নতুন জীবন – ২৩

This story is part of the নতুন জীবন series

    ঘড়ির কাঁটা ধরে সময় এগিয়ে চললো। সাবরিন ঘুম থেকে উঠে সাগ্নিককে দিয়ে আরেকবার সুখ করিয়ে নিলো। সাগ্নিকের গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো সাবরিন।
    সাবরিন- চলে যাবে?
    সাগ্নিক- যেতে তো হবেই সুইটহার্ট।
    সাবরিন- কি করে থাকবো তোমাকে ছাড়া?
    সাগ্নিক- আমি রেস্টোরেন্টের খাবার সাবরিন। প্রতিদিন খেতে যেমন ভালো লাগে না। তেমনি ক্ষতিকারক।
    সাবরিন- কিছু কি আছে, যা আমার এখানে এসে তোমার পূরণ হয়নি।
    সাগ্নিক- কিচ্ছু না। ভরিয়ে দিয়েছো তুমি আমাকে।
    সাবরিন- ব্রেকফাস্ট করেছো?

    সাগ্নিক- হমম। রাবিয়া বানিয়ে দিয়েছে।
    সাবরিন- রাবিয়াকে কেমন লেগেছে?
    সাগ্নিক- ভালো। বেশ ভদ্র।
    সাবরিন- তাই তো রেখেছি মেয়েটাকে। বেশ সম্মান করতে জানে।
    সাগ্নিক- কিন্তু কচি যৌবনবতী মেয়ে। ক্ষিদে পেলে খেতে দাও তো?
    সাবরিন- আমি তো আর লেসবিয়ান নই। তবে এদিক ওদিক যে করে, তা বোঝা যায়। আমার অবশ্য তাতে আপত্তি নেই। নিজেকে দেখে তো বুঝি।
    সাগ্নিক- চলো ওঠো এবার। ক’টা বাজে দেখেছো?
    সাবরিন- হমমম। বারোটা বেজে গিয়েছে।

    আর বিশেষ কিছু হলো না। লাঞ্চ হলো। লাঞ্চের পর একটু রেস্ট। ৩ টায় বাস। যাবার আগে অবশ্য সাবরিনকে একটু কচলে দিয়েছে সাগ্নিক। একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো সাবরিন। আর হাতে ১০০০ টাকা দিলো।
    সাবরিন- একদম বাড়ি গিয়ে খুলবে ব্যাগ। তোমার সব কিছু দেওয়া আছে। এই হাজার টাকায় রাস্তায় খাবার দাবার খেয়ো।
    সাগ্নিক বাসে চেপে হেডফোনে গান চালিয়ে দিলো ঘুম।

    সাতটা নাগাদ বাস দাঁড়ালো। হইচইতে ঘুম ভাঙলো সাগ্নিকের। মালদায় দাঁড়িয়েছে বাস। সবাই চা ফা খাচ্ছে। সাগ্নিক উঠে একটা চা আর সিঙাড়া নিলো। শেষ করে আবার বাস। রাত ১২ টায় নামলো সাগ্নিক। দোকান খোলা আছে কয়েকটা। রুটি আর মাংস কিনে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে একটা বড় নিশ্বাস নিলো। জল গরম বসালো। স্নান করে নিলো একবার। তারপর খাওয়া দাওয়া করে সাবরিনকে টেক্সট করে দিলো পৌঁছে গিয়েছে। রিপ্লাই এলো না। ঘুমিয়েছে হয়তো। ব্যাগটা খুললো। সাবরিনের কিনে দেওয়া জিনিসপত্র। তার মাঝে একটা খাম। খুললো। হাজার দশেক টাকা। সাগ্নিকের মাথা ঘুরে গেলো। কি করছে সাবরিন তার সাথে। কিনে নিচ্ছে তাকে দিনের পর দিন। এতোগুলো টাকার জিনিস কিনে দেবার পর আবার এত্তো ক্যাশ। সাগ্নিকের অস্বস্তি হচ্ছে। ফোন করলো সাবরিনকে। রিপ্লাই এলো না কোনো। ঘুমিয়ে পড়লো সাগ্নিক।

    সবকিছুরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সাগ্নিকের মুর্শিদাবাদ যাত্রারও হলো। পরদিন সাগ্নিক অর্ধেক দুধ বিক্রি করতে পারলো না। খুব চেনাজানা বাড়িগুলো ছাড়া বিক্রি হলো না। সাগ্নিকের দশহাজার টাকার ভূত উড়ে গেলো। ব্যবসাটা খেটে দাঁড় করিয়েছে সে। মায়া আছে ভীষণ। সাগ্নিক সিদ্ধান্ত নিলো লেগে থাকতে হবে। আপাতত সব বন্ধ। কিন্তু সাগ্নিকের জীবনে কি আর কিছু প্ল্যান মাফিক হয়? যাবেনা যাবেনা করেও আইসার সাথে রাত কাটাতে হলো। সাগ্নিক টাকা নিতে না চাইলেও জোর করে দিয়েছে ৭০০ টাকা। দুদিন ধরে দুধে যে লস হয়েছে তার কিছুটা উঠলো। রিতুও বেশ ভাও দিচ্ছে সাগ্নিককে। মুর্শিদাবাদ যাবার আগে সাগ্নিকের হাতের স্পর্শ ভোলেনি সে।

