ধারাবাহিক বাংলা চটি – পর্ব ৮ – ভাগ ১
দেবায়ন চুপ করে নিচের বসার ঘরে বসে একটা সিগারেট জ্বালায়। আগামী কাল মা চলে যাবে অফিস টুরে, ঠিক তার মুখে মুখে এই রকম এক কান্ড ঘটে গেল। ওদিকে অনুপমা আর অঙ্কনের মানসিক অবস্থা কি রকমের জানা গেল না। গতকাল রাতে যখন মা ফোন করেছিল তখন অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। পারমিতা উপরে নিজের ঘরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মনে হয়না এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গবে পারমিতার। মিস্টার সেন বাড়ি পৌঁছালে একটা তুমুল যুদ্ধ অবশ্যাম্ভাবি।
সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ মায়ের ফোন এল, “হ্যাঁরে, ঘুম থেকে উঠেছিস?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, বেশ কিছু আগে উঠেছি।”
দেবশ্রী, “পারমিতা কি ঘুমাচ্ছে?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, কাকিমা ঘুমাচ্ছে। রাতে বমি টমি করে একাকার করেছে। অনুপমার কি খবর? কেমন আছে?”
দেবশ্রী, “হ্যাঁরে, এদের কি ব্যাপার বলত?”
দেবায়ন, “কেন?”
দেবশ্রী, “সারা রাত মেয়েটা চোখের পাতা এক করেনি, আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে গেছে। বারেবারে শুধু এক কথা, কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না। কিছুতেই বাবা মায়ের মুখ দেখবে না।”
এই সকল কারন দেবায়নের অজানা নয়। চুপ করে বসে থাকে, মায়ের কথার উত্তর দেবার মতন শক্তি নেই ওর কাছে। কি করে মিস্টার সেনের আর মিসেস সেনের ব্যাভিচারের কথা মাকে জানাবে। অনুপমার হৃদয়ের বেদনা শুনে ভেতরটা কেঁদে ওঠে দেবায়নের। গত রাতের সম্ভোগ, সহবাসের চিন্তা মাথা থেকে দূর করে ভাবতে বসে দেবায়ন। কিছু একটা বিহিত করতে হবে না হলে একদিকে যেমন পারমিতা নিজের পাপের জ্বালায় জ্বলছে, তেমনি অন্যদিকে অনুপমা বাবা মায়ের মুখ দেখতে চাইছে না। এর মাঝে ছোটো অঙ্কন, জীবনের বড় সত্য জানেনা। দেবায়ন ভাবে ওকে আসল সত্য না জানানো শ্রেয়।
দেবায়ন কে চুপ থাকতে দেখে দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছিস এত?”
বুক ভরে শ্বাস নেয় দেবায়ন, “কাল রাতে মিস্টার সেন বাড়ি ফেরেন নি। আজ সকালে ফিরবে, তারপরে কিছু একটা বিহিত করতে হবে। অনু কি করছে?”
দেবশ্রী, “অঙ্কন ত রাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু অনু এই মাত্র ঘুমাতে গেছে।”
দেবায়ন, “তুমি ওদের বাড়িতেই রেখে দাও। যখন আনতে বলব তখন এখানে আনবে।”
দেবশ্রী আঁতকে ওঠে, “মানে, তুই ওদের পারিবারিক ব্যাপারে কেন নাক গলাতে যাচ্ছিস?”
দেবায়ন গম্ভির স্বরে উত্তর দেয়, “মা, তোমার ঘরে যে মেয়েটা আছে, সে তোমার হবু বউমা। তার বাড়িতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সেই আগুন তোমার ঘরে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হবে না। আমি শুধু চাইছি কি করে সেই আগুন জ্বলে ওঠার আগেই নিভিয়ে দেওয়া যায়।”
দেবশ্রী চিন্তিত হয়ে পড়ে, “কি করছিস আমি জানি না। তুই বড় হয়ে গেছিস একটু ভেবে চিন্তে পা ফেলিস বাবা। এই দাড়া অনু উঠে গেছে। ফোন চাইছে, একটু কথা বল।”
অনুপমা ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞেস করে, “কি করছিস তুই ওই বাড়িতে? চলে আয় ওখান থেকে। আমি আর ভাই ওই বাড়িতে আর পা রাখব না।”
দেবায়ন, “শোন পুচ্চি, আমি কথা দিচ্ছি আমি সব ঠিক করে দেব।”
অনুপমা কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে ওঠে, “কি ঠিক করে দিবি তুই? কত বছর ধরে এই সব চলছে জানি না, তুই একদিনে কি ঠিক করে দিবি?”
