স্বামী কে এয়ারপোর্টে ছেড়ে বেরোনোর সময় নিজের অজান্তে চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল সুদীপ্তার চোখ বেয়ে। বছর ৪৫ র সুদীপ্তার জীবনে সব কিছুই আছে। সে শিক্ষিতা আধুনিকা প্রগতিশীল। একই সঙ্গে একটা নামী স্কুলের দিদিমণি, তার সাথে দায়িত্বশীল স্ত্রী সফল একজন মা। সমাজে তার দারুন সন্মান আছে। তবুও সব কিছু থাকা সত্ত্বেও সুদীপ্তা ভেতরে ভেতরে একেবারে নিঃস্ব। বহুদিন হলো স্বামী জয় এর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক নেই। একটাই ছেলে পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে গিয়েছে।
তারপর চাকরি নিয়ে এক বছর হলো ওখানেই সেটেল করে গেছে। স্বামী সুজয় ব্যাবসার কাজে নিয়মিত বাইরে যান , এইবার ও প্রায় একমাসের জন্য বাইরে গেলেন। যবে থেকে মিলি নামের এক বছর ৩০ র সুন্দরী অফিস একজিকিউটিভ এর সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা বেড়েছে, সে আর আগের মতন সুদীপ্তা কে সময় দেয় না।
সুদীপ্তা সব কিছু জেনেও কিছু বলতে পারে না স্ক্যান্ডাল হবার ভয়ে। সে তার স্কুল শিক্ষিকার ইমেজ নিয়ে ভীষণ সচেতন। এই সব যন্ত্রণা কাউকে বলতে না পেরে সুদীপ্তা ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভাবে গুমরে গুমরে মরে এই সব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক ভাবে এয়ার পর্ট ছেড়ে বেরোনোর সময় এক সুন্দরী অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব ময়ী নারীর সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। আই অ্যাম আবসলিউটলি সরি বলে বেরোনোর সময় ওই নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে সুদীপ্তা রীতিমত চমকে উঠলো। অনেক দিন বাদে তার মুখে একটা খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল। সুদীপ্তা বলে উঠলো “জয়া তুই কতদিন পর দেখা….. কেমন আসিস?”
ঐ নারীও প্রতিউত্তর দিল “ম্যাডাম চিনতে পেরেছে তাহলে। আমি ভালো। তোর খবর বল। এখন কোথায় যাচ্ছিস ”
আমি আছি একরকম, বর আজ সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন তাই ছাড়তে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরব। স্কুল ছুটি চলছে। জয়া: তার মানে এখন তোর সেরকম কোনো কাজ নেই। চল আমার সঙ্গে। আমিও ফ্রী আছি। দুজনে জমিয়ে আড্ডা দেবো। একসাথে লাঞ্চ করবো। ”
সুদীপ্তা: নারে অন্য কোন দিন হবে আজ থাক। জয়া: থাকবে কিরে আজ ১০ বছর পর দেখা হলো আজ আর তোকে ছাড়ছি না। আমার সাথে যেতেই হবে। এ সুদীপ্তা আর জয়া কে বারণ করতে পারলো না। কলেজে থাকতে জয়াই ছিল ওর সব থেকে কাছের বন্ধু। একটা সময় দুজনে কত মজা করেছে। আর আজ তার বন্ধু বান্ধব হীন জীবনে একাকিত্বের বেদনা তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। জয়ার সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে সুদীপ্তা খুব সহজেই তার কলেজ লাইফের দিন গুলোয় ফিরে গেলো।
