চলতে চলতে ওর খুশি লক্ষ্য করে ৷ আর একটা লাল লঙ গাউন পড়া সুমনাকে খুব মিষ্টি লাগছিল ৷ অনন্যা সুলেখা ও সুমনার খুশিতে সামিল হতে পেরে খুশিই হয় ৷ আর উপলব্ধি করে “ভালোবাসা কোনো সম্পর্কের মধ্যে থাকে না। ভালোবাসা থাকে মর্যাদা আর সন্মানের মধ্যে।
    এটা কিন্তু বাস্তব সত্য, শুধু রক্তের সম্পর্ক দিয়েই সবকিছু বিচার হয়না। ” তাই সুলেখা যোগেশের জন্য ও ঈশ্বরের কাছে ওদের মঙ্গলকামনা করে ৷ আর সুমনাও যেন মনের মলিনতা ভুলে নতুন করে জীবনকে উপভোগ করতে পারে তাও..কামনা করে ৷

    ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসে পৌঁছে কোর্ট পেপারে সইসাবুদ মেটার পর সুলেখা ও যোগেশর মালাবদল ও মিষ্টিমুখ পর্বের মধ্যেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসার হেসে বলেন- আজ থেকে আপনারা স্বামী-স্ত্রী হলেন ৷ আপনাদের আগামী জীবন আনন্দ- খুশিতে ভরে উঠুক ৷ তারপর অনন্যাকে দিয়ে দুই তরফের সাক্ষীর কলমে সই করিয়ে বলেন..আগামী সপ্তাহে এসে সার্টিফিকেটটা কালেক্ট করে নেবেন ৷
    তারপর নববিবাহিত দম্পতি সুলেখা ও যোগেশ, সুলেখার মেয়ে সুমনা ও অনন্যাকে নিয়ে পার্কস্ট্রিটের এক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টে প্রীতোভোজন পর্ব হয়ে ষোলোকলা পূর্ণ হয় ৷
    ****
    মাসখানেক পর:-
    সকালে স্কুলে পৌছে সবে দুটো ক্লাস নিয়ে টির্চাস রুমে ঢুকেছে এমন সময় হঠাৎই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে ওঠে অনন্যার ৷ কোনোরকমে চেয়ারে বসে পড়ে ও..৷
    ওকে ওইভাবে বসে পড়তে দেখে শেফালী ভট্ট বলে ওঠেন..কি হোলো অনন্যা ? শরীর খারাপ লাগছে নাকি ?
    স্কুল থেকে একজন জেনারেশ ফিজিশিয়নকে ডেকে চেকআপ করে ওকে কটাদিন রেস্টে থাকতে বলেন এবং আরো একজনকে কনসাল্ট কলতে বলেন ৷ তারপর স্কুলের গাড়িই অনন্যাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় ৷

    ঘরে-বাইরে সমস্তটাই অনন্যাকে নিজে হাতে সামলাতে হয় ৷ আর যেদিন মালতি ডুব মারে সেদিন তো সোনায় সোহাগা। ডক্টরের চেম্বারে পৌছতে বেশ খানিকটা দেরি করে ফেলায় সেটাই হলো যেটা হওয়ার ছিল, ডক্টর বেরিয়ে গেছেন। রোজকার ট্রাফিকের মতো একখানা জ্বলন্ত সমস্যা মথার ওপর বিরাজ করলে অন টাইম পৌছানো ৷ সে আপনি ভুলেই যান। অনন্যাকে ফ্যাকাসে মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওই মেডিকেল সেন্টারের একজন বলে..-ম্যাডাম আপনি ডঃ এস. চ্যাটার্জি কে দেখিয়ে নিতে পারেন। নতুনই এসেছেন তবে অনেকেই দেখাচ্ছে ওনাকে…৷
    চলবে…

    **অনন্যা হঠাৎই ডাক্তারের চেম্বারে কেন? তা জানতে আগামী পর্বে নজর রাখুন ৷