দেবায়ন, “তুই বাড়ি ফিরে আয়। আমি বলছি আমি সব ঠিক করে দেব।”
অনুপমা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “তুই যদি আমাকে দেখতে না পারিস তাহলে বলে দে। আমি ভাইকে নিয়ে গঙ্গায় ডুবে মরব, কিন্তু ওই বাড়িতে যাব না।”
দেবশ্রী অনুপমার কথা শুনে আহত হয়ে যায়। অনুপমার গালে একটা চড় কষিয়ে বলে, “আর যদি কোনদিন মরার কথা বলেছিস।”
অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তোমার চড়েও অনেক ভালোবাসা আছে কাকিমা। আমি তোমার সাথে দিল্লী যাবো। তুমি যেখানে থাকবে আমি সেখানে থাকব।”
দেবশ্রী দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি করব রে, কিছুই মাথায় আসছে না।”
দেবায়ন মাকে বলে, “এক কাজ কর, তুমি অনুপমাকে কোন রকমে একটা কাপড় পড়িয়ে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে পন্ডিতিয়া পাঠাও।”
অনুপমা, “কেন যাব ওই বাড়িতে, একবার বল।”
দেবায়ন ধমক দেয়, “একবার আমার কথা শোন, এখানে চলে আয়। অঙ্কন মায়ের কাছে থাক। এখানে এসে এই সব ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে না ওকে। অনেক কথা ওর অজানা, সেইগুলো অজানা থাকা ভালো। তুই আর আমি অনেক কিছু দেখে ফেলেছি। আমরা কথা বলব তোর বাবা আর মায়ের সাথে। তুই চলে আয়।”
অনুপমা ধরা গলায় বলে, “তোকে বিশ্বাস করে আমি বাড়ি যাচ্ছি, পুচ্চু। দয়া করে আমার বিশ্বাস ভাঙ্গিস না, আমি মরে যাব।”
দেবায়ন, “সব ঠিক হয়ে যাবে তুই চলে আয় ট্যাক্সি ধরে।”
দেবায়ন ফোন রেখে দেবার পরে চুপ করে বসে থাকে। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, একবার মিস্টার সেনকে ফোন করে দেখলে হয় কোথায় আছে। বাড়ির চাকর, মালতি আর ছন্দা চলে আসে। একজন ঘরের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে অন্যজন রান্না ঘরে ঢুকে পরে। সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু মিস্টার সেনের দেখা নেই। এমন সময়ে একজন চাকর এসে বলে যে ওপরে মেমসাহেব দেবায়ন কে ডেকে পাঠিয়েছে।
দেবায়ন উপরে উঠে পারমিতার ঘরে ঢোকে। পারমিতা বুক পর্যন্ত চাদরে ঢেকে বিছানার উপরে আধাশোয়া। চুল এলোমেলো, চোখে মুখের ক্লান্তির ছাপ আর নেই, মুখ দেখে মনে হল অনেক দিন পরে আরাম করে ঘুমাতে পেরেছে পারমিতা। ফর্সা গাল দুটি লালচে হয়ে আছে, অনাবৃত কাঁধ, উপরি বক্ষে গত রাতের কামক্রীড়ার ছোপ ছোপ দাগ। দেবায়ন কে দেখে মিষ্টি হাসে পারমিতা। দেবায়ন বিছানায় পারমিতার পাশে বসে গালে হাত দেয়। পারমিতা সুন্দরী প্রেয়সীর মতন দেবায়নের উষ্ণ হাত গালের ওপরে চেপে ধরে।
দেবায়ন পারমিতার নরম গালে আদর করে বলে, “উঠে জামা কাপড় পরে নাও মিমি। মিস্টার সেনকে একবার খবর দাও।”
পারমিতা, “অঙ্কন আর অনু কি বাড়ি ফিরেছে?”
