আমার ছেলেবেলার থেকে শুরু করে একটা বিশেষ সময় পর্যন্ত আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু বলতে আমার একটাই নাম মনে পড়ে। আর সে হলাে আমার কুসুম আপা। আমার ছেলেবেলার কথা আমি যতদূর মনে করতে পারি, একমাত্র কুসুম আপাই আমার স্মৃতির বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। কারণ, সে কেবল আমার আপা–ই ছিলাে না, সে ছিলাে একাধারে আমার খেলার সাথী, আমার গাইড,/ আমার শিক্ষক, আমার অভিভাবক আর আমার ভালােবাসা। আপা ছিলাে আমার থেকে ৮ বছরের বড়াে। আমার মনে পড়ে, স্কুলে আমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার পর আপার হাতের আঙুল ধরে ধরে স্কুলে যেতাম।
আপু দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলাে। তাই স্কুলে যাওয়া আসার পথে উঁচু ক্লাসের অনেক ছেলে আপাকে কী সব কাগজ দিয়ে যেত, বড়াে হওয়ার পর বুঝেছি ওগুলাে সব প্রেমপত্র। কিন্ত আপা সেগুলি পড়তাে না, ছিড়ে পানিতে ফেলে দিতাে।আপা এতােই সুন্দরী ছিলাে যে যখন হাসতাে মনে হতাে সারা পৃথিবী হাসছে, আপুর দাঁতগুলাে ছিলাে ঝকঝকে সাদা আর এতাে পরিপাটি যে ওর হাসি দেখলেই মনটা ভালাে হয়ে যেতাে। আমি যে ওকে কত ভালােবাসতাম তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমার পুরাে পৃথিবীটাই জুড়ে ছিলাে আমার আপু।।
আমার যখন ১০ বছর বয়স, আপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি একটা অপ্রীতিকর কান্ড ঘটিয়েছিলাম। সবার মুখে শুনছিলাম যে আপার বিয়ে হলে ও শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। তাই কাজী সাহেব যখন আপার বিয়ে পড়াচ্ছিলেন তখন আমি আপার পিছনে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমি চিৎকার করে কাজী সাহেবকে বিয়ে পড়ানাে বন্ধ করতে বলেছিলাম আর কাজীকে মারতে গিয়েছিলাম।
| বড়রা আমাকে ধরে শান্ত করলাে আর জানতে চাইলাে কেন আমি এমন করছি, আমি তখন বললাম, “বিয়ে হলে আপু আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, আমি একা থাকতে পারবাে না“তখন সবাই আমাকে বােঝালাে যে, যখন মেয়েরা বড় হয়ে যায় তখন তাকে একজন উপযুক্ত পুরুষকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়, এটাই নিয়ম।তখন আমি বরকে দেখিয়ে বলেছিলাম, ” ঐ লােকটাকে তাড়িয়ে দাও, ও শালা ভালাে লােক না, শালা পচা“আমার কথায় সবাই হেসে ফেললাে। বাচ্চা মানুষের কথা, তাই সবাই সিরিয়াসলী নিয়ে মজা হিসেবেই নিলাে।
হঠাৎ একটা হাসির রােল পড়ে গেল যখন আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” তুমি যে ঐ বরকে তাড়িয়ে দিতে বলছাে, বরকে তাড়িয়ে দিলে কে তােমার আপাকে বিয়ে করবে?” OF কোন কিছু না ভেবেই আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, “বড় হয়ে আমিই আপাকে বিয়ে করবাে“যাই হােক, পরে ওরা আমাকে ওখান থেকে জোরে করে ধরে সরিয়ে নিয়ে গেলআর আপার বিয়েটা হয়েই গেল। আর আমার নতুন দুলাভাই আপাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে চলে গেল। কুসুম আপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আর চোখ মুছতে মুছতে পালকীতে গিয়ে উঠলাে।
