আমি প্রাঞ্জল, প্রাঞ্জল বাগচী, মনে আছে আমাকে, আমার দুটো গল্প ইতোমধ্যেই এখানে প্রকাশিত। যেখানে আমার পাঠকবর্গের কাছে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ, কারণ আপনাদের এই ভালবাসার টানেই তো আবার ফিরে ফিরে আসি আবারও লিখতে বসি। বসি থেকে বরং বলা ভাল আজও বসেছি। বলতে চলেছি আমার জীবনের এখনও পর্যন্ত সবচাইতে দুঃসাহসিক কাজ আর সেটা হবে নাই বা কেন। যদি কেউ সিংহের গুহায় ঘটনাচক্রে ঢুকেও পড়ে আবার সিংহের মুখ থেকে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে সিংহটাকে শিকারও করে। বিস্তারিত? আরে বাবা বলব বলব, বলব বলেই তো লিখতে বসেছি। তবে জানেন তো আমিও না আপনাদের মতোই একজন BCK-র এক গুনমুগ্ধ পাঠক। কি অনেক হেজিয়ে ফেললাম না? ওহে পাঠকবর এবার তিষ্ঠ ক্ষণকাল! যাই হোক এবার বেশী না হেজিয়ে মূল কাহিনীতে ঢুকে পড়া যাক্ কি বলেন?
এই গল্পটা আমার এক বন্ধুর বৌদিকে নিয়ে। যাকে আমি প্রথমবার দেখেই তার প্রেমে পড়ে যাই। যাকে বলে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। যাইহোক ঘটনাটা প্রায় বছর চারেক আগের যখন আমরা বন্ধুদের নিয়ে রাত্তির হলেই আড্ডা মারতাম, তাস পেটাতাম, ক্রিকেট নিয়ে তর্ক জুড়তাম আর বলাই বাহুল্য একে–অন্যের গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে লেগ–পুলিংটাও আমাদের দৈনন্দিন অ্যাজেন্ডার একটা অংশ ছিল। এরকমই চলছিল বেশ। একদিন রাণা নামে আমাদের আরও একটা বন্ধু আমাদের গ্রুপে এসে জয়েন করল। এই ছেলেটা আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েক বছরের জন্য যাকে বলে ‘মেলে মে বিছড়ে যাওয়া ভাই…’ অনেকটা সেই রকমই। একরকমই চলতে চলতে আমরা একদিন ঠিক করলাম এবার এই রাত্তিরগুলোতে আর বসে কিছু নয় এবার একটু–আধটু গা ঘামাব আর কি! মানে অলস ভাবে বসে না থেকে একটু আউট–ডোর খেলা–ধুলো করব।
তাই একটা জায়গার খোঁজ করছিলাম যেখানে আমরা নিরিবিলিতে একটু আধটু গা–ঘামাতে পারি। হঠাৎ করে রাণা প্রস্তাব দিল ওর বাড়ীর বাঁপাশে একটা নিরিবিলি রাস্তা আছে যেখানে আমরা চাইলে খেলতে পারি। জায়গাটা ওদের নিজেদেরই। বাড়ীর লোকই শুধুমাত্র যাওয়া আসার জন্য ব্যবহার করে আর কেউ না। প্রস্তাব সাদরে গৃহীত হল। যাইহোক পরেরদিনই সদলবলে আমরা পা রাখলাম রাণাদের বাড়ীর রাস্তায়। কি খেলব? না ব্যাডমিণ্টন! যথারীতি এ প্রস্তাবও পাশ। সব কিছু সরঞ্জাম সেট করে লাগাতেই আমাদের সেদিনটা মোটামুটি ভাবে লেগে গেল। এসব যখন প্রায় শেষের দিকে তখন হঠাৎ করে একটা গাড়ীর আওয়াজ পেলাম আমরা। দেখলাম একটু দূরে একটা গাড়ী এসে থামল।
সেই সেদিনই ছিল প্রথমবার যেদিন এক উদ্ভিন্ন যৌবনা নারীকে দেখলাম যিনি কিনা গাড়ী থেকে নেমে একটা বড় ব্যাগ হাতে নিয়ে ওই চত্ত্বর দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন। ওনাকে দেখেই রাণা দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল। বুঝলাম ইনি ওর বৌদি অনন্যা। যতক্ষণ তিনি হাঁটছিলেন আমিও সেই একভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ওঁর রূপসুধা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে পান করছিলাম। এরকম তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি প্রায় ভুলেই মেরে দিয়েছিলাম সে ও–ও আমার ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। যখন আমাদের চোখাচোখি হল ও জাস্ট আমার দিকে তাকিয়ে একটা কিলার (killer) হাসি হেসে ঢুকে গেল নিজের বাড়ীতে। আর আমার বাকী বন্ধুরা যখন খেলায় মগ্ন তখন আমি ওর চলে যাওয়াটা দেখতে দেখতে ওর তানপুরায় ন্যায় পাছার দুলুনিটা উপভোগ করছি। উফ্ কি ফিগার মাইরি ঠিক যেন ৩৬–২৮–৩৬। নীচের ঠোঁটটা ঈষৎ ঝোলা যার ফলে মাঝেমধ্যে দাঁতটা কখন–সখনও বেরিয়ে যায়। হঠাৎই ও আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর কপালের ওপর নেমে আসা কয়েক গাছি চুল সরিয়ে আমার দিকে আবার একটা কিলার হাসি দিল। বিনিময়ে আমিও ওকে হাত নেড়ে আবার সেই হাসিটাই ফিরিয়ে দিলাম। সেই রাত্তিরে এক্কেবারে দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম কেন জানিনা খালি আমার মনে হচ্ছিল ওর কি আমার প্রতি কোনও ব্যথা আছে নাকি এটাও আমার একপ্রকার ছেলেমানুষী।
এসব ঘটার পর মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে আমি সেদিন রাত্তিরে বিছানায় গেলাম ঘুমতে। পরের দিন রাত্তিরে আমি যথারীতি রাণাদের বাড়ী গেলাম খেলতে। কিন্ত্ত ওখানে গিয়ে পারলাম আমার সবকটা বন্ধু আমাকে না জানিয়ে একা ফেলে রেখে গাড়ী নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে গেছে। মনে মনে সবকটাকে খিস্তি দিয়ে বাড়ীর পথ ধরতে যাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে হঠাৎ…
অনন্যা– “এই তুমি প্রাঞ্জল না… কেমন আছ?”
