বাংলা চটি সাহিত্য দ্বিতীয় পর্ব
যে কোনো বাচ্চারই বেড়ে ওঠার সময়, তার মা-বাবা, দুজনারই স্বভাব-চরিত্র, জীবনশৈলী ইত্যাদি ভীষণভাবে তার জীবনকে প্রভাবিত করে। আমার বাবার কথা যখন এত বিশদভাবে বললাম, তখন আমার মায়ের কথাও কিছু বলা উচিত। আমার মা, বাবার একদমই বিপরীত প্রকৃতির। বাবা যেমন ধীর, স্থির, গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, মা তেমনই উচ্ছল, প্রাণবন্ত, হাসিখুশী, হাল্কা স্বভাবের মহিলা।
আমার মাকে খুবই সুন্দর দেখতে, ফর্সা ফর্সা বার্বি ডলের মতো। বাবার গায়ের রঙ কালো বলে, মা একদমই রাজী ছিলেন না এই বিয়েতে। কিন্তু আরেক আদর্শবাদী আমার স্কুলমাষ্টার দাদু (মায়ের বাবা), তার নিজের স্টুডেন্ট, সৎ, আদর্শবাদী স্কুলমাষ্টার পাত্রের সঙ্গেই নিজের ফুটফুটে মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেন। আজ থেকে দু’দশক আগে, আমাদের ছোট্ট টাউনে, মনের ব্যাথা বুকেই চেপে রেখে, মেয়েদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হতো।
আমার মায়ের পছন্দের মানুষ লালুমামা। এই লালুমামা টাউনের বড় ব্যবসায়ী কেদার সাহার একমাত্র সন্তান। গোলগাল, মাকাল ফলের মতো দেখতে লালুমামাই আমার মায়ের জীবনে প্রথম এবং একমাত্র প্রেমিক। শুনেছি কেদার সাহা নিজে লালুমামার সম্বন্ধ নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন।
লালুমামার বাবা তাকে দরজা থেকেই বিদায় করে দিয়েছিলেন। আজ আমার মায়ের বয়স প্রায় পয়তাল্লিশ এবং লালুমামা পঞ্চাশোর্ধ; আজ অবধি তাদের প্রেম অটুট আছে। মায়ের বিয়ের প্রায় সাত-আট বছর বাদে মৃত্যুশয্যায় শায়িতা মায়ের কথা রাখতে লালুমামা বিয়ে করেন, পরপর দু’টি বাচ্চাও হয়; কিন্তু আজও মা এবং লালুমামার ভালবাসা এতটুকু কমে নি।
আমার বাবার ডেলি রুটিন ছিল সকাল সাতটার মধ্যে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যাওয়া, দুপুরে কোনোদিনও খেতে বাড়ি ফিরতেন, অধিকাংশ দিনই ফিরতেন না, স্কুল-পার্টির কাজ-মিটিং-মিছিল সেরে রাত এগারোটার আগে বেশীরভাগ দিনই ফিরতে পারতেন না। রবিবারেও সাধারনতঃ এর ব্যতিক্রম হতো না। এই বিরাট অবসরে মায়ের সঙ্গী লালুমামা।
আটটা-সাড়ে আটটা বাজতে না বাজতেই তার হাজিরা পড়ে যেতো আমাদের বাড়ীতে। এরপর আমাদের দোকান-বাজার করা, আমাকে স্কুল-বাসে পৌঁছে দেওয়া, স্কুল-বাস থেকে নিয়ে আসা, ঠাকুমাকে ডাক্তার দেখানো, ওষুধ এনে দেওয়া, কোনো কোনো দিন আমাকে আর মাকে বিকালে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, অর্থাৎ সংসারে একজন পুরুষের যা যা দায়িত্ব থাকে, সবই হাসি মুখে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন লালুমামা।
বাবার আমলের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাটা, বিশ্বাসী কর্মচারীদের হাতে তুলে দিয়ে, রাতদিন-সাতদিন মায়ের খিদমত করাই ছিল লালুমামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মা-ও খুব স্বাভাবিক ভাবে এই সেবা গ্রহণ করতেন; যেন এটা তার প্রাপ্য। লালুমামার সঙ্গে ময়ের সম্পর্কটা অনেকটা ছিল রানী এবং তার ক্রীতদাসের মতো।
বাড়ীতে লালুমামাই যেন ছিলেন প্রধান পুরুষ আর আমার বাবা থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার। বাবা যেন বাড়ীর অতিথি, শুধু রাত্তিরে ঘন্টা ছ’য়েকের জন্য শুতে আসা। তাও আবার মাঝে মাঝেই পার্টির কাজে এখানে-ওখানে যেতেন বাবা। তখন অনেকদিন রাতেও থেকে যেতেন লালুমামা। আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম, কেন লালুমামা মায়ের কেনা গোলামের মতো আচরণ করেন?
