সকালে কাল যখন দুধ এসেছিল, মা স্নানে। দুধওলা বোতল টা নামিয়ে প্রশ্ন করল, “কি সাহেব, মা নেই ?”
“মা– একটু বাথরুম গেছে।”
“ইস। তোমার মায়ের সুন্দর মুখটা না দেখলে দিনটাই খারাপ যায় । একটা হাসি দিয়ে চলে গেল দুধওলা।
মনে কেমন একটা খটকা লাগল। কাকু দুপুরে আসতেই ধরলাম, “গুফিকাকু, মা কি দেখতে খুব সুন্দর ?”
“হঠাত এ প্রশ্ন কেন ?” গোঁফ নাচাল কাকু।
চকলেটে কামড় দিয়ে বলেছিলাম সেদিন আমি পুরো ঘটনাটা। শুনে কাকু একটু যেন রেগে গেল প্রথমে মনে হল, খুব অল্প সময়, তারপর হেসে বলল “দীপসোনা, বাইরের লোকেদের কাছে মেয়েদের সুন্দর মুখ দিয়ে হয় না।”
“তাহলে কি দিয়ে হয় ?”
“বুক আর পাছা দিয়ে।”
“সে আবার কেমন কথা !”
“বিশ্বাস হয় না ? বাইরে বেরোলে দেখে নিয়ো একদিন খেয়াল করে।”
মরিয়া হয়ে বলেছিলাম, “বেশ, কিন্তু তুমি বল তবে। তুমি ত আর বাইরের কেউ নও।”
“আমি ? তোদের ঘরেরই লোক ? তাই না?” হঠাত কেন খুব খুশি হয়েছিল গুফিকাকু, আমায় জড়িয়ে খুব আদর টাদর করে ফিসফিস করেছিল, “সুন্দর, সুন্দর… তোর মায়ের ভেতর বাইরে সব দারুউণ সুন্দর…সমস্ত শরীর টাই…ভারী মিষ্টি…”
এসব ত গতকালের কথা। আজ দুপুরে আমি, মা আর পাপড়ি আন্টি (মাসি বললে পাপড়ি আন্টি খুশি হয় না) বেরিয়েছি মার্কেটে। পাপড়ি আন্টির কপালে একটা ইয়া বড়, মানে বিরাটই বড়, লাল টিপ, গলায় লাল সবুজ মেশানো একটা মোটা হারের মতন- তার থেকে দুলছে একটা বড় কয়েনের মতন কিছু; কি গয়না যে এটা কে জানে ! গাঢ হলুদ ব্লাউজ প্রায় কনুই অব্দি, হাতায় ডিজাইন করা। পরনে একটা ঘিয়া রঙের শাড়ি, যার পাড়ে হাল্কা কমলার ছোঁয়া। কপালের একটা ছোট্ট গোছা চুল কায়দা করে চোখের ওপর নামানো; মাঝে মাঝে সরাচ্ছে হলুদ নেপালিশ করা নখ দিয়ে। কি ঝকঝক করছে মুখটা, বাপরে। নিশ্চয় মেক আপ। আমার চোখ আজ অন্যরকম করে কাজ করছে তবু। ওই থামের পাশে একটা কুলি খৈনি ডলতে ডলতে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। পাপড়ি আন্টি মুখে হাত তুলে হাসছে। আন্টির বুকদুটো মায়ের দ্বিগুণ যেন। ওরেবাবা। এত ওজন নিয়ে চলে কিকরে ? অবশ্য মোটাও ত কম নয়। আরে, সত্যি ত ! লোকটা তাকিয়ে আছে ঠিক বুকটার দিকে সরাসরি, আর খৈনী টা আরো জোরে ডলছে কেমন করে। আমি নজর সরিয়ে পেছনে বাম দিকে দিলাম। সাইকেল নিয়ে দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে। কত আর বড় হবে আমার চেয়ে ? জিভ টা দাঁতে চেপে সসস করছে। দৃষ্টি পাপড়ি আন্টির পেছন দিকে। এই মোটা চর্বিওয়ালা পাছাদুটোর খাঁজে শাড়িটা আটকে ভাঁজ হয়ে গেছে। অটোওলাটাও এদিকে চেয়ে। আচ্ছা ওই টেকো লোকটা যে মোবাইল বের করল, এদিকে অমন উঁচু করে কেন ? কেন মনে হচ্ছে আসলে ও আন্টির পাছার ছবি তুলছে ?
