This story is part of the কামদেবের বাংলা চটি উপন্যাস – পরভৃত series
Bangla Choti Uponyash – ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও সময় থেমে থাকে না।প্রবহমান নদীর মত সতত বয়ে চলে গ্রাম গ্রামান্তর পেরিয়ে আপন গতিতে।দেখতে দেখতে তিন-তিনটে বছর পেরিয়ে গেল।কত নতুন জন্ম হল আর কত মৃত্যু হিসেব কে রাখে তার?আমাদের কাহিনীও চলতে থাকবে কোনোদিন শেষ হবে না তাহলেও নতুন কাহিনীকে জায়গা করে দিতে এক জায়গায় থামা দরকার।কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলে উপসংহার টানতে হচ্ছে।
প্রথমে একটা মজার ঘটনা বলি। খুব একটা ভরসা না থাকলেও সন্দীপ কল্পনাকে নিয়ে এল খিন কিল নার্সিং হোমে।ওয়েটিং রুমে ঢুকতে গিয়ে বাধা।এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট আছে?
এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট লাগবে ড.এমাকে বললেই হবে।
লোকটি ওদের একটা কাউণ্টারের সামনে নিয়ে ফোকরে মুখ রেখে কি বলতে ভিতর থেকে জবাব এল,এমাসে হবে না পরের মাসে সেভেন্টিথ আফটার ফাইভ পিএম।
সন্দীপ বিরক্তি নিয়ে কল্পনাকে দেখল ভাবখানা হলতো?কল্পনা এগিয়ে গিয়ে ঋষির লেখা চিরকুট এগিয়ে দিয়ে বলল,দয়া করে এইটা ওকে দেখাবেন?
কি এটা? লোকটা কি বুঝলো কে জানে বলল,ঠিক আছে পাঠিয়ে দিচ্ছি বাইরে অপেক্ষা করুন।
কল্পনাকে পাশে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,তুমি কি অপেক্ষা করবে?
এতদুর থেকে এসেছি দেখি না কি হয়?কল্পনা দ্বিধা জড়িত গলায় বলল।
একের পর এক ডাক আসছে ভিজিটরস রুম প্রায় ফাকা হতে চলল।সন্দীপ কোথাও গেছে হয়তো সিগারেট ফুকতে।কল্পনার অস্বস্তি হয় সন্দীপ ফিরলে কি বলবে?সেই লোকটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেশলাই কাঠি দিয়ে দাত খুটছে।ভীড় নেই লোকটির ব্যস্ততাও নেই।কল্পনা উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,চিঠিটা ম্যাডামকে দিয়েছেন?
লোকটি হতচকিত চিনতে পেরে বলল,তখনি পাঠিয়ে দিয়েছি।
কিছু বলেছেন?
সেটা বলতে পারব না।আমি তো যাইনি।
সন্দীপ আসতে বিমর্ষ্মুখে বলল,চলো।একটা অভিজ্ঞতা হল।
এমন সময় ডাক এলো,মিসেস কল্পনা।
কল্পনা বুঝতে পারেনা কি করবে।লোকটা বলল,কল্পনা আপনার নাম?তাহলে চলে যান।সন্দীপকে বলল,আপনি এখন না ডাকলে যাবেন।
কল্পনা ভিতরে ঢুকতেই একজন নার্স এগিয়ে এসে তার ওজন নিল প্রেশার মাপলো।তারপর ড.এমার সামনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।
ড.এমার হাতে ঋষির লেখা চিরকুট।মুখে কৌতুকের হাসি।
আপনার নাম কল্পনা?
হ্যা কল্পনা দত্ত।
মনে করুন আপনার নাম আছে এক নম্বরে তার আগে কেউ ঢুকলে আপনি বিরক্ত হবেন না?