দেবায়ন, “না এখন আসে নি। অনু বাড়ির জন্য রওনা দিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। অঙ্কনকে আমি মায়ের কাছে রেখে দিয়েছি।”
পারমিতা, “কেন?”
দেবায়ন, “মিমি, তোমার আর মিস্টার সেনের সাথে কথা আছে।”
পারমিতা ভুরু কুঁচকে তাকায় দেবায়নের দিকে, “কি কথা?”
দেবায়ন বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে বলে, “মিমি, অনু কাল সারা রাত কেঁদেছে। এই বাড়িতে পা রাখবে না বলে জেদ ধরে আছে।”
ভোরের ফুল ফোটার আগেই তাতে বৃষ্টির ছাট লেগে যায়, ধরা গলায় ঝাপসা চোখে পারমিতা দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কেন মরতে আমি এইসব করতে গেলাম জানিনা। এখন ছেলে মেয়ে দুজনেই আমাকে পাপী বলবে।”
দেবায়ন পারমিতার কপালে চুমু খেয়ে বলে, “আমি সব ঠিক করে দেব, মিমি।”
পারমিতা দেবায়নের জামার সামনের দিক শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে, “এত বছরের পাপ একদিনে কি করে মুছে দেবে তুমি?”
দেবায়ন, “চেষ্টা করব, তবে তোমাকে একটা কথা দিতে হবে।”
পারমিতা, “কি?”
দেবায়ন, “আমি যা করতে বলব সেটা তোমাকে করতে হবে, মিমি।”
পারমিতা মাথা নিচু করে উত্তর দেয়, “শেষ পর্যন্ত তুমিও আমার শুধু দেহ টাকেই ভোগের বস্তু হিসাবে দেখলে? রাতে তোমার …”
দেবায়ন পারমিতার ঠোঁটের ওপরে হাত দিয়ে চেপে বলে, “না মিমি না। আমি আমার জন্য তোমাকে চাই না, আমি তোমার জন্য তোমাকে চাই। অনু আর অঙ্কনের জন্য তোমাকে ফিরাতে চাই।”
পারমিতা হাঁ করে থাকিয়ে থাকে দেবায়নের মুখের দিকে। আলতো মাথা নাড়ায় দেবায়ন, আসস্থ করে পারমিতাকে। পারমিতা দেবায়ন কে বলে, “জানি না তোমার মাথায় কি আছে, তবে তোমার গলার স্বরে এক দৃঢ় প্রত্যয়ের সুর বেজে উঠেছে। আমার মেয়ে যদি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারে তাহলে আমিও করতে পারি। তুমি আমাকে বিষ দিলেও আমি খেয়ে নেব, হ্যান্ডসাম।”
দেবায়ন হেসে বলে, “এমন মিষ্টি মিমিকে বিষ দিলে মুশকিল আছে। চল চল, লক্ষ্মী মেয়ের মতন উঠে কাপড় পরে নাও।”
দেবায়ন পারমিতার ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে দেখে যে মিস্টার সেন বাড়িতে ঢুকছেন। মিস্টার সেনকে দেখে দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। মিস্টার সেন স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করাতে উত্তরে জানায় যে উপরে নিজের ঘরে আছে মিসেস সেন। মিস্টার সেনের চেহারা দেখে মনের ভাব বোঝার উপায় নেই। মিস্টার সেন বসার ঘরের কোনায় রাখা ক্যাবিনেট থেকে একটা কাট গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে দেবায়নের সামনে বসে। দেবায়নের দিকে তাকিয়ে হাতের তালুর মাঝে কাট গ্লাস ঘুরায়। দেবায়নের মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। কথার প্যাঁচে, অথবা চেপে ধরতে হবে মিস্টার সেনকে। এত সহজে এই মানুষ দম্বার পাত্র নয়। যে টাকার লোভে নিজের স্ত্রীকে বেচে দিতে পিছপা হয় না, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রমান দরকার। সেই প্রমান হাতে নেই তবে এই কথোপকথন ভবিষ্যতের প্রমানের জন্য রেকর্ড করে রাখতে চায়। দেবায়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইলের কথা রেকর্ড করার বোতাম টিপে দেয়। ।
