This story is part of the কর্পোরেট জগৎ series
কর্পোরেট জগৎ–৬
—————————
ডেস্কে ফিরে এসে দেখি কয়েকটা ফেরেরো রোশার কোকোনাট ক্যান্ডি। ল্যাপটপ খুলে দেখি সায়মা আপুর ম্যাসেজ,
-“থ্যাংকস ফর দ্যা রিপোর্ট! আ স্মল টোকেন অভ গ্র্যাটিচিউড লেফট অন ইওর টেবল।” লিখে ধন্যবাদ দিলেন আমাকে।
-“মাই প্লেজার আপু!” রিপ্লাই দিয়ে রাখলাম। কিন্তু মালটা কই? এখনো একবারও দেখলাম না। নিশ্চয়ই কোনো বসের কাছে ঘুর ঘুর করছে কর্পোরেট বিচের মতো।
সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতে খুব একটা কাজ নেই। সার্ভারে কিছু টুকটাক কাজ করে আর গেম খেলে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দিলাম। প্রায় ৭টা বাজে, বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন আমার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে ইংরেজিতে লেখা একটা টেক্সট আসলো,
-“তুমি কি অফিস থেকে বের হয়ে গিয়েছো?” নাম্বারটা আমাদের অফিসিয়াল সিরিজের নাম্বার। সাথে সাথে খুঁজে দেখলাম, ঋতু আপুর নাম্বার এটা। আমি উত্তর দিলাম,
-“না আপু, এখনও অফিসে। কিছু লাগবে?” কিছুক্ষন পর উনি উত্তর দিলেন,
-“আমার তোমার সাথে একটা জরুরি মিটিং করা লাগবে।”
-“কোন ফ্লোরে আসবো আপু?”
-“অফিসে না, আমি এখন র্যাডিসনে। তোমার গাড়ি আছে?”
-“আমার বাইক আছে, তবে আজকে আনিনি।”
-“ওকে, আমি তোমাকে একটা নাম্বার টেক্সট করে দিচ্ছি, আমার ড্রাইভারের নাম্বার, মিলন তোমাকে অফিস থেকে নিয়ে আসবে। ও গিয়ে তোমাকে ফোন দিবে। তোমার ল্যাপটপ তো সাথেই আছে, তাই না?”
-“জ্বি আপু।”
-“ওকে, আসো তুমি তাহলে।”
-“জ্বি আপু।”
মাঝে মাঝে আমাদের ব্রেকফাস্ট মিটিং অফিসের বাইরে হয়। বা কখনও কখনও সন্ধ্যার পর দুই এক জন বিগ বস্-এর সাথে ওনাদের ক্লাবে গিয়েছি। কিন্তু হুট্ করে এরকম ভাবে তো কখনও কেউ মিটিং–এ ডাকেন না। বুঝতে পারছি না, উনি কি শুধু আমাকেই ডেকেছেন, নাকি আরো কেউ থাকবে মিটিং–এ। ফারিয়া ফোন দিল,
-“আমাদের অফিসে আসতে আর ঘন্টাখানিক লাগবে। তুমি কই?”
-“অফিসে এখনও, একটু ভেজালে আছি।”
-“কি, কোনো কাজ বাকি?”
-“উঁহু, ঋতু আপুর সাথে একটা মিটিং আছে।”
-“এখন মিটিং?”
-“হুমম, র্যাডিসনে যেতে বলেছেন।”
-“বলো কি! ওকে যাও তাহলে, আর আমার কুট্টুসটাকে সাবধানে রেখো। কারো যেন নজর না লাগে, হি হি হি।”
-“আমি আছি চাকরির চিন্তায় আর তোমার মাথায় ঘুরছে কুট্টুস! ওকে, পরে কথা হবে, বায়।
-“ওকে, বায়।” ফোন কেটে দিল ফারিয়া।
জ্যাম ঠেলে আসতে ড্রাইভারের আধা ঘন্টা লেগে গেলো। আমি গাড়িতে উঠে ভাবছি, কি এমন কারণ থাকতে পারে যে উনি আমাকে অফিসের বাইরে হঠাৎ মিটিং–এ ডেকেছেন। কারণ, ওনাদের লেভেলের কেউ আমার মতো সাধারণ একজনের সাথে মিটিং করতে চাচ্ছেন, ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছিনা। এইসব সব চিন্তা করতে করতে চলে এলাম র্যাডিসনে। টেক্সট দিলাম আপুকে,
-“আপু, আমি লবিতে।”
-“টপ ফ্লোরে সিগার বারে চলে আসো।”
-“ওকে আপু।” বলে আমি লিফটের দিকে গেলাম। চিন্তা করছি, আপু যেহেতু বারে, তার মানে উনি হয়তো একা না, সাথে কেউ আছে। কিন্তু কে থাকতে পারে? আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর কেউ? নাকি এইচ আর এর কেউ। আর মিটিং–টাই বা কি নিয়ে। এইসব চিন্তা মাথায় শুধু ঘুরছেই।
