বাংলা চটি উপন্যাস – এমন দিনে ঘর থেকে বেড়ুনোর মানে নেই। চিটচিটে গরম। দুমিনিট হাঁটলেই ঘামে বগল ভিজে যায়। অথচ এখনও বসন্ত। গ্রীষ্ম এখনও ফুলফর্মে মাঠে নামেইনি। রাধাচূড়া গাছগুলো এখনও ক্যাম্পাসে রঙ ছড়াচ্ছে।
আমার টাকা থাকলে গরমকালটা ইউরোপের কোন দেশে গিয়ে কাটাতাম। কোন এক পাহাড়ঘেরা লেকের ধারে বসে; এক বোতল বিয়ার নিয়ে। পাইনের ফাঁক দিয়ে হিলহিল করে বাতাস আসতো। খুব দূরে, ধোঁয়াশাদূরত্বে হয়ত দেখতাম কোন এক রেডহেড তরুণীর দেহ। পরক্ষণেই মিলিয়ে যেত হয়তো সে অবয়ব! পাতা পড়ার আওয়াজ মিলিয়ে যেত নিশব্দে।
নাহ, এসব ভাবাই কবিরা গুনাহ! মধ্যবিত্তের আর যাই হোক, দেশভ্রমণ সম্ভব নয়। তারা আয় করে বটে, অনেকে অঢেল টাকার মালিকও হয়, কিন্তু শখ মেটাতে মোটা টাকা খোয়াবার সাহস থাকে না রক্তে। তাদের কিছু ইচ্ছে তাই কবর পর্যন্ত তাড়া করে।
টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসেই বুঝলাম, আজ কোন হোমড়াচোমড়ার জন্ম অথবা মৃত্যুদিন। কিংবা কোন দিবস। একটা মঞ্চে গোটা দশেক লোকের সামনে একজন মাইক নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সামনের চেয়ারগুলো অযথা তেলাপিয়া মাছের মত খাবি খাচ্ছে। এই সামান্য দশজনের জন্য মাইক আনার কী দরকার ছিল? একটু গলা চড়িয়ে বললেই তো শুনতে পেত সবাই!
কাজলের ওর গফকে নিয়ে টিএসসিতে আসার কথা সাড়ে চারটায়। এখন ৫.১৫। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, আরো আধঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করাবে অন্তত।
পকেট থেকে মানিব্যাগটা বেড় করে একটা সিগারেট কিনতে যাবো, ঠিক তক্ষুনি পথ আগলে দাঁড়াল একটা হিজড়া। বেশ শক্তপোক্ত চেহারা। লম্বায় আমার চেয়ে অন্তত এক ফুট উঁচু। হিজড়ারা সবসময় এতো লম্বা হয় কেন? আমি কোনদিন খাটো কোন হিজড়া দেখিনি।
“এই সোনা, দে না দশটা টাকা!” গালে একটা হাত দিয়ে ঠোঁটটা বেকিয়ে বলল মেয়েলি স্বরে।
“টাকা নাই। আরেকদিন নিয়েন।“
হিজড়াদের টাকা দিতে দিতে আমি বিরক্ত। ঢাবি ক্যাম্পাসে এদের দৌড়াত্ব খুব বেশি নেই। কিন্তু টিএসসিতে দাঁড়ালে একবার না একবার এদের খপ্পরে পড়তে হবেই।
হিজড়াটা কিন্তু পথ আগলেই রইল। আমার গালে একটা চিমটি কেটে বলল, “সোনা, আমারও না ওটা নাই। দেখাবো?”
এই ভয় এরা সবাইকে দেখায়। বিশেষ করে কাপলদের। এমনসব কথা বলে, প্রেমিকটি বাধ্য হয় টাকা দিয়ে বিদায় করতে। আমার সংগে কোন মেয়ে নেই । বললাম, “দেখান দেখি। কোনদিন হিজড়ার ঐটা দেখি নাই। দেখান দেখবো!”