দেবায়ন ঠাণ্ডা গলায় মিস্টার সেনকে বলে, “কাকু, আপনার সাথে একটু কথা আছে।”
মিস্টার সেন, “বল, কি কথা।”
দেবায়ন, “অনু সারা রাত কেঁদেছে, অনু এই বাড়িতে আসতে চাইছে না।”
মিস্টার সেন কড়া চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে গম্ভির স্বরে বলে, “আমার মেয়ে, আমি বুঝে নেব। এবারে তুমি যেতে পার। আমি এসে গেছি। বাকিটা আমি দেখে নেব।”
“ও যাবে না এই বাড়ি থেকে।” চেঁচিয়ে ওঠে অনুপমা। মিস্টার সেন অথবা দেবায়নের খেয়াল ছিলনা, যে দরজা খোলা আর অনুপমা বাড়ি পৌঁছে গেছে।
মিস্টার সেন মেয়ের মুখে ওই কথা শুনে একটু রেগে গিয়ে অনুপমাকে বলে, “তুমি নিজের ঘরে যাও, অনু।”
অনুপমা, “কেন আমি উপরে যাব? আমি এখানে থাকব।”
মিস্টার সেন কড়া সুরে মেয়েকে আদেশ দেন, “যেটা বলা হচ্ছে, সেটা শোনো।”
অনুপমা দেবায়নের পাশে এসে হাত ধরে দাঁড়ায়। বাবার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, “এত কিছু করার পরে তোমার এত গলার জোর? এর পরে মেয়েকে বাজারে নামাতে, তাইত।”
মিস্টার সেন অনুপমার দিকে হাত উঠিয়ে চেঁচিয়ে বলে, “তোর এত বড় সাহস যে তুই নিজের বাবাকে অপমান করলি।”
দেবায়ন মিস্টার সেনের হাত ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে দিয়ে বলে, “মিস্টার সেন, কাউকে মারার আগে একবার নিজের দিক দেখে নিলে বড় ভালো হয়।”
মিস্টার সেন হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে, কিন্তু দেবায়নের গায়ে অসুরের শক্তি। চোখ মুখ রেগে লাল হয়ে গেছে মিস্টার সেনের। দেবায়নের দিকে চেঁচিয়ে বলেন, “তুমি কেন আমাদের বাড়ির কথার মধ্যে আসছ? তুমি কি ভেবেছ, আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি? তুমি আমার মেয়ের সাথে প্রেম করেছ এই টাকা পয়সা সম্পত্তি দেখে। তুমি জানতে যে এই সম্পত্তির অর্ধেক তোমার জন্য অনেক, তাই তুমি অনুপমাকে প্রেমের ছলনায় ভুলিয়ে বশ করেছ। বল তোমার কত টাকা চাই, আমি ব্ল্যাঙ্ক চেক কেটে দেব।”
দেবায়ন সেই কথা শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারে না, কড়া গলায় বলে, “আপনি যদি অনুপমার বাবা না হয়ে অন্য কেউ হতেন, তাহলে এখানে এর জবাব আমি দিয়ে দিতাম।”
অনুপমা মিস্টার সেনকে বলে, “তুমি নিজে ইতর তাই তোমার চোখে সারা পৃথিবী ইতর। তোমার সাথে কথা বলতে ঘেন্না করে আমার। তুমি কি না আমার ভালোবাসা কে অপমান করলে? দেবায়নের যদি আমার টাকার দিকে নজর হত, তাহলে এতদিনে তোমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স অর্ধেক করে দিতাম আমি।”
চেঁচামেচি শুনে ওপর থেকে পারমিতা নিচে নেমে আসে। অনুপমা মায়ের দিকে ঘৃণা ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে দেবায়নের পাস ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকে। পারমিতা মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে বলে, “সকাল সকাল এত চেঁচামেচি করছ কেন? ওহ সবাই এসে গেছে।”
মিস্টার সেন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার আস্কারা পেয়ে তোমার মেয়ে আজ আমাকে অপমান করল আর তুমি জিজ্ঞেস করছ চেঁচামেচি করছ কেন?”
