মায়ের ফটো শুট শেষ হতে হতে সেদিন বেলা ২ টো বেজে গেছিলো। আঙ্কল খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন মার কাজে। মা ওনাকে বিশেষ অভিযোগ করবার জায়গা দেয় নি। । ফোটো শুট শেষ হবার পর রূচিকা আণ্টি লাঞ্চ এর ব্যাবস্থা করলেন। ফটো শুট এর কিছু বিষয়ে নিয়ে খুশি না হওয়ায় মা আপসেট হয়ে গেছিলো। লাঞ্চ এ বিশেষ কিছু খেলো না। যাই হোক বিকেল বেলা ওদের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সিনহা আংকেল মার হাতে একটা সাদা এনভেলাপ ধরিয়ে দিলেন। ওর ভেতরে কুড়ি হাজার টাকা অঙ্কের একটা চেক ছিল। ওটা ছিল মায়ের মডেলিং ফটো শুটের পারিশ্রমিক। মা আর বাবা দুজনেই এই কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিতে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু মিস্টার সিনহা কিছুতেই তার মার চেক টা ফেরত নিলেন না। এক বেলা কাজের পারিশ্রমিক এত টাকা হতে পারে এটা দেখে মা তো বটেই বাবারও চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছিলো। আংকেল বলেছিল এত কিছুই না। মা যদি চায় এর থেকে অনেক গুন টাকা সে তার সৌন্দর্য কে ক্যামেরার সামনে ব্যাবহার করে কামাতে পারে।
এই ফটো শুটের পর মায়ের খাতির দারি রুচিকা আন্টির কাছে অনেক গুণ বেড়ে গেলো। মা ভেতর ভেতর এই মডেলিং এর ব্যাপার টা নিয়ে অনুতাপ ছিল দ্বিধা ছিল। রুচিকা আণ্টি প্রতিদিন এসে মা কে সমানে মডেলিং টা কন্টিনিউ করবার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিল। রুচিকা আণ্টি বলেছিল,” শরীর দেখানো আধুনিক ড্রেস পড়লে তোমাকে অসাধারণ দেখতে লাগে সুপ্রিয়া। তোমার সৌন্দর্য্য অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিল লেটস ইউস ইট। এটাতে সবার ফায়দা।” মা জবাব দিয়েছিল, ” যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে আর এসব করবো না। আমার লজ্জা লাগে।” আণ্টি দের বাড়িতে ফটো শুট টা হয়ে যাবার পর, মার মডেল হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা বারে। মার কাছে আরো মডেলিং করার অফার আসলো কিন্তু মা মডেলিং ব্যাপারটি আর কন্টিনিউ করতে চাইল না। আন্টিরা কথা দিয়েছিল যে মা ইন্টারেস্টেড না থাকলে ওরা আর তাকে বার বার মডেলিং এর কথা বলে বিরক্ত করবে না শুটের দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই মিস্টার সিনহা তার মা কে মডেলিং এর বিষয়ে বিরক্ত না করার কথা ভাঙলেন। মা কে আরো একটা ফটোশুটের জন্য ডাকা হলো।
মা প্রথমে রাজি ছিল না। শেষে ওরা আগের বারের মত বাবা কে এসে ধরলো। বাবা ভালোমানুষ সহজেই রুচিকা আন্টিদের ভালো মিষ্টি মিষ্টি কথায় গলে গিয়ে মা কে ফের আর একবার প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে মডেলিং করতে রাজি করিয়ে ফেললো। মা বাবার কথায় মান্যতা দিয়ে মিস্টার সিনহার সঙ্গে গিয়ে ফোটো শুটে অংশগ্রহণ করলো। এবারের ফোটো শুট টা ওরা উইক ডে টে ফেলেছিল। তার ফলে অফিস থাকায় বাবা আর স্কুল থাকতে আমি কেউই এইবার মার সঙ্গে যেতে পারলাম না। তার উপর এইবার স্টুডিও টে নিয়ে গিয়ে ফটো তোলার ব্যাপার ছিল। শেষ অবধি বাবা আর আমাকে ছাড়াই মা কে বেরোতে হলো। ওদের গাড়িটা সার্ভিসিং এ দেওয়া ছিল।