লালুমামার স্ত্রী আমার মায়ের থেকে মোটেও কম সুন্দরী নন, মায়ের থেকে বয়সও কম। তাহলে কেন লালুমামা তাকে ছেড়ে আমার মায়ের পেছনে ঘুরতেন। পুরুষ না কি বহুগামী, এক নারীতে মন ভরে না। আর্থিক দিক থেকে লালুমামার অবস্থান, আমাদের অনেকটাই উপরে। তিনি ইচ্ছা করলেই এক বা একাধিক রক্ষিতা রাখতে পারতেন। তাহলে কি এটাই সত্যি যে, মানুষ যাকে পায় না, তাকেই জেতার তার এক তীব্র আকর্ষণ থাকে।
“সে-যে চমকে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা,
সে-যে নাগাল পেলে, পালায় ঠেলে, লাগায় চোখে ধাঁদা,
আমি ছুটব পিছে, মিছে মিছে পাই বা নাহি পাই –“
মায়ের মনঃস্তত্ত্বটা আমি বুঝতেই পারতাম। একদিকে স্বামী, যিনি দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠেরো ঘন্টা বাড়ির বাইরে কাটান, সুন্দরী, যুবতী স্ত্রীয়ের জন্য একফোঁটা সময় নেই, আর অন্যদিকে দিনে চোদ্দ ঘন্টা শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সময় কাটিয়ে দেওয়ার মতো স্তাবক cum ক্রীতদাস লালুমামা। মায়ের পক্ষে বেছে নেওয়াটা খুব সহজ ছিলো। একদিকে বাবার নীতিকথা কপচানো, ফাঁকা আদর্শবাদের বুলি, কৃচ্ছসাধনের মন্ত্র, অন্যদিকে লালুমামার হুল্লোড়ে জীবন।
তাই তো একজন বছর পঁচিশের সুন্দরী গৃহবধুর জন্য লালুমামাই ছিলো natural choice. বাবা সিনেমা-টিভি দেখাকে সময়ের অপচয় মনে করতেন, সিনেমা-বিনোদন জাতীয় পত্র-পত্রিকাকে বাড়ীতে ঢুকতে দিতেন না; অন্যদিকে লালুমামা আনন্দলোকের হাতে গরম ইস্যু লুকিয়ে মার জন্য নিয়ে আসতেন, খানভাইদের সিনেমার first day first show-এর টিকিট, মার জন্য, ব্ল্যাকে হলেও জোগাড় করতেন।
আমাদের টাউনেও ততদিনে beauty parlour culture শুরু হয়ে গেছে। বাবাকে লুকিয়ে সেসব জায়গায় মা লালুমামার সাথেই যেতেন; খরচা মনে হয় লালুমামাই জোগাতেন। ন্যাকড়ার বদলে পিরিয়ডসে মা প্যাড ইউজ করা শুরু করেছিলেন, দামী দামী ব্র্যান্ডেড ব্রা-প্যান্টি ব্যবহার করতেন। আমার বাবা এসবের খোঁজও রাখতেন না। বুঝতে অসুবিধা হতো না এগুলো কে এনে দিতো। বাইরে বাবার পছন্দসই কৃচ্ছসাধনের একটা খোলস পড়ে রেখে, ভিতরে ভিতরে মা বদলে যাচ্ছিলেন।
আমার স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে মা প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে সরকারী বাংলা মাধ্যম বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করার। প্রথমত coeducation ব্যাপারটাই তার হজম হতো না। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা তারই দলের সরকার প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইংরাজী তুলে দিয়েছে, আর তারই মেয়ে English medium private school-এ পড়বে! আমার নীতিবাগীশ বাবা দলের নেতাদের কাছে মুখ দেখাবেন কি করে! যদিও পরে দেখা গেলো অধিকাংশ নেতাই নিজেদের সন্তানকে English medium private school-এই ভর্তি করেছেন এবং বিভিন্ন তত্ত্বকথা দিয়ে সেটা justify-ও করছেন।
কিন্তু আমার বাবা সেই সব দ্বিচারিতার মধ্যে থাকতে চাইতেন না। আমার মা কিন্তু এইবার foot down করে নিলেন। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখন আমার মায়ের এক জ্যেঠতুতো দাদা, যিনি বাবার পার্টির একজন তাত্ত্বিক নেতা, মার্ক্স-লেনিন-মাও উদ্ধৃত করে, হাবিজাবি যুক্তি দিয়ে বাবাকে বোঝালেন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, pragmatic হতে হয়।
সরকার যে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ইংরাজী তুলে দিয়েছে, সেটা গ্রামের দরিদ্র শ্রমজীবি এবং কৃষিজীবি মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শহর এবং আধা-শহরের বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্য নয়। এইসব ভুজুংভাজাং দিয়ে বাবাকে নিমরাজী করালেন তিনি। কিন্তু বাবাও গোঁ ধরে রইলেন আমার admission-এর ব্যাপারে তিনি কিছুই করবেন না, এবং এটাও ঘোষণা করলেন কোনোরকম donation তিনি দেবেন না।
এবারেও মুশকিল আসান সেই লালুমামা। স্কুলের ইন্টারভিউয়ে তিনি আমার বাবা সেজে গেলেন এবং বাবাকে জানানো হলো না, মোটা donation দিয়ে টাউনের সবথেকে বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যশালী ইংলিশ মিডিয়ম মিশনারি স্কুলে আমি ভর্তি হয়ে গেলাম। Donation-এর টাকাটা কে sponsor করেছিলো, বুঝতে কি কারো অসুবিধা হচ্ছে? এই লড়াইয়ে জিতে মা বাবাকে just ignore করা শুরু করলেন।
জীবন কে হর মোড় পে, মিল জায়েঙ্গে হামসফর,
যো দুর তক সাথ দে, ঢুঁঢে উসি কো নজর।