পারমিতা মিস্টার সেনের উলটো দিকের একটা সোফার ওপরে বসে বলে, “নিজের ছেলে মেয়েকে কতটুকু দেখছ তুমি? অপমান তার হয় যার একটু খানি মান সন্মান বেঁচে থাকে। তুমি নিজের মান সন্মানের সাথে আমাকে বেচে খেয়েছ।”
অনুপমা দুই হাতে মুখ ঢেকে সোফার ওপরে বসে পরে। ধরা গলায় চেঁচিয়ে বলে, “আমি থাকতে চাই না এই বাড়িতে, দেবু।”
পারমিতা ঝাপসা চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কিছু বলবে বলছিলে, বল।”
মিস্টার সেন আহত গলায় বলে, “আমি যা কিছু করেছি তোমাদের জন্য করেছি। এই সম্পত্তি গাড়ি বাড়ি সব তোদের জন্য।”
দেবায়ন চুপ করে অনুপমার পাশে বসে জড়িয়ে ধরে। অনুপমা চোখের জল মুছে মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি অথবা ভাই তোমাকে এই সব করতে বলিনি, এই সব ভাইয়ের জন্মের আগে থেকে চলছে। আমাদের নামে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করবেনা একদম। একটা ছোটো বাচ্চা মেয়ে আর দুধের ছেলে, কি তোমার কাছে গাড়ি বাড়ির আব্দার করবে না খেলনার আব্দার করবে? তুমি কতটা আমাদের দিকে দেখ? তুমি কি জানো ভাই ক্লাসে কত মার্ক্স নিয়ে পাস করেছে? তুমি জানো আমি গত বছর কত মার্কস পেয়েছি? জানো না, জানতে চাও নি কোনদিন। তুমি নিজের অফিস, টাকা পয়সা, আর কি নিয়ে ব্যাস্ত থাক জানি না। এই সব নিজেদের জন্য করেছ তোমরা, নিজেরা ভোগ করতে পার তাই করেছ।” পারমিতার দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে বলে, “তুমি কাকিমার সামনে যা করলে, আমি সেইখানে লুকিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যেতাম। তোমার’ত লজ্জা নেই, অপমান বোধ নেই, কতদিন আগে লজ্জার মাথা খেয়েছ জানিনা। তোমাকে কিছু বলার নেই আমার।” পারমিতার মুখ লাল হয়ে যায় মেয়ের মুখে এই কথা শুনে। চোখে জল, কান লাল, উত্তর দেবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে পারমিতা।
দেবায়ন অনুপমাকে আলতো ধমক দিয়ে বলে, “চুপ অনু।” দেবায়ন অনুপমার হাত ধরে চুপ করিয়ে পারমিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “কাকিমা আমি একটা কথা বলি।” মিস্টার সেন আর পারমিতা দুজনে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে। দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে মিস্টার সেনের চোখে চোখ রেখে বলে, “কন্সট্রাক্সান কম্পানি বিক্রি করে দাও। যত তাড়াতাড়ি পার বিক্রি করে দাও।” পারমিতা আর মিস্টার সেন দুই জনেই দেবায়নের বক্তব্য শুনে হতবাক হয়ে যায়। দেবায়ন, “সব কিছুর মূল ওই কন্সট্রাক্সন কম্পানি।”
অনুপমা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে দেবায়নের দিকে, “কম্পানি? কিসের কম্পানি? কার কম্পানি?” পারমিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিসের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির কথা বলছে দেবায়ন?” পারমিতার মুখ পাপের ভারে রক্ত শূন্য হয়ে যায়। মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকে, মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দেবার ভাষা খোঁজে।