একই সাথে আরেকটা চিন্তা হল, তাহলে মায়ের চেয়ে পাপড়ি আন্টি বেশী ‘সুন্দর’ ? এরা সব আন্টিকে দেখছে- ওই দ্যাখো, ট্রাফিক পুলিশটাও দিব্যি আন্টির বুকে কোমরে চেয়ে। না হয় পাপড়ি আন্টির বুক বড়, পাছায় মাংস বেশি, কিন্তু দেখতে মা আরো সুন্দর ! হু!
আমরা একটা মলে শোরুমে ঢুকলাম। সুন্দর ড্রেস পড়া একটা লোক এসে খুব খাতির করে কি কি বোঝাল। পাপড়ি আন্টি ঠিক বুঝছে না, মা কলকল করে কথা বলে যাচ্ছে। আরো দুয়েকজন কেনাকাটা যারা করছে- এদিকে চাইল। একজনকে তার মাঝে দেখলাম বারবার ফিরে মাকে দেখছে। আমার বুক টা ধক করে উঠল । লোকটা… হুম, মায়ের নাভি থেকে কোমরের অংশটা ঘুরেফিরে ওপর নীচ করে দেখছে। যা হোক, ওখানে ঠিক পছন্দ হল না মা বা আন্টির। আরো কয়েকটা শোরুম ঘুরে টুরে, কেনাকাটা করে, আমরা চারতলার কাফেটারিয়া তে গিয়ে বসলাম। এতক্ষণে আমি অনেক দেখে নিয়েছি। কিছু একটা আছে। বোঝা যাচ্ছে সুন্দরের ব্যাপার টা একেক জনের একেক রকম, কেউ হাঁ করে আন্টিকে দেখে, ত কেউ মা কে…
আইসক্রীমের খোল টা ডাস্টবিনে ফেলে ফেরত আসছিলাম। মা আর পাপড়ি আন্টির পেছন টা দেখা যাচ্ছে। মায়ের কালো ব্লাউজটা পিঠ খোলা। দুদিকের হাতায় রক্তলাল সূতোর কাজ। মায়ের কপালে লম্বাটে একটা রক্তলাল ম্যাচিং টিপ। ঘাস-সবুজ শাড়ির নীচের দিক টা কালো, লাল পাড়। ঘাড় পেরিয়ে পিঠে নেমেছে কালো চুল। আরেকটু এগোতেই শুনলাম পাপড়ি আন্টি মা কে ফিসফিসিয়ে বলছে, “ওই কোণের হ্যান্ডসাম নায়ক টিকে দ্যাখ। তোকেই দেখছে হাঁ করে। চেটেচুটে খেয়েই নেবে এবার।”
“ইস। তুই ভীষণ অসভ্যই রয়ে গেলি।” মা বলল।
আমি নীচু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধার ভান করলাম। আন্টি বলল “তাই ? আর তোর বাড়িতে যিনি রোজ এসে মাছির মতন ঘোরেন ?”
“ছিঃ, কি বলছিস কাকে ? উনি দীপকে খুব ভালোবাসেন। ভারী ভদ্রলোক।খুব হেল্পফুল। পাশে দাঁড়ান। আমাদের খুব আপন করে দেখেন।”
“আপন হয়ে গেলেই হয় এখন। দেখবি ওই হেল্পিং একদিন তোর ভেতরে-”
“ইস, চুপ। তেমন কোনো ক্লোজ হবার সম্ভাবনা দেখলে আমি নিজে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেব বাড়ি থেকে-”
মা পেছন ফিরল কেউ শুনছে কিনা দেখতে। দেখল আমি পেছনে গান গাইতে গাইতে ফিতে বাঁধছি। এদিকে বুকে ধকধক করছে।
গুফিকাকুকে এটা বলতে হবে। মা কখনোই তোমায় ঘরের লোক বলবে না।