আংকেল আর রুচিকা আন্টি নির্দিষ্ট দিনে সকাল সকাল একটা ট্যাক্সি ডেকে মা কে সঙ্গে নিয়ে বেরোলো। যদিও মাত্র কয়েক ঘণ্টার কাজ সেরে বাড়ি ফেরবার কথা ছিল। তবুও মার কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারাদিন লেগে গেলো। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যে বেলা মডেলিং কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পর মার মুখের অবস্থা দেখে বুঝেছিলাম, এই ২ য় ফটোশুট প্রথম তার থেকেও অনেক বেশি কঠিন আর পরিশ্রম সাধ্য ছিল। মা যে উৎসাহ নিয়ে রওনা দিয়েছিল। সেই উৎসাহের ছি টে ফোটা তার মধ্যে অবশিষ্ঠ ছিল না। সে বাড়ি ফিরে চুপ চাপ হয়ে গেছিল, পরে জেনেছিলাম, এটাতে মা কে শাড়ি ছাড়াও একটা মডার্ন ড্রেস পড়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে হয়েছিল, মা ব্যাপার টা তে রাজি ছিল না। কিন্তু রুচিকা আণ্টি রা কোনো রকমে তাকে মানিয়ে প্রথম দিন করা ঐ এগ্রিমেন্ট পেপারে তার করা সাইনে র জোরে এই কাজ টা উদ্ধার করে নেয়। এর জন্যও মা মোটা পারিশ্রমিক পেয়েছিল, পচিশ হাজার টাকার একটা চেক ভাঙিয়ে যা ক্যাস পায় সেটা দিয়ে রুচিকা আণ্টি দুদিনের মধ্যে মা কে তার প্রিয় একটা অভিজাত বড় দোকানে নিয়ে গিয়ে দামী কসমেটিক সেট আর কয়েকটা রাতের পোশাক কিনে দেয়।
আন্টির কথায় মা ওগুলো ব্যাবহার করতে শুরু করতে বাধ্য হয়। মায়ের শরীরী ভাষায় তাড়াতাড়ি একটা সূক্ষ পরিবর্তন আসে। তারপর কয়েক দিন বাদেই আংকেল রা আবারো আমাদের বাড়িতে বিনা আমন্ত্রণে হাজির হলো। আংকেল এবার খালি হাতে আসলো না, সাথে করে দুই বড়ো প্যাকেট মিষ্টি আর একটা মুম্বই থেকে পাবলিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলেন। আর পকেট থেকে একটা অফিসিয়াল মেইল লেটার বার করে আমার বাবার হাতে ধরিয়ে বলল, “দাদা একটা দারুন গুড নিউজ আছে, সুপ্রিয়া বৌদি একেবারে কিস্তি মাত করে দিয়েছে, আমি আমার কোম্পানির সিইও র থেকে একটা ভালো প্রপোজাল নিয়ে এসেছি, এই হলো সেই প্রপোজাল লেটার।
এখানে যা লেখা আছে, টা শুনলে আপনি জাস্ট খুশিতে পাগল হয়ে যাবেন। আমিও বিশ্বাস করি নি প্রথমে। একটা বড়ো টেলিভিশন প্রোডাকশন হাউজ অনেক দিন ধরে একটা নতুন মেগা সিরিয়াল বানাবে বলে প্লান করছে। এই ম্যাগাজিনে পাবলিশ হওয়া একটা নতুন মডেল এর পিকচার দেখে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। তাদের এই মডেল টা কে সেকেন্ড লিড ফিমেল রোল এ কাস্টিং করতে চাইছে। সেই মডেল আর কেউ না সুপ্রিয়া বৌদি। ডিল ফাইনাল করার জন্য খুব তাড়াতাড়ি সুপ্রিয়া কে ওরা মুম্বাই টে এক্সপেক্ট করছে।
আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুপ্রিয়া বৌদি কে রাজি করিয়ে মুম্বাই টে নিয়ে আসতে একসপ্তাহের মধ্যে। এটা খুব বড়ো একটা হিন্দি মেগা সিরিয়াল। অনেক নামী ছোটপর্দার তারকা আর্টিস্ট রা এতে কাজ করেছে , ছয় মাস একটা প্রাইম স্লট জুড়ে একটা নেশনাল টেলিভিশন চ্যানেলে এই সিরিয়াল টা সমপ্রচার হবে। মুম্বই এর এই কাজ টা ফাইনাল হলে না সুপ্রিয়া বৌদি কে আর দেখতে হবে না অ্যাকট্রেস মডেল হিসাবে সে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাবে। কি আপনার মাথায় কিছু ঢুকছে না তাই তো? আসুন খুলে বলা যাক, বৌদির মডেলিং পিকচার্স গুলো যে ম্যাগাজিনে পাবলিশ হয়েছে, সেটা খুব বড় একটা ফ্যাশন ম্যাগাজিন। অনেক বড়ো বড়ো ফিল্ম ডিরেক্টর আর প্রোডিউসার ফ্যাশন ডিজাইনার রা ঐ ম্যাগাজিন টা নিয়মিত ফলো করে।
এই নতুন হিন্দি ধারাবাহিক টিভি সিরিজের ডিরেক্টর আর প্রোডিউসার এর সুপ্রিয়া বৌদির ছবি দারুন পছন্দ হয়েছে। তারা ওকে সামনাসামনি দেখতে টেস্ট করতে মুম্বই ডেকেছে। এই যাওয়ার আর ওখানে গিয়ে ৩-৪ দিন থেকে ফাইনাল অডিশন দেওয়া সব খরচ ঐ প্রোডাকশন কোম্পানি দেবে। আসলে সুপ্রিয়া বৌদির ছবি ওদের ভীষণ ভালো লেগেছে। পিক চার দেখে সুপ্রিয়া কে ওরা এক প্রকার সিলেক্ট করে নিয়েছে। বাকি টা ফাইনাল করতে মুম্বই গিয়ে মিটিং করতে হবে। এটা দারুন একটা অফার। এক বছরের জন্য প্রাথমিক ভাবে মোট ৩৫ লাখ টাকা দেবে, তার সাথে একটা ভালো এরিয়া টে ২ bhk ফ্ল্যাট আর ২৪*৭ গাড়ি র ফেসিলিটি।”
এই বলে মুম্বই থেকে পাবলিশ হয়ে আসা ম্যাগাজিন টা সিনহা আংকেল মা আর বাবার সামনে এগিয়ে দেয়। ঐ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছবি দুটো দেখে আমার মা ভীষন লজ্জা পেয়ে গেছিলো, কপালে লাল টিপ ওলা শুধু ব্লাউজ পরা বুকের ক্লিভেজ এক্সপোজ করা এনলার্জ ফটো ম্যাগাজিনের পুরো একটা পেজ জুড়ে ছাপা হয়েছিল, তাতে পেটের নাভির অংশ ও আংশিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই প্রথম ছবিটা ক্লোজ আপ এঙ্গেল এ ছবি প্রিন্ট হয়েছিল। আর ২ য় ছবিটা ছিল আরো হট আর সাহসী। আংকেল আমাদের কে পাশের রুমে পাঠিয়ে দিয়ে মার পিঠ ক্যামেরার সামনে খোলা উন্মুক্ত রেখে যে ফটো নিয়েছিল সেটা ছাপা হয়েছিল। তাতে মায়ের খোলা পিঠ আর লম্বা সুন্দর চুল খুব স্পষ্ট আকর্ষণীয় ভাবে ফুটে উঠেছিল।
বাবাও ফোটো গুলো দেখে চুপ চাপ হয়ে গেলো। বাবা অনেকক্ষন চুপ করে থাকার পর বললো, এসব কি ছবি তুলেছেন, এটে তো সুপ্রিয়ার পরনে কাপড় কোথায়। এরকম ছবি….আংকেল বাবার কথা মাঝ পথে থামিয়ে হাসতে হাসতে বললো, ” আপনিও না পারেন মশাই। এসব ছবি তুলতে হয়, কারণ এগুলোই মডার্ন ডে ফ্যাশন কে সঠিক ভাবে তুলে ধরে। আজকাল অ্যাকট্রেস দের দেখেন না। সুপ্রিয়া বউদি কম কিসের।” বাবা ম্যাগাজিন টা বন্ধ করে, সিনহা আংকেল কে বলে, “আমরা খুব সাধারণ মানুষ মিস্টার সিনহা। এত গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড এর স্বপ্ন দেখা, তার পিছনে ধাওয়া করে ছুটে যাওয়া, আমাদের সাধে না।পার্ট টাইম মডেলিং এক জিনিস আর টেলিভিশন আর ফিল্মে অ্যাক্টিং করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