কল্পনা কিবলবে বুঝতে পারে না।
ড.এমা বললেন,সেজন্য আপনাকে এতক্ষন অপেক্ষা করতে হল।
এমন সময় একটি ছেলে এক প্লেট মিষ্টি এনে দিল।ড.এমা বললেন,খেতে খেতে কথা বলুন।
কল্পনা কিছুটা সহজ সন্দেশে কামড় দিয়ে বলল,আপনি ঠিকই বলেছেন।আমাকে বললে চলে যেতাম।
ওহ গড।আপনি আপনার বন্ধুকে চেনেন না?ও একটা গুণ্ডা।
কল্পনা ধন্দ্বে পড়ে যায় ড.এমা তাহলে ঋষিকে ভয় পায়?ঋষিকে ভালোই চেনে মনে হচ্ছে।খাওয়া হয়ে গেলে একটা টেবলে শুইয়ে হাতে গ্লাভস পরে ভিতরে হাত ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে কি বোঝার চেষ্টা করলেন।
তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে বললেন,সব ঠিক আছে।তারপর কাগজে কবে সম্ভাব্য তারিখ লিখে দিয়ে বললেন,এখানে ভর্তি হলে এই নম্বরে ফোন করবেন।সঙ্গে কে এসেছে?
আমার স্বামী এসেছে।
ড.এমা ইশারা করতে নার্স সন্দীপকে ভিতরে ডেকে আনলেন।ড.এমা বললেন,মি দত্ত এভ্রিথিং ওকে।কোনো চিন্তা করবেন না।
বাইরে বেরিয়ে সন্দীপ বলল,কি ব্যাপার বলতো?আমাকে মিষ্টি দিয়ে গেল।তুমি কিছু বলেছো?
ঋষির পরিচয় মনে হল ড.এমা জানেন।
.ঋষভ সোম এম এ-তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ন হয়ে অধ্যাপনার চাকরির চেষ্টা করছে।ইতিমধ্যে একবার হালিশহর গিয়ে ছোড়দির সঙ্গে দেখা করে এসেছে।বর্মা হতে ম্যাডাম খিন এসে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে বাই পাশের ধারে একটা নামী হোটেলে পার্টির আয়োজন করেছিলেন।ঋষির দুই দিদি সপরিবারে আমন্ত্রিত।বাবুয়ার দলবল ইউনিভার্সিটির সহপাঠীরাও আমন্ত্রিত।বড় বড় ডাক্তার মানিগুনী ব্যক্তিরাও বাদ যায়নি।ঋষী নিজে গেছিল কঙ্কাদিকে আমন্ত্রণ করতে।ফ্লাটে গিয়ে শুনলো কোথায় চলে গেছে কঙ্কাদি।ফ্লাটে যিনি আছেন কিছুই বলতে পারল না।
কয়েকমাস পর ঋষী জলপাইগুড়ির একটি মহিলা কলেজে চাকরি পায়।পক্ষকালের মধ্যে যোগ দিতে হবে। ঋষির যাবার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু মোমোর পীড়াপিড়িতে সম্মত হয়।ঋষী অবাক হয়ে বলল,আমি ওখানে থাকবো আর তুমি এখানে?তোমার খারাপ লাগবে না?
বাস্তবকে মেনে নিতে হয়।ড.এমা হেসে বললেন।
ঋষির মন খারাপ,সে মোমোর উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল অজানা অচেনা জায়গায় কিভাবে থাকবে ভেবে রাতে ঘুম হয়না।খারাপ লাগে মোমো দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘূমোচ্ছে।বিশেষ করে তাকে বিদায় করার জন্য উঠেপড়ে লাগার ব্যস্ততার জন্য কিছুটা অভিমাণ হয়।নিজেকে বোঝায় ও যদি পারে তাহলে সেইবা পারবে না কেন?
বাবুয়ার দলবল স্টেশনে গেছিল তুলে দিতে।ড.এমা ওদের জন্য শেষ মুহূর্তে অন্তরঙ্গ আলাপের সুযোগ পায়না।তাহলেও সমুকে ওরা এত ভালবাসে দেখে বিরক্ত হয়নি।বিষণ্ণ মুখে বিদায় নিয়ে জলপাইগুড়ী পৌছালো। মেয়েদের কলেজ কাগজপত্র দেখাবার পর অধ্যক্ষা দেবজয়া বর্মন জিজ্ঞেস করলেন,ড.এমা আপনার স্ত্রী?
ঋষি চমকে উঠল মোমোর নাম এতদুর পৌছে গেছে?ঋষি বলল,আপনি চেনেন ওকে?
জল্পেশ নার্সিং হোমে উনি এসেছিলেণ আমার দিদির একটা কঠিণ অপারেশনে।তখন আলাপ হয়।আমাদের বাড়ীতে একরাত ছিলেন।কোথায় উঠেছেন?