দেবায়ন একবার মিস্টার সেনের দিকে তাকায় একবার পারমিতার দিকে তাকায়। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে মিস্টার সেন উত্তর দেয়, “সেটা অসম্ভব, সেটা হতে পারে না। আত্মীয় সজ্জন, সোসাইটির লোকজন কি বলবে? জানো ওই কোম্পানির জন্য কত কাঠ খড় পুড়াতে হয়েছে? তুমি এই সেদিনের ছেলে তুমি কি জানবে আমাদের মতন স্ট্যাটাসের লোকেদের কথা।”
অনুপমা দৃঢ় স্বরে মিস্টার সেনকে বলে, “আমি শেষবার বলছি, আমার সামনে দেবায়ন কে এই রকম করে বলবে না”
দেবায়ন গম্ভির গলায় বলে, “আপনার কাছে আপনার স্ত্রী, আপনার মেয়ে, আপনার ছেলের চেয়ে টাকা বড়।” চিবিয়ে চিবিয়ে “সেটা স্বাভাবিক আপনার মতন তথাকথিত উচ্চবিত্ত ইতর মনভাবের মানুষের।”
মিস্টার সেন গর্জে ওঠে, “তুমি আমাকে ইতর বললে। এত বড় সাহস তোমার।”
পারমিতা মিস্টার সেনের দিকে চেঁচিয়ে বলে, “থাম, দেবায়ন যা বলেছে সেটাই আমি করব। ও বলেছে কন্সট্রাকশান কম্পানি বিক্রি করে দিতে, আমি সেটাই করব।”
মিস্টার সেন মাথা নিচু করে বসে থাকেন। রাগে, বিতৃষ্ণায়, ঘৃণায় শরীর কাঁপতে শুরু করে দেয় মিস্টার সেনের। স্ত্রী, কন্যের সামনে কোন ঠাসা হয়ে গেছেন। বসার ঘরের কোনায় মিনি বারের পা বাড়ান মিস্টার সেন। দেবায়ন গম্ভির গলায় আদেশ দেয়, “চুপচাপ বসে পড়েন, কোথাও যাবার চেষ্টা করবেন না। আপনার সাথে আরও কথা আছে।”
দেবায়নের হুঙ্কার শুনে সোফার ওপরে ধুপ করে বসে পরে মিস্টার সেন। পারমিতা দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা দেবায়নের পেছন থেকে জাম খামচে ধরে থাকে। এই সব বাকবিতন্ড ওকে যেন পুড়িয়ে মারছে।
দেবায়ন পারমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে তারপরে মিস্টার সেন কে বলে, “আপনাকে জিএম পোষ্ট থেকে রিজাইন দিতে হবে। ওই অফিস থেকে রিজাইন দিতে হবে। নিজের কলিগ সার্কেল বদলে ফেলতে হবে।”
চিৎকার করে ওঠে মিস্টার সেন, “না, সেটা হতে পারে না। আমার মান সন্মান সব কিছু জড়িত।”
রাগে উত্তেজনায়, অনুপমার নখ বসে যায় দেবায়নের পিঠের ওপরে। দেবায়ন অনুপমার হাত ধরে শান্ত করায়। দেবায়ন মিস্টার সেনের দিকে তির্যক হেসে বলে, “জানা আছে আপনি কোন মান সন্মান দিয়ে ওই জিএম পদ পেয়েছেন।” দেবায়ন পারমিতার দিকে তাকিয়ে দেখে যে পারমিতা কেঁদে চলেছে। মিস্টার সেনকে বলে, “আমি আপনাকে অনুরোধ করছি না।”
মিস্টার সেন দেবায়নের দিকে শ্যেন দৃষ্টি হেনে বলে, “তুমি পাগল নাকি? কি করে ভাবলে, তুমি যা বলবে সেটা আমি শুনব। তোমার কথা শুনে কেন করতে যাব? তুমি জানো আমার এক ফোনে তোমাকে পুলিস এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে লকআপে পুরে দিতে পারে।”
দেবায়ন বলে, “সেটা ভালো করে জানি আপনি কি করতে পারেন। সেই ভয় যদি আমার থাকত তাহলে আমি আপনার সামনে দাঁড়াতাম না, চুপ করে চলে যেতাম। কেন আছি জানেন? শুধু মাত্র অনুর জন্য।”
পারমিতা মিস্টার সেনের দিকে চোয়াল শক্ত করে বলে, “ভুলেও কিছু উলটো পাল্টা পদক্ষেপ নেবার কথা চিন্তা করবে না।” স্ত্রীর গলার কঠিন স্বর শুনে মাথা নিচু করে থাকে মিস্টার সেন।
অনুপমা দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি কম্পানি? কার কম্পানি?”