সুপ্রিয়া যে ধরনের শান্ত নিরীহ টাইপের মেয়ে, ও পারবে না। ,” বাবার কথা শুনে সিনহা আংকেল বললেন, ” আপনি মিছি মিছি ভয় পাচ্ছেন দাদা। মডেলিং আর অ্যাক্টিং দুটোই শো বিজনেস। সুপ্রিয়া বৌদির মধ্যে বড়ো হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এত বড়ো সুযোগ এটা সবার ভাগ্যে জোটে না। মুম্বাই থেকে ডাক এসেছে। হিন্দি মেগা টিভি সিরিজে মুখ্য নারী চরিত্রে কাজ করতে চলেছে আপনার স্ত্রী। এটা কম কিসের বলুন? কোটি টাকার লটারি হাতে পেয়ে ছেড়ে দেবেন । মুম্বাইতে গেলে সুপ্রিয়া বউদি কে আর ফিরে তাকাতে হবে না। ভালো না লাগলেও, বা কাজে সমস্যা দেখা দিলে চুক্তি বাতিল করে দেবে, আর ৬ মাসের মধ্যে সিরিয়াল তার মূল ২০০ পর্বর শুটিং শেষ হয়ে যাবে। তখন চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসবে, আমি জানি ওখানে গিয়ে যে কন্ট্রাক্ট পেপার সাইন করতে হবে তাতে এক্সিট ক্লজ থাকছেই। আমার এডভাইস থাকবে সুপ্রিয়া বউদি মুম্বাই যাক, ফাইনাল কাস্টিং টেস্ট পাস করুক। তার পর চুক্তি সাইন করে কাজ আরম্ভ করল। তারপর ভালো না লাগল ৬ মাস পর বাড়িতে ফিরে আসবে। প্লিজ আপনি এত বড়ো সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। পরে আফসোস এর সীমা থাকবে না।”মা আমাদের ছেড়ে মুম্বাই যেতে একেবারেই টিভি তে কাজ করতে যেতে রাজী ছিল না। সে প্রথমেই মুখের উপর না করে দিয়েছিল। বাবার ও এত বড়ো প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে কাজে এতদিন একটানা বাইরে থাকার বিষয়ে মত ছিল না।
মা বাবার নিষেধ সত্ত্বেও রুচিকা আণ্টি রা মা কে এই প্রস্তাবে রাজি করার ব্যাপারে হাল ছাড়লো না। বার বার আমাদের বাড়িতে এসে আমার মা কে বোঝাতে লাগলো, এরকম সুযোগ বার বার আসবে না। তোমার বয়স আছে, রূপ আছে, যৌবন আছে । চলে যাও মুম্বাই , দেখে নাও দুনিয়া ঘুরে , তোমার সংসারের বাইরেও একটা বিরাট দুনিয়া আছে সুপ্রিয়া । তাতে তোমার মতন সুন্দরী দের যে ভীষণ রকম কদর আছে। এই ভাবে নির্বোধের মত বোকামি করো না। শেষ বয়েসে এসে এর জন্য আক্ষেপ করে মরবে।” সিনহা আংকেল ও প্রতিদিন এসে মা কে বলতে লাগলো, ” এটা তুমি কি করছো বউদি তুমি রাজী না হলে আমি যে আমার অফিসের সিইও র কাছে ছোট হয়ে যাবো। আমার ইনক্রিমেন্ট আটকে যাবে। তোমার উচ্চাশা নেই বলে কি তোমাদের জীবনে ভালো কিছুর প্রত্যাশা ও নেই। চলো না মুম্বই। অ্যাক্টিং স্কিল, ক্যামেরার সামনে কথা বলা, হাটা চলা কায়দা কানুন সব কিছু শিখে যাবে।”
শেষ পর্যন্ত সিনহা আংকেল দের প্রেসারে পরে, বাবা মার মুম্বই এর সম্ভাবনা নিয়ে শেরিয়াসলি ভাবতে থাকে। ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানানোর আগে বাবা ওদের কাছে দুদিন ভাবার জন্য সময় চায়। তারপর সিনহা আংকেল কে ডেকে বাবা জানতে চায়, সত্যি করে বলো, সুপ্রিয়া যদি মুম্বাই যায় তার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা। আর সুপ্রিয়ার মত শান্ত নিরীহ প্রকৃতির নারীর মুম্বাইয়ে অন্য পরিবেশে গিয়ে থাকতে কাজ করতে কোনো প্রবলেম হবে কিনা। আমি শুনেছি ওখানকার গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড এর লাইফ স্টাইল এখনকার মত নয়। তাছাড়া ও কোনোদিন বাইরে কোথাও গিয়ে থাকে নি, বুঝতেই পারছেন।