“আপনি… মানে তুমি… মানে আপনি… আমার নামটা জানেন?”-আমতা আমতা করে আমি বললাম।
অনন্যা– “তুমি কি ভেবেছ বলতো?, আমি আমার দেওরকে জিজ্ঞেস করব যে ওর বন্ধুদের সাথে মেশে তারা কে? কোথায় থাকে? তাদের নাম কি?”
“তবে যে ছেলেটা আমাকে কাল রাত্তিরে এত সুন্দরভাবে এত্ত পরিপাটি করে ঝাড়ি মারলো তাকে কি এত সহজে ভোলা যায়? সম্ভব বলতো আমায়?” আমার কাছে এগিয়ে এসে প্রায় কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেল ও।
কি বলব আমার তো তখন তলার বীচি গলায় চলে এসেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমতে শুরু করেছে। কোনও মতে ঢোঁকটা গিলে বললাম–
“না মানে…”
ও আমার দিকে বড় বড় চোখ করে কট মট করে খানিকক্ষণ তাকাল তারপরে ফিক্ করে হেসে বলল–
“তুমি কি ভাবলে যে আমি ভীষণ রেগে গেছি… আমার চাউনিটা না ওরকমই… আমরা এ বাড়ীর লোকগুলো না অতটা খারাপ নই বুঝলে… অতটা খারাপ নই…”
অনন্যা– “থাক আর আপনি–আজ্ঞে তে কাজ নেই তুমি আমাকে বরং তুমি বলেই ডাকবে কারণ আমরা মনে হয় সেম এজ…”
আমি-“ঠিক আছে…”
আমরা দুজনেই এবার হাসিতে ফেটে পড়লাম। এবার অনন্যার কাছে ভালমানুষ সাজতে গিয়ে বললাম–
আমি– “না মানে আ–মানে আমি খুবই লজ্জিত কালকে আপনাকে মানে তোমাকে ওরকম ভাবে অপ্রস্ত্ততে ফেলার জন্য…”
অনন্যা-“বেশ তোমার যদি মনে হয়েই থাকে আমি কালকে তোমার জন্য অপ্রস্ত্ততে পড়েছিলাম তাহলে তোমায় প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি যা বলব তাই করতে হবে কিন্ত্ত?… কি রাজী তো?”
কথাটা শুনে না আমি পুরো দিশাহারা হয়ে গেলাম ঠিক বুঝতে পারছি না ও আবার রেগে গেল নাতো? নাকি ওর মাথায় আমার জন্য অন্য কিছু প্ল্যান ঘুরছে?
আমি শুধু মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ওর সাথে বাড়ীর ভেতরে ঢুকলাম। ওর বাড়ীটা ওর মতোই সুন্দর বেশ সাজানো গোছানো। আমাকে সোফায় বসতে বলে ও ভেতরে গেল আমাদের জন্য কিছু জলখাবারের ব্যবস্থা করতে। জলখাবার নিয়ে ও ফিরে এল। আমরা এখন দুজনে সোফাটার দুপ্রান্তে বসে আছি। আমি এমন ভাবে বসে থাকার চেষ্টা করছি যাতে যতটা সম্ভব ওর সাথে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে থাকা যায়। যাতে আমি ওর সম্পর্কে কি ভাবছি সেটা ও আন্দাজ করতে পারেন। সারা ঘরটা যেন কেমন একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে যাতে একটা পিন পড়লেও শব্দ পাওয়া যায় শুধুমাত্র আমাদের খাওয়া–দাওয়ার মুচমুচে শব্দটা বাদ দিয়ে। অবশেষে অনন্যাই মুখ খুলল–
“কালকে রাত্তিরে তো এমন হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়েছিলে আমি তো দেখে ভাবলাম কি–না–কি? কিন্ত্ত আজ তো দেখছি আমার সামনে এক্কেবারে চোখ তুলে তাকাতেই পারছনা ব্যাপারটা কি বলত?”
“আমি তো তার জন্য সরি বলেছি নাকি? আচ্ছা, দাদাকে দেখছি না তো? উনি কি এখানে থাকেন না? আমি বললাম।
অনন্যা– “উনি খুবই ব্যস্ত মানুষ গো… বেশীরভাগ সময়ই ট্যুরে থাকেন। আমরা যে এত সচ্ছ্বলতার সাথে রয়েছি সে সব ওঁর–ই বদান্যতায়…”
কথাটা শুনে আমরা দুজনেই খুব হাসতে থাকলাম। কেন জানিনা অনন্যা ঠায় আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। বেশ বুঝতে পারছি ঈশান কোনে মেঘের আনাগোনা। এরপরে যেটা হল সেটার জন্য আমি ঠিক তৈরী ছিলাম না।
অনন্যা– “কালকে রাত্তিরে নির্ঘাত আমাকে নিয়েই স্বপ্নে বিভোর ছিলে… তা কবার হাত মেরেছ?… সত্যি করে বল…”