স্টেশনের কাছে একটা হোটেলে।
দেবজয়া একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন,এই ঠিকানায় আপনার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।কেয়ার টেকারকে বলা আছে আমার কথা বললেই হবে।হোটেল ছেড়ে আজই চলে আসুন।কালই জয়েন করুণ।
ঋষি হতভম্ব এত সহজে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।রিক্সায় উঠে স্টেশনে যাবার পথে একটাই খুতখুতানি তার মনে মোমো তার স্ত্রী জানলো কি করে?ডাক্তারদের এই সুবিধে খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
যদি ভালো পড়ায় তাহলেও তার খ্যাতি ছাত্রীদের মধ্যে বড়জোর জেলাশহরেই সীমিত থাকবে।আজ রাতে তাকে একা শুতে হবে কেউ তাকে ডিস্টার্ব করবে না।নিজেকে খুব অসহায় বোধ করে।
হোটেল থেকে ট্রলিব্যাগ নিয়ে ঠিকানা খুজে পৌছে বিস্ময়ের সীমা থাকে না।কেয়ার টেকারকে কিছু বলতে হয়না,এগিয়ে এসে তার ট্রলিব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢূকে গেল।দেড়তলা সুসজ্জিত বাংলোবাড়ি।কিছুই আনার দরকার ছিলনা অবশ্য বেডশিটটা কাজে লাগবে।এতবড় বাংলো দিয়ে কি হবে?ভাড়া দিতে হবে না?গাছ গাছালির দেখাশুনাই বা কে করবে?
মানুষ অবস্থার দাস সব কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হয়।যতদিন বদলি না হচ্ছে এখানেই থাকতে হবে।
অভিমান আক্ষেপ সরিয়ে রেখে কাজে নেমে পড়ে ঋষি।সকালে স্নান সেরে বেরিয়ে পড়ে একটা হোটেলে লাঞ্চ সেরে কলেজ।ছুটির পর শহর দেখতে বেরনো।শহরের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে করোলা নদী।নদীর পাড় ধরে হাটতে হাটতে গ্রামের কথা মনে পড়ে।কোনোদিন চলে যেতো জল্পেশ মন্দির দেখতে,কামতাপুরিদের অত্যন্ত প্রিয় এই মন্দির।অনেকগুলো স্কুল আছে এখানে তার মধ্যে একটা সুনীতিবালা বালিকা বিদ্যালয়।
হরটাকে চিনতে চিনতে সময় কেটে যাচ্ছিল বেশ।দিন দশেক হল এসেছে মনে হয় কতদিন। একদিন অনেকটা হাটার পর গোসাইহাট পার্কে বসে বিশ্রাম করছে একটু দূরে কতগুলো বাচ্চা খেলা করছে।
ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে গেল।এই সময়টাই জীবনের সেরা সময় ভাবনা উদবেগ দায় দায়িত্ব ছলনা প্রতারণা হতে মুক্ত স্বাধীন জীবন।ওরা বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে একজন হাত নাড়িয়ে কিছু করছে। মনে পড়ল
দশ-কুড়ি গুনে কে চোর হবে সেটা ঠিক করা। হঠাৎ একটি ছোটো মেয়ে ছুটে এসে তার পাশে ঠোট ফুলিয়ে বসে পড়ল।
ঋষি জিজ্ঞস করে,কি হল তুমি চলে এলে?খেলবে না?
সুমিদি ইশারা করে সবাইকে বলল,আমি এলেবেলে।
ঋষি বুঝতে পারে ছোটো বলে ওকে খেলায় নেয়নি।ওর মনমরা মুখ দেখে ঋষির খারাপ লাগে।জিজ্ঞেস করে,তোমার নাম কি?
রিক্তা।
রিক্তা তুমি আমার সঙ্গে খেলবে?
রিক্তা এই প্রস্তাবে ঋষির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসল।ছোটোদের হাসি নির্মল।
রিক্তার হাসি মুখ দেখে ঋষির ভালো লাগে।রিক্তা জিজ্ঞেস করে,আঙ্কেল তোমার নাম কি?
আমার নাম ঋষভ সোম।
ধ্যেৎ ইয়ার্কি?
কেন ইয়ার্কি কেন,সত্যি।
ঋষভ সোম আমার বাবার নাম।
এমন সময় একটি মেয়ে ছুটে এসে বলল,কিরে রিক্তা খেলবি না?