যখন পালকী যাত্রা শুরু করলাে আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম আর বলছিলাম, “তােমরা আমার আপাকে নিয়ে যেও না, ওকে ছেড়ে দাও“কয়েকজন মিলে আমাকে জোর করে ধরে রাখলাে আর পালকীটা ক্রমশ আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে হারিয়ে গেল। এরপর ছয়টা বছর পার হয়ে গেল আমি আর কুসুম আপাকে দেখতে পেলাম না। ওরা আপাকে একটা দিনের জন্যও বাড়ি আসতে দেয়নি। জানি না ঠিক কি ঝামেলা হয়েছিলাে। বাবা মাঝে মধ্যে গিয়ে আপাকে দেখে আসতেন। কিন্তু কখনাে আমাকে সাথে নিতে চাননি আর আপাকে বাড়িও আনতে চাননি।
ছয় বছর পর আপার শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর এলাে যে দুলাভাই আপাকে তালাক দিয়েছে, ওরা আর আপাকে রাখবে না। ওরা অপবাদ দিয়েছিলাে যে আপা নাকি বন্ধ্যা আর সেই সুযােগে দুলাভাই এর এক বন্ধুর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। ততদিনে আমি বড় হয়ে গেছি, সব বুঝি, আপার সম্পর্কে এ ধরনের কথা শুনে আমার খুব রাগ হয়েছিলাে। বাবা সরাসরি বলে দিল যে সে আপাকে নিয়ে আসতে যেতে পারবে না, তার নাকি খুব অপমান হবে। অবশেষে মা আমাকেই পাঠালেন আপাকে নিয়ে আসার জন্য। আমি ওখানে গিয়ে এক বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম।
ওরা আপা সম্পর্কে অনেক খারাপ খারাপ অপবাদ দিলাে আর বললাে, “যেভাবেই পারাে আজকের মধ্যেই এক এখান থেকে নিয়ে যাও। এক মুহুর্তও এখানে তােমাদের থাকা চলবে না।”
আমি ওদেরকে অনেক অনুনয় করে বােঝালাম যে, আজ বেলা পড়ে গেছে, রাস্তাও অনেকটা দূর, গাড়িঘােড়াও চলে না। এখন যেতে গেলে অনেক রাত হয়ে যাবে, রাতটা থেকে সকালে যাবাে। শেষ পর্যন্ত ওরা রাজি হলাে, তবে সূর্য ওঠার আগেই চলে যেতে বললাে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর আমি আমার কুসুম আপার সাথে দেখা করলাম। আপা ঠিক ছােটবেলার মতাে উষ্ণ আলিঙ্গনে আমাকে জড়িয়ে ধরলাে। বড়াে হয়ে গেছি তাে, তাই আপুর শরীরের বিশেষ বিশেষ নরম অঙ্গ আমাকে খুব অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিলাে। সত্যি কথা বলতে কি আমি তলপেটের নিম্নাংশে কেমন যেন বােধ করলাম, আমি তাড়াতাড়ি ওর আলিঙ্গন থেকে ছুটতে চাইছিলাম কিন্তু আপু অনেকক্ষণ আমাকে ওর বুকের মধ্যে চেপে জড়িয়ে ধরে রাখলাে।
আমি আপার মুখের দিকে তাকালাম, সেখানে কোন দুঃখ বা হতাশার লেশমাত্র নেই, আপা মিটিমিটি হাসছিলাে। আপা আমার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিল আর ঠিক ছােটবেলার মতাে দু গালে চুমু খেল, আমি আবার অস্বস্তি অনুভব করলাম আর প্রচন্ড লজ্জা পেলাম।।
আদর টাদর শেষে আপা বললাে, “তুই কি ওদের কথা বিশ্বাস করেছিস?”