লিফট থেকে নেমে বারের ভেতরে ঢুকে খুঁজতে লাগলাম। শেষের দিকে একটা টেবিলে দেখলাম ঋতু আপুর মুখোমুখি একজন মহিলা বসা, ওনার মতোই বয়স। টেবিলটার তিন পাশে তিনটা সিঙ্গেল উঁচু সোফা আর এক পাশে কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরে দেখা যাচ্ছে। ওনারা দুইজন মুখোমুখি বসেছেন। এদিকে পিছন করা চেয়ারটা খালি। বুঝলাম না, আর তো কেউ নাই। তাহলে শুধু আমার সাথে কি মিটিং করবে ঋতু আপু? যাই হোক একটু আগাতেই দুজনকেই সাইড থেকে একটু ভালো মতন দেখতে পেলাম। ঋতু আপুর উল্টা পাশের আপুটার কামনাময়ী মোটাসোটা দেহ চোখে পড়লো। উনি পরেছেন মেরুন মোটা বর্ডার দেয়া নেভি ব্লু কালারের কামিজের সাথে সাদা সিগারেট প্যান্ট আর মিডিয়াম হিল জুতো। বাম হাতে লাল রঙের একটা ককটেলের গ্লাস ধরা। বেশ মাদকতাময় আকর্ষণীয় চেহারা। ওনার বেশ ভারী বুক আর নিতম্বের তুলনায় কোমরটা অনেক সরু। আর ঋতু আপু পরেছেন ম্যাজেন্টা প্রিন্টেড শর্ট কামিজের সাথে ডার্ক ব্লু ডেনিম। ওনার বাম হাতে ধরা একটা ভদকা অথবা কোনো ককটেলের গ্লাস আর ডান হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। দুজনের কারোরই কোনো ওড়না নেই। কি নিয়ে যেন দুজনেই হাসছিলেন।
আমি ওনাদের টেবিলে গিয়ে বললাম,
-“স্লামালিকুম আপু।”
-” ওহ, অয়ন! চলে এসেছো তাহলে, এখানটায় বস।” বললেন ঋতু আপু।
-“ল্যাপটপ খুলবো আপু?” বসতে বসতে বললাম।
-“ল্যাপটপ এখন আর লাগবে না। পরিচিত হয়ে নাও, ও হচ্ছে তিথি। আমার পুরোনো কলিগ, এখন একটা টেলিকমের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার। আর, তিথি, ও হচ্ছে, অয়ন। ওর কথাই তোমাকে বিকেলে বলেছিলাম।”
-“হাই অয়ন। নাইস মিটিং ইউ।”
-“হ্যালো আপু। প্লেজার মিটিং ইউ টু আপু।”
-“তোমার সাথে ফোনের ইয়ারফোন আছে?” ঋতু আপু বললেন।
-“আছে।”
ঋতু আপু ওনার ফোনটা হাতে নিলেন,
-“তোমাকে মাত্রই একটা লিংক টেক্সট করেছি, পেয়েছ নাকি দেখতো?”
-“এই মাত্র আসলো আপু।”
-“ওকে, ইয়ারফোনটা কানে দিয়ে লিংকটা একটু খেয়াল করে দেখে আমাকে বলো।।”
আমি লিংকটা ওপেন করার চেষ্টা করছি, একটা এমপিফোর ফাইল এর ড্রপবক্স লিংক। কানে ইয়ারফোন দিয়ে ১০০ মেগাবাইটের ফাইলটা ডাউনলোড করতে লাগলাম ফোনে। আর ওনারা দুজন কথা বলতে লাগলেন,
-“বুঝলা তিথি, অয়ন হচ্ছে একেবারে আমাদের আগের অফিসের সাইমনের মতো। খুব কাজের ছেলে।”
-“সাইমন কোথায় এখন জানো নাকি ঋতু?”
-“শেষ পর্যন্ত শুনেছি ও অস্ট্রেলিয়া সেটেল হয়েছে। ওখানেও টেলিকমে জব করে।”
-“তুমি না মাত্রই জয়েন করেছ? অয়ন–কে খুঁজে বের করলে কিভাবে?”
-“তোমার মনে আছে তিথি, সাইমনকে কি আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম? সাইমনই তো তোমাকে আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। হা হা হা।”
-“হা হা, সেটা অবশ্য ঠিক বলেছ।”
-“আর, অয়ন যেমন স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম ছেলে, ওর উপর তো আমাদের চোখ পড়বেই!” বলে দু‘জন হাসতে লাগলেন।
-“লিংকটা দেখেছ অয়ন?” জিজ্ঞেস করলেন ঋতু আপু।
-“মাত্রই ডাউনলোড হয়েছে, দেখছি।” ঋতু আপুর কথা বার্তা আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না, ওনাদের কথার লাইনটাই ধরতে পারছি না, সাইমন কে?। কান গরম হয়ে যাচ্ছে। উনি আমার থেকে অন্ততঃ ১০ বছরের বড় হবেন, আমি হ্যান্ডসাম মানে কি?
এইসব চিন্তা করতে করতে লিংকটা ওপেন করলাম, একটা ভিডিও ফাইল, সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম। স্ক্রিনটা কালো হয়ে আছে, একটু পর যা দেখলাম, তাতে আমার দেহের রক্ত ২০০ মাইল গতিতে ছুটতে লাগলো। ইয়ারফোনে শুনছি,
-“ইউ স্ট্রিট হোর! আজকে তোকে আমি এমন শিক্ষা দেবো, যে তুই বাকি জীবন আমার কেনা দাসী হয়ে থাকবি! ইউ উইল বি মাই বিচ!”
-“নো! নো! লিভ মি অ্যালোন! প্লিজ! ডোন্ট!”
-“আই ওন্ট! ইউ উইল ফিল টুডে হাও এ ফিলথি হোর লাইক ইউ শুড বি ট্রিটেড!”
-“না প্লিজ অয়ন, প্লিজ প্লিজ প্লিজ! লিভ মি! আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না প্লিজ!”
(চলবে…)