না আমি আঙ্কেলের সঙ্গে খেলবো।
মেয়েটী ঋষির দিকে অদ্ভুত চোখে দেখে রিক্তাকে টেনে নিয়ে কানে কানে কিছু বলল।রিক্তা ভয়ার্ত চোখে ঋষিকে এক নজর দেখে ছুট দিল।
ঋষির মনে হল মেয়েটী কানে কানে তার সম্পর্কে এমন কিছু বলেছে তাতে রিক্তা ভয় পেয়ে থাকবে। রিক্তার বাবার নাম ঋষভ।দুজনের একই নাম হতে পারে কিন্তু এই ছোট্ট শহরে একই নামে দুজন থাকে ব্যাপারটা বেশ মজার।সন্ধ্যে হয়ে এল এবার বাড়ীর দিকে হাটা শুরু করা যাক।ফেরার পথে ডিনারের জন্য তড়কা রুটীর পার্শেল নিয়ে নিল।
বাসায় ফিরে চেঞ্জ করে স্টোভে চা করল বেশি করে বার বার চা করতে ভাল লাগেনা।এককাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখে। রান্না করা মোমোর শখ।সারাদিনের খাটাখাটনির পরও রান্না করতে ক্লান্ত বোধ করে না।একা একা কি করছে কে জানে?
এ্যাটাচি খুলে সেদিন লাইব্রেরি হতে আনা বইটা নিয়ে বসল মনস্তত্তের বই।মানুষের মন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ভালোবাসে।পৃথিবীতে অনেক বিস্ময়ের মধ্যে বড় বিস্ময় মানুষের মন। মোবাইল বাজতে ঋষি ঘড়ি দেখল দশটা বাজে।ঋষির ঠোটে হাসি ফুটল সময়ের একটু এদিক ওদিক হবার নয়।মোবাইল কানে লাগাতে ওপার থেকে শোনা গেল,খেয়েছো?
এবার খাবো।
কি করছিলে?
মনস্তত্তের একটা বই এনেছি পড়ছিলাম।
তুমি মন বুঝতে পারো?
ঐ জন্যই পড়ছি।
মিষ্টি হাসি মন ছুয়ে গেল।ঋষি জিজ্ঞেস করে,চেম্বার ছিলনা আজ?
এখন রাখছি একটা ফোন এসেছে।
ঋষি উঠে খেতে বসল।ফোন করলে খারাপ লাগে আবার না করলেও খারাপ লাগে।সত্যি মানুষের মন বড় বিচিত্র।খাওয়া দাওয়ার পর লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।পার্কের মেয়েটা কি যেন নাম রিক্তা।ওর বাবার নামও ঋষভ।এমন কি পদবীও সোম।এইসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল। বাংলোর চারদিকে গাছ পালা জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসছে।গাছের পাতার ফাকে জমাট বাধা নিঝুম অন্ধকার।
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ঋষি চোখ মেলে দেখল জানলা দিয়ে ভোরের নরম আলো বিছানায় এসে পড়েছে।হাত বাড়িয়ে মাথার কাছে টেবলে রাখা ফোনটা নিয়ে কানে লাগিয়ে তন্দ্রা জড়িত গলায় বলল,হ্যালো?
ওপাশে গলা শুনে ঋষি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বলল,হ্যা মম বলুন।
মোমো তোমায় কিছু বলেনি?
কোন ব্যাপারে?
তোমাকে ফোন করেনা?
রোজই করে,কেন মম?
কিছুই জানো না তুমি?
কেন কিছু হয়েছে মম?
আচ্ছা পরে ফোন করছি।ফোন কেটে দিলেন। ধন্দ্বে পড়ে যায় ঋষি,কাল রাতেও কথা হয়েছে কিছুই তো বলেনি মোমো।বর্মায় কিছু হয়নি তো?রাতে ফোন করলে জিজ্ঞেস করতে হবে কি ব্যাপার?বর্মায় যদি কিছু হয় তা কি তার জানার অধিকার নেই?