আংকেল বাবার হাত ধরে স্বান্তনা দেওয়ার স্বরে বললো, “দাদা এত ভাববেন না। শুধু কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে মুম্বই শহরে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হবে না। কত গ্রাম ছোট শহর থেকে এসে অনামী সব মেয়েরা এসে ওখানে স্টার বনে গেলো। আর সেখানে সুপ্রিয়া বউদি পারবে না কেনো। তাছাড়া আমি তো প্রোডাকশন এর টিমের সাথেই থাকবো। বৌদির কোনো অসুবিধা হবে না। ওরা চট জলদি বৌদিকে কাজ শিখিয়ে ক্যামেরার সামনে নামিয়ে দেবে। আপনার স্ত্রী মুম্বই টে সম্পূর্ণ সেফ জোন এ থাকবে।
ভালো করে ভেবে চিন্তে বাবা মা কে কাছে ডেকে বলল, “দেখো সুপ্রিয়া যা বুঝছি এটা সত্যি খুব বড়ো সুযোগ। আমি খোজ নিয়ে দেখেছি যে প্রোডাকশন হাউস তোমাকে অফার করছে সেটা খুব বড়ো একটা নাম। ওখানে যারা কাজ করবে তাদের নাম হবে, তোমার মধ্যে সম্ভাবনা আছে। এছাড়া নিজের স্ত্রী বলে বলছি না। তুমি তো জানো তুমি কতটা অপরুপ সুন্দরী। এসময় আমি যদি তোমাকে স্বার্থপর এর মত আটকে রাখি সেটা অন্যায় হবে। তুমি মুম্বাই যাও। কাজ শেখ সফল হও। আমি এদিক টা সামলে নেবো। বাবা মা কে অগাধ ভরসা করতো ভালো বাসত। তাই মা কে বড়ো হবার সম্ভাবনা টা হাত থেকে যেতে দিল না। মা আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শেষ মেষ ভাগ্য অন্বেষণে রাজি হলো, ৩৫ লাখ টাকা আমাদের মতন সাধারণ পরিবারের কাছে অনেক বড়ো আমাউন্ট ছিল। আমি জানি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া মার পক্ষে কত টা কঠিন ছিল। তার অন্যতম কারণ হল মা আমাকে ছেড়ে একদিন ও বাইরে থাকে নি।
ফাইনাল অডিশনে সিলেক্ট হয়ে পাশ করে যাওয়ার পর মা আমাদের ছেড়ে এত মাস বাইরে অন্য শহরে একা একা থাকবে কি করে? এটাই সে ভেবে পাচ্ছিল না। শেষ মেষ মিস্টার অ্যান্ড মিসেস সিনহা আর বাবা এই তিনজন মিলে মা কে মুম্বাই যেতে রাজি করায়। মার মুম্বাই যাওয়া ফাইনাল হওয়ায় রবি সিনহা অর্থাৎ রুচিকা আন্টির হাসব্যান্ড জানালো ৫ দিনের মধ্যে মুম্বাই থেকে মায়ের জন্য ফ্লাইটের টিকিট আর অন্যান্য সব কাগ জ চলে আসবে। মুম্বই যাওয়া ঠিক হতেই রুচিকা আণ্টি মা কে নিয়ে পার্লার এ গিয়ে অনেক খানি সময় কাটিয়ে আসলো। মা কে পার্লার এ নিয়ে গিয়ে মায়ের রূপে আরো মাঞ্জা দিয়ে জেল্লা এমন বাড়িয়ে দিল, মা যখন পার্লার থেকে ফিরলো, আমার বাবাকেই মায়ের পাশে একটু কেমন যেন বেমানান লাগছিল। হাতে খুব অল্প সময় ছিল। আংকেল ওদের হেড অফিসে মার মুম্বাই যাবার বিষয়ে কনফার্মেশন জানাতেই, যথা সময় মুম্বাই থেকে টিকিট আর অন্যান্য কাগজ পত্র চলে আসলো। মার আমাদের সঙ্গে নিজের বাড়ি টে থাকা শেষ কটা দিন মুম্বাই যাওয়ার জোর কদমে প্রস্তুতি টে কাটলো ।