আমি খুব জোরে মাথা নেড়ে রাগের সাথে অস্বীকার করে বললাম, “কক্ষনাে না। আমি আমার আপাকে চিনি, তুমি কক্ষনাে এমন কাজ করতেই পারাে না। তুমি আমার কাছে সেই ছােটবেলায় যেমন পবিত্র ছিলে এখনাে তেমনই আছাে।”
আপা আবারাে আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বললাে, “ঠিকই বলেছিস ভাই, আমি এখনও তেমনি আছি। তবে ওরা যা বলছে সেটা করতে পারলে ভালাে হতাে। আর কিছু না হােক মনের জ্বালাটা তাে মিটতাে! “আমি আপার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তুমি কি বলছাে কিছুই বুঝতে পারছি না“।
আপা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললাে, “তােকে অতসব বুঝতে হবে না। এরা খুব খারাপ মানুষ জানিস! এই দেখ তুই এতাে বছর পর জীবনের প্রথম আমার শ্বশুরবাড়িতে এলি, তােকে যে একটু আদর করে ভালােমন্দ খাওয়াবাে সে অধিকারও এখন আমার নেই। চল তৈরী হই, যেতে যখন হবেই যত তাড়িতাড়ি এই জেলখানা থেকে বেরনাে যায় ততই শান্তি, চল।।“এ আমি যখন ওখানে যাই তখন দুলাভাই বাড়িতে ছিলেন না, তিনি এলেন বেশ রাতে। উনাতে কেমন যেন উদভ্রান্ত লাগছিলাে, মনে হয় মদ খেয়েছেন। আমার আসার কথা জানতে পেরেই উনি আপার ঘরে এসে বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগাল করতে লাগলেন। আমার সামনেই আপাকে বললেন, “কিরে মাগী, তাের পুরনাে নাগর নাকি তােকে নিতে এসেছে? যা যা, ওর সাথেই যা! তুইও সুখে থাকবি আর আমিও শান্তি পাবাে, বেশ্যা মাগী কোথাকার! ”
আমার কান রাগে অপমানে ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলাে কিন্তু আপু একটা কথাও বললাে না, বরং মিটিমিটি হাসছিলাে। আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে চাইছিলাম এবং কি যেন বলতে গেলাম তখন উনি আমাকে আক্রমন করলেন, “আর তুমি শালা, দা গ্রেট হিরাে, বিয়ের দিনেই ঝামেলা বাধিয়েছিলে! আমার মনে আছে সব, শালা কাজীকে পর্যন্ত মারতে গিয়েছিলে! বাব্বাহ! বয়সে বড়াে হলেও কী ভালােবাসা! এ যেন রহিম রূপবানের গল্প! আবার বলে কিনা – ওকে আমিই বিয়ে করবাে! তাে যা না শালা, নিয়ে যা, করেকগা বিয়ে, তােরও শখ মিটবে ও মাগীরও কামুড় থামবে! “আমি আর শুনতে পারছিলাম না।
উঠে গিয়ে বললাম, ” আপনি এখন মাতাল, যান ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিন, আপনার মাথার ঠিক নেই! “একথা শুনেই উনি আরাে ক্ষেপে গেলেন, বললেন, ” হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মাথার ঠিক নেই, ঐ মাগীর জন্য, তাের বােন, স্যরি তাের প্রেমিকার জন্য আমার মাথার ঠিক নেই. … শালী আমার বন্ধুরটা নিতে মিষ্টি লাগে আর আমারটা পছন্দ হয় না, না? যাহ শালী, তােরে তালাক দিছি, যাহ। আর আজ রাতে তাের এই নাগরকে নিয়ে শাে, কি মজা, আমার বাড়িতে আমার তালাক দেওয়া বৌ আজ রাতে তার নাগরকে নিয়ে মৌজ করবে, কি মজা! “পাগলের মতাে প্রলাপ বলতে বলতে লােকটা চলে গেল।
লজ্জায় আমি আপাকে মুখ দেখাতে পারছিলাম না।আপা সেটা বুঝলাে, আমার কাছে এসে আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে আদর করলাে আর বললাে, “তাহলে বােঝ, আমি কি নরকে পচছিলাম? আর ওর কথায় কিছু মনে করিস না। ও এরকমই, আমার জীবনটা বিষাক্ত করে দিয়েছে…”