চার ঘণ্টা পর যখন ওর সঙ্গে একটা রেস্তোঁরা থেকে বেরোলো তখন সুদীপ্তা ফিল করলো তার ভেতরের জমাট দমবন্ধ ভাব টা কেটে গিয়ে তার মনটা বেশ হালকা লাগছে। গুড বাই বলে বিদায় জানানোর আগে জয়া সুদীপ্তা কে পরশু দিন তার নতুন এপার্টমেন্টে একটা প্রাইভেট পার্টিতে ইনভাইট করলো। সুদীপ্তা ওকে বললো, যে ও এইসব পার্টি ক্লাব ইভেন্টে লোকজন এর মধ্যে যাওয়া বিশেষ পছন্দ করে না। কিন্তু জয়া কোনো কথা শুনলো না। সে বার বার করে বললো ওর পার্টনার এর বার্থডে পার্টি, তার হোনোরে পার্টি টা হচ্ছে। জয়া ই সব আয়োজন করছে ওকে, যেভাবেই হোক আসতেই হবে। অন্য কেউ হলে সুদীপ্তা মুখের উপর সটান না বলে দিত। নিজের বর কেই অনেকবার পার্টি যাবার অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছে কিন্তু জয়া কে কিছুতেই ও না বলতে পারলো না।
পার্টির দিনটা ছিল ভীষন গোলমেলে ধরনের, সকাল বেলাই সুদীপ্তা দের গাড়িটা গেলো বিগরে। তারপর সারাদিন বৃষ্টি তে পথ ঘাটের অবস্থ্যা গেলো সঙ্গীন। জয়া ওর নতুন এপার্টমেন্টে র এড্রেস টেকস্ট করে দিয়েছিল। সুদীপ্তা দেখলো জয়ার অ্যাড্রেস টা শহরের একেবারে একটি প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় অনেক ক্যাব ট্যাক্সি ড্রাইভার ওখানে যেতে পর্যন্ত রাজি হলো না। শেষে ডবল ভাড়া দিয়ে একজন যাও বা রাজি হলো সে বলল অপেক্ষা করতে পারবে না। অগ্যতা তাকে পৌঁছেই গাড়িটা ছেড়ে দিতে হলো।
জয়ার অ্যাড্রেস দেখে ঠিক জায়গা মত পৌঁছতে পৌঁছতে সুদীপ্তার সন্ধ্যে ৬.৪৫ বাজলো। তখনই ওই এলাকার রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে এসেছিল। রাস্তায় গাড়ির সংক্ষ্যাও কমে এসেছিল। সুদীপ্তা ভালো মতন বুঝতে পারলো যে এখানে বেশি দেরি করলে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি পাওয়াই কঠিন হবে। ও অ্যাপার্টমেন্টের র দরজায় এসে ডোর বেল টিপলো। ভেতর থেকে পার্টি মিউজিক এর শব্দ ভেসে আসছিলো। সাদা পোশাক পরা অ্যাটেনডেন্স দরজা খুলে সুদীপ্তা কে অভ্যথনা করলো।
তারপর দুই পা হেটে ভেতরে প্রবেশ করতেই সুদীপ্তা জয়া কে আবিষ্কার করলো। সুদীপ্তা কে দেখেই জয়া এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে হাগ করলো। সে পার্টি টা অ্যাটেন্ড করবার জন্য সুদীপ্তা কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো। সুদীপ্তা ওর মূখে মদের গন্ধ পেলো। জয়া প্রথমেই তার লিভ ইন পার্টনার ক্যাম বিজনেস পার্টনার বার্থডে বয় রাজেশ প্রসাদ গুপ্তা র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। রাজেশ গুপ্তা ও জয়ার মতন সুদীপ্তা কে উষ্ণ অভ্যথনায় ভরিয়ে দিল।
একটু বাদে কথা বার্তা বলার পর, সব অতিথিরা এসে যেতেই, ওরা সবাই মিলে উপরে টেরেসে আসলো। আসল পার্টি টা উপরের টেরেসেই হচ্ছিল। ওখানে ঢালাও খানা পিনা মিউজিক সব কিছুর ব্যাবস্থা ছিল। ক্রমে ক্রমে সুদীপ্তার মতন আদর্শবান সরল মনের এক নারীর পক্ষে পার্টির পরিবেশ টি একটু অসস্তি কর হতে শুরু করলো। পার্টিতে উপস্থিত সদস্য দের প্রত্যেকের শরীরী ভাষা, পোশাক , চলা ফেরা সব কিছুর সঙ্গে সুদীপ্তার নিজেকে ভীষন বেমানান মনে হচ্ছিল। জয়া কেও অচেনা মনে হচ্ছিল।