হিজড়াটা আমার দিকে স্থিরচোখে তাকালো সেকেন্ডখানিক। তাকে এমন কথা এমন পাবলিক প্লেসে কেউ বলেছে বলে মনে হয় না।
“আমার হোগা এতো দেখার শখ তো সাইডে আয় না, সোনা।“
আমার মাথায় রাগ চড়ে গেল। এমন কথা বলেই একদিন রুপার সামনে আমার থেকে এরা ১০০ টাকা আদায় করেছিল। আজ একে সহজে ছাড়ছি না।
“না, আপনি এখনি এইখানেই দেখান। বললেন তো দেখাবেন। দেখান!”
হিজড়াটাকে কেমন ভীত দেখালো। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এই ব্যাটা পুরুষ। আয়ের সহজ রাস্তা ভেবে হিজড়া সেজেছে। বুকে লোম প্রচুর। উঁচু নয়। এমন তো কত শুনি, ভুয়া হিজড়া পরিচয়ে ধরা পড়েছে এতোজন। হিজড়া সাজাটা কঠিন কিছু বলে তো মনে হয় না। মুখে একটু গাঢ় লিপস্টিক, লম্বালম্বা চুল, আর মেয়েছেলের মাঝামাঝি একধরনের পোশাক পড়লেই নিজেকে হিজড়া হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়! অবশ্য কেউ ইচ্ছে করে এমন করবে না, পেটের ঠ্যাকায় না পড়লে।
“দেখবি? দ্যাখ-“
হিজড়াটা সত্যি সত্যি ওর স্কার্ট মতন জামাটা তুলে দেখালো! আমার ওর সেক্স অর্গান দেখার আগ্রহ নেই কোন। চোখ সরিয়ে নিলাম।
“দেখছিস না কেন, এই হিরো। দেখ ভালো করে।“
আশপাশের অনেকেই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। আরো কয়েকজন হিজড়া এর মধ্যে সামনে চলে এসেছে। ফুলওয়ালি মহিলাটা হাসছে পানখাওয়া বিশ্রী দাঁতগুলো কেলিয়ে।
“দেখলি তো। এবার টাকা দে।“
পকেট থেকে দশটা টাকা বের করে দিলাম। এতেই সে খুশী! পেটের জন্য মানুষ কী না করে। আমি নিজে খুব অভাবে থাকলে, টাকার জন্য কাউকে প্যান্ট খুলে দেখাতে পারতাম?
কাজল ওর গফকে নিয়ে এলো আরো আধ আঘঘণ্টা পর। এসেই বলল, “আরে, জানিস না, যা জ্যাম! সাইন্সল্যাবেই দেড় ঘণ্টা বসে ছিলাম!”
ওর গফকে যতোটা সুন্দরী ভেবেছিলাম, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সুন্দরী। মাথায় ফুলের একটা ক্রাউন।
“আপনার কথা ও খুবই বলে। তাই ভাবলাম, আপনার সাথে একবার দেখা করি।” নিলীমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো। প্রথম দেখায় এতো সহজ করে কেউ আমার সাথে কথা বলেনি কোনদিন। আমার হয়তো চেহারাটাই এমন, যে, মেয়েরা দেখলেই মিইয়ে যায়।
ওর কথার জবাবে আমার কী বলা উচিত? আমিও কি বলবো, “আপনার কথাও কাজল বলে। দেখা হয়ে ভালো লাগলো। হেহে।“?
আমি এতো কিছু না বলে শর্টকার্টে শুধু ক্যাবলাম মত হে হে করলাম।
“চল কোথাও গিয়ে বসি। এখানে খুব শব্দ।“ কাজল বললো কথাটা। ঠিক এই কথাটা আমিও বলতে পারতাম। বললাম না কেন?