দেবায়ন মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার মেয়ে আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছে। উত্তর আপনি দেবেন না আমি দেব।”
পারমিতা হাত জোর করে দেবায়নের দিকে ইশারায় জানায় যে কথা না জানাতে। দেবায়ন দাঁত পিষে পারমিতার দিকে তাকিয়ে কাছে বসতে বলে। এক পাশে অনুপমা অন্য পাশে পারমিতা, সামনে মিস্টার সেন বসে। দেবায়ন পারমিতাকে বলে, “একবার জীবনে সত্যি কথা বল কাকিমা। দেখবে ভালো লাগবে।”
পারমিতা মাথা নিচু করে বলে, “আমার নামে একটা কস্ট্রাকশান কম্পানি আছে।” মিস্টার সেন চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে। পারমিতা বলে, “সেই কন্সট্রাশান কম্পানি তোর জেঠুর ছিল। জেঠু মারা যাবার আগে সেই কম্পানি আমার নামে লিখে দেয়। সেই কোম্পানির কথা তোদের জানাইনি কেননা সেই কোম্পানির সব কিছুই কালো, সব কিছুর মধ্যে আমার শরীরের প্রতি ইঞ্চি বিক্রি করে আয় করা।” নিচু গলায় বলে, “পুরো কম্পানিটাই আমার দেহের ওপরে দাঁড়িয়ে।”
মিস্টার সেন চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে বসে থাকেন। অনুপমা দুই হাতে কান বন্ধ করে দেবায়নের কাঁধে মাথা পিটিয়ে, কেঁদে ওঠে, “আমি আর সহ্য করতে পারছি না, আমাকে একটু বিষ দিতে পারিস।”
অনুপমাকে বাম হাতে জড়িয়ে বুকের কাছে চেপে ধরে দেবায়ন, “পুচ্চি, তুই উপরে যা। সারা রাত ঘুমাস নি, নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নে।”
অনুপমা, “আমার ঘুম উড়ে গেছে। এত সব দেখে আর শুনে, এখানে আর এক মিনিট থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে কোথাও নিয়ে চল, প্লিস।”
দেবায়ন কড়া সুরে অনুপমাকে আদেশ দেয়, “পুচ্চি, তোকে যেটা বলা হয়েছে সেটা কর। তুই উপরে যা, সময় হলে ডাক দেওয়া হবে।” অনুপমা ধমক খেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে অনিচ্ছা সত্তেও ওদের ছেড়ে উপরে উঠে যায়।
অনুপমা চলে যাওয়ার পরে পারমিতা মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাকে নিঙরে অনেক কিছু করেছ, একবার ভেবেছিলাম যে এই রকম হয়ত চলতেই থাকবে। আমি তোমার হাই সোসাইটির হোড় হয়ে থাকব।”
মিস্টার সেন পারমিতাকে বলে, “কে বাঁদি? তোমার কথায় সবাই ওঠে বসে। বাড়িতে কেউ কি আমার কথা শোনে?”
পারমিতা, “খাও ত আমার পয়সায়। এই বাড়ির সবকিছু আমার পয়সায়, ওই চাকরি তে জিএম হয়েছ আমার জন্য। কত ক্লায়েন্ট যোগাড় করে দিয়েছি, সব আমার জন্য। যখন যেতে বলেছিলে বউকে তখন মনে ছিল না যে কি হতে পারে এর ভবিষ্যৎ?”
মিস্টার সেন, “তুমি নিজের ইচ্ছেতে গেছ, মিতা। তোমাকে এই টাকা আর সম্পত্তির লোভে টেনেছে।”
তির্যক হাসে পারমিতা, “হ্যাঁ টেনেছে, সেটা কে ভরেছিল আমার মধ্যে? তোমার বলতে লজ্জা করল না একবারের জন্য। নিজের বউকে নিজের দাদার কাছে পাঠাতে তোমার গায়ে বাঁধেনি। সম্পত্তির লোভ আর সেক্সের লোভে আমি হারিয়ে গেছি, সোমেশ।”
দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়, ওদের কথাবার্তা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন কেউ ওর মাথায় গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। ভাগ্যিস অনুপমাকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছিল, না হলে এখানেই হয়ত মরে যেত বেচারি।
দেবায়ন মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আরও একটা কথা আমার জানার আছে?”
পারমিতা জিজ্ঞেস করে, “কি?”
অসমাপ্ত