জয়া ওর চোখের সামনে হাসতে হাসতে দুজন পুরুষের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে fliirt করছিল। সুদীপ্তা এক কোণে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিল আর ভাবছিল, যে জয়া কে ও একটা সময় চিনত আর যে জয়া কে ও এখন দেখছে সে এক নয়। সুদীপ্তা বছর খানেক আগে একবার শুনেছিল ডিভোর্স এর পর জয়া নাকি অনেক পাল্টে গেছে। তার নতুন অনেক বন্ধু বান্ধব জুটেছে, কিন্তু সে যে নিজেকে এই ভাবে এই জায়গায় নামিয়ে এনেছে সেটা সুদীপ্তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতো না।
পার্টি তে মেয়ে পুরুষ নির্বিশেষে সবার হাতে সমানে মদের পাত্র উঠছে , সেই গ্লাস খালি হচ্ছে, সিগারেটের ধোঁয়া তে চারদিক ভরে যাচ্ছে, পার্টি তে উপস্থিত মেয়েদের পোশাকের বাঁধন, শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে আলগা হচ্ছে, নাচের সময় তারা পুরুষদের দিকে আরো বেশি বেশি করে ঢলে পড়ছে , এই ধরনের প্রাইভেট পার্টির দৃশ্য সুদীপ্তার পক্ষে বেশি ক্ষণ সহ্য করা অসম্ভব ছিল।
বার্থডে কেক কাটা হাওয়ার পর, সে হালকা স্ন্যাকস নিয়েই পার্টি ছেড়ে চলে আসতে চাইলো। জয়া তাকে তখনকার মতন আটকালো। শুধু আটকালো না জোর করে সুদীপ্তার হাতেও একটা ওয়াইন ভর্তি গ্লাস ধরিয়ে দিলো। জয়ার মতন আরো যারা ছিল তারাও এসে ড্রিঙ্কস নেওয়ার জন্য সাধা সাধি করতে লাগলো। সুদীপ্তা যতই বলবার চেষ্টা করল যে আমি ড্রিঙ্কস নি না। আমার ভালো লাগে না। ওরা কিছুতেই শুনলো না। শেষ মেষ জয়া আর তার কিছু বন্ধুর জেদের কাছে সুদীপ্তা কে হার মানতেই হলো।
কোনরকমে ঢোক গিলতে গিলতে সময় নিয়ে প্রথম গ্লাস টা শেষ করতে না করতেই জয়া সুদীপ্তার হাতে ২য় গ্লাস ধরিয়ে দিলো। ১৫ মিনিট ধরে, সুদীপ্তা শেষ করলো। অভ্যাস না থাকায় সুদীপ্তার অল্পতেই মাথা টা ভারী হয়ে উঠলো। ঐ অবস্থাতেই জয়া ওকে হাত ধরে টেনে যেখানে সবাই মিউজিকের তালে তালে নাচছিল তার মাঝখানে নিয়ে গেলো। জয়া দের হুল্লোড় আর পাগলামির মাঝে পরে বাড়ি ফেরার কথা একটু একটু করে সুদীপ্তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। কিছুক্ষন নাচার পর সে জয়া আর রাজেশ গুপ্তা দের অনুরোধে আরো দুই পেগ ড্রিঙ্কস নিলো। আস্তে আস্তে সুদীপ্তার শরীর টা মদের নেশার জন্য ঘামতে শুরু করছিল।
ড্রিঙ্কস করে সুদীপ্তার মধ্যেও একটা ফুর্তির মেজাজ এসে গেছিলো। মিউজিক আর লাইট ও একটা আলাদা মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তার মধ্যেই সুদীপ্তা কখন যে জয়া দের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে মিউজিকের তালে স্টেপ মেলাতে শুরু করেছে বুঝতেই পারলো না। একজায়গায় জড়ো হয়ে নাচবার ফলে অনেক হাত সুদীপ্তার পিঠ কাধ আর কোমরের নরম ত্বক ছুঁইয়ে দিচ্ছিল। সুদীপ্তা react করতে ভুলে গেছে।
এই ভাবে আরো আধ ঘণ্টা কাটার পর সে যখন কিছুটা ক্লান্ত হয়ে একপাশে এসে বসলো, জয়া ও রহস্য মার্কা হাসি হেসে সুদীপ্তার কাধে হাত দিয়ে তাকে সবাসি দিল। তারপর বললো, “তুমি তো বন্ধু একেবারে মাত করে দিয়েছো।” ” বেশ কয়েক জোড়া চোখ তো তোমার দিক থেকে চোখ ই ফেরাতে পাচ্ছে না,” বুঝতে পারছিস না, ঐ দেখ, সামনেই বসে একটা কিউট হ্যান্ডসাম বয়। তোমার দিকে কিভাবে ডাব ডাব করে তাকিয়ে আছে।”
— চলবে…..