গ্রিক মনুমেন্টের সামনে ঘাসে বসলাম আমরা। আমি এই কয়েক মিনিটেই নিলীমার দিকে অন্তত বার পঁচিশেক তাকিয়েছি। আড়চোখে। এভাবে ওর দিকে তাকানো ঠিক হচ্ছে না অবশ্যই। কিন্তু না তাকিয়ে ঠিক পারা যাচ্ছে না। নিলীমার চেহারায় একটা সারল্য আছে- হয়তো সারল্য ঠিক নয়। অন্যকিছু। এমন একটা মুখ ওর, একটানা বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাও যায় না। চোখ সরিয়ে নিতে হয়। গাল গ্যাদটের মুখ যেমন।
“আজ রিনা ব্রাউন দেখাবে। দেখবি?”
আমি আরেকবার আড়চোখে নিলীমার দিকে তাকাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনি এলো প্রশ্নটা। বিরক্তিকর। নিলীমাকে এনেছিস তো বাল আমাকে দেখাবি বলে। দেখতে দিচ্ছিস না কেন!
কাজলের হাতে একটা টিকেট। এসপ্তাহে কয়েকটা সিনেমা দেখানো হবে এখানে। তারই টিকেট। দুটা কেটেছে। আমাকে বলার জন্যই বলছে নিশ্চয়ই। আমার কথা ভাবলে তো, আগেই টিকিট কাটতো আমার জন্য।
“না। তোরা দেখ। তোদের দুই জনার চিপায় পড়তে চাই না।“
কাজল মাথা নেড়ে মেনে নিল কথাটা। শালা আরেকটাবার বললে, দেখার কথা ভেবে দেখতাম।
নিলীমা একটা ঘাস ছিড়ে মুখে দিয়েছে। চিবাচ্ছে ঘাসটা আনমনে। আমার কাছে নিলীমার সবকিছুই নতুন লাগছে। আমি কোন মেয়েকে কোনদিন ঘাস চিবাতে দেখিনি। নিলীমা ঘাসটাও কত সুন্দরভাবে চিবায়!
“কিছু হয়েছে নাকি?” জিজ্ঞেস করলাম ওর দিকে তাকিয়ে।
“না না। অনেকক্ষণ জ্যামে ছিলাম। মাথাটা কেমন করছে।”
কাজলের ফোন আসল একটা। রিসিভ করতে উঠে একটু দূরে গেল সরে। এটাই নিলীমার দিকে তাকানোর শ্রেষ্ঠ সময়।
নিলীমা আরেকটুকরা ঘাস মুখে নিয়েছ। কাচা ঘাসের পাতা। ওর লালায় আরও সবুজ লাগছে পাতাটা।
“আমাদের বোধহয় বাদাম নেয়া উচিৎ ছিল। তাহলে আপনাকে ঘাস চিবোতে হত না!”
হাসল একটু নিলীমা। বললো, “এটা আমার অভ্যাস। সামনে যা পাই মুখে দেই। কতদিন কলম মুখে দেয়ার জন্য মায়ের গাল খেয়েছি!”
নিলীমা শুদ্ধ বাংলায় বলছে। নিলীমা ওর মেয়ে বন্ধুদের সাথেও কি এমন শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে? আর বাড়িতে?
আমরা চা খেলাম। কথা হলো এটা সেটা নিয়ে। কাজলই বকবক করেছিল পুরো সময়টা। আজই প্রথমবার বুঝলাম, আমি একজন ভালো শ্রোতা। না হলে, কাজলের হাজারবার শোনা ত্যানাগুলো মাথাগুজে শুনলান কী করে?
“দোস্ত, শো এর টাইম হয়ে যাচ্ছে। তুই সত্যিই দেখবি না আমাদের সাথে?” কাজল ফোনে সময় দেখে বললো আমাকে।
“না রে। যা। আমার কাজ আছে। যা তোরা।“
ওরা চলে গেল। কাজল নিলীমার হাতটা নিয়েছিল হাতে।
#এটা একটা নোভেলা। আমার এই সাইটে দেয়া প্রথম লেখা। বাকিটা আসছে।