কলেজের ব্যস্ততায় অন্য চিন্তা পরিসর পায়নি।ছুটি হতেই ভোরবেলার কথা মনে পড়ল।
মম কোন ব্যাপারে জানতে চাইছিলেন অনুমান করতে গিয়ে দিশাহারা বোধ করে ঋষি।
অন্যমনস্কভাবে পথ চলতে থাকে।সন্ধ্যের আগে বাসায় ফিরবে না।হঠাৎ খেয়াল হল মোমো রাত দশটায় ফোন করবে।তার আগে সেই তো ফোন করতে পারে।কথাটা আগে মনে হয়নি কেন ভেবে নিজের উপর বিরক্ত হয়।রিক্সা স্ট্যাণ্ডের কাছে দাঁড়িয়ে ফোনের বাটন টিপল।টুইপ-টুইপ শব্দ হয়,রিং হচ্ছে না।কি ব্যাপার মোমো এখন কোথায়? কয়েকবার চেষ্টা করেও লাইন পেলো না।
এক ভদ্রমহিলাকে রিক্সায় উঠতে দেখে মনে হল কঙ্কাদি না?কিন্তু কঙ্কাদি এখানে কোথা থেকে আসবে?মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এল কঙ্কাদি।ভদ্রমহিলা পিছন ফিরে দেখছেন কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল রিক্সা। হ্যা কঙ্কাদিই তো।ঋষি দ্রুত এগিয়ে গেল।কাছাকাছি হতে কঙ্কাদি জিজ্ঞেস করে,ঋষি তুই?একটু সরে জায়গা করে দিয়ে বলল,ওঠ কাছেই আমার বাসা।
ঋষি সম্মোহিতের মত রিক্সায় উঠে বসল।এভাবে এখানে কঙ্কাদির সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।বেশ মুটিয়েছে কঙ্কাদি।কানের পাশে কয়েক গাছা চুলে রূপালি ছোপ।
কত বছর পর আবার তোর সঙ্গে দেখা হল।তুই এখানে কোথায়?
একটা কলেজে চাকরি নিয়ে সবে এসেছি।
খুব ভালো খবর।এবার একটা বিয়ে কর।
শেষ যখন দেখা হয়েছিল কঙ্কাদির মধ্যে লক্ষ্য করেছিল বিষন্নতা।এখন বেশ উজ্জ্বল চেহারা।ঋষি বলল,বিয়ে করেছি।
বিয়ে করেছিস?কই আমাকে বলিস নিতো?
তোমার ফ্লাটে গেছিলাম।শুনলাম তুমি কোথায় চলে গেছো।
তুই যার সঙ্গে কথা বলেছিস ওর নাম শেফালী ভট্টাচার্য।
কঙ্কাদি অন্য মনস্ক,মুখে মেঘ জমতে থাকে।কিছুক্ষন পর বলল,তুই তো সব জানিস কি করে থাকি বল?রাস্তায় বেরোলে মনে হত সবাই হা-করে আমাকে দেখছে। এক সময় মনে হয়েছিল আত্মহত্যা করি কিন্তু মেয়েটার মুখ চেয়ে করতে পারলাম না।শেষে এখানে হেড মিস্ট্রেসের চাকরি নিয়ে পালিয়ে বাঁচলাম বলতে পারিস।যাক অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে আর ভালো লাগে না।
কোন মেয়ে?
রিক্সা দাঁড়িয়ে পড়ল।কঙ্কাদি বলল,সব বলবো।এই ফ্লাটের দোতলায় থাকি। এবার নাম।
রিক্সা থেকে নেমে সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,এই ফ্লাটে ভাড়ায় আছি।স্কুলের কাছে একটা বাড়ী করছি।আর মাস তিনেক পর হয়ে যাবে মনে হয়।একদিন তোর বউকে নিয়ে আয়না আলাপ করি?
কঙ্কাদি চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে সোফা দেখিয়ে বলল,বোস।আমি চেঞ্জ কোরে আসছি।
তোর এখন কোনো কাজ নেইতো?
না না তুমি চেঞ্জ করে এসো।পারলে এককাপ চায়ের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।
কঙ্কাদি পিছন ফিরে তাকিয়ে হেসে অন্য ঘরে চলে গেল।
মেয়েটা সুমির সঙ্গে বেরিয়েছে।ফেরার সময় হয়ে এল।ঋষিকে সব কথা খুলে বলা যায়।রাগের মাথায় ওকে যা-না তাই বললেও কঙ্কা জানে ছেলেটা বেসিক্যালি ভালো।ঋষি বিয়ে করেছে কথাটা মনে হতেই হাসি পেল।প্রেমের বিয়ে নয় নিশ্চিত কিন্তু কে ওর বিয়ে দিল?
মনীষা দিয়েছে হয়তো।