    সেলাইয়ের কাজ করে ইনকামও হচ্ছে। কিন্তু থাকে ওরা ভদ্র পাড়ায়। সাগ্নিক আর রিতুর ঘনিষ্ঠতা পাড়ায় ক্রমশ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। সাগ্নিককে কেউ কিছু না বললেও রিতুকে পাড়ার অনেক মহিলাই কথা শোনায়। রিতু অতটা পাত্তা দেয় না যদিও। সাগ্নিক তার কাছে আশীর্বাদ। সাগ্নিক না হলে আজ তাকে হয়তো রাস্তায় দিন কাটাতে হতো। ইদানীং একটু অসভ্য হয়েছে সাগ্নিক। রিতু কিছু মনে করে না। মনে মনে ভালোবাসে সাগ্নিককে। হোক না সে পরস্ত্রী। তার কি নিজের কিছু চয়েস নেই না কি? আর সাগ্নিকের সাথে নাম জড়ানোর পর থেকে রিতুর সেরকম অস্বস্তি হয় না। এরকম সুপুরুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

    দুপুরে খাবার পর একটু শুয়েছিলো সাগ্নিক। মোবাইল বেজে উঠলো। রূপা শা।
    সাগ্নিক- হ্যাঁ বৌদি বলো।
    রূপা- খুব তাড়ায় ছিলে দেখলাম, তাই বলিনি তখন।
    সাগ্নিক- কি বলো।
    রূপা- আমার এক বান্ধবী তোমাকে চায়।
    সাগ্নিক- কি? পাগল না কি? আমি আর ওসবে নেই।
    রূপা- তোমার আমার ভিডিওটা দেখে ও পাগল হয়ে গিয়েছে।
    সাগ্নিক- তোমার আমার ভিডিও মানে?
    রূপা- ওহ। তোমাকে বলা হয়নি। আমি একটা ভিডিও করেছি লুকিয়ে।
    সাগ্নিক- কাজটা ভালো করোনি বৌদি।
    রূপা- কাল ১০ টার পর ও ফাঁকা থাকবে। যদি যাও তাহলে জানিয়ো। আর হ্যাঁ বহ্নিতা আর তোমার ব্যাপারটা নিয়ে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে। যদিও আমি কিছু বলিনি।

    সাগ্নিকের বুঝতে বাকী রইলো না রূপা তাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছে। সাগ্নিক জানালো রাতে জানাবে। এই সমস্যা কাকে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। বড্ড কঠিন সমস্যা। তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী বাপ্পা দা। কিন্তু বাপ্পাদাকে কি আর এসব বলা যায়? রিতু খুব ক্লোজ হলেও বলা ঠিক হবে না৷ বহ্নিতার তো খবরই নেই। আইসাকে বলেও কি কিছু লাভ হবে? অনেক চিন্তাভাবনা করে যদিও রিতুর কাছেই গেলো সাগ্নিক।
    বিকেলে সাগ্নিককে দেখে একটু অবাক হলো রিতু।
    রিতু- তুমি এসময়? দুধ দিতে যাওনি?
    সাগ্নিক- নাহহ। বাইরে যাবার কারণে দুদিনে অনেক কাস্টমার হাতছাড়া হয়ে গেলো। কাল তো নষ্টও হয়েছে। আজ কম তুলেছি।
    রিতু- তাহলে বাপ্পাদার কাছে গিয়ে সাহায্য করো।
    সাগ্নিক- পড়ানো আছে বাপ্পাদার বাড়িতে। ৬ টায় যাবো।
    রিতু- কোনো টেনশনে আছো সাগ্নিক?

    রিতু সেলাই মেসিন বন্ধ করলো।
    সাগ্নিক- ভীষণ টেনশনে আছি। শুনবে তুমি? সময় লাগবে বলতে।
    রিতু- তুমি আমার জন্য যা করেছো, তা আমার বিয়ে করা বরও করেনি। তোমার কথা শুনবো না তা হয়? বলো।

    সাগ্নিক তার কোলকাতার জীবন, এখানের জীবন, বহ্নিতা, আইসা, সাবরিন, রাবিয়া, রূপা সব বলে দিলো রিতুকে। রিতু শুনে লজ্জায় লাল। কখনও মুখে কৌতুহল, কখনও বা ঈষৎ ঘেন্নার ছাপ। কিন্তু সাগ্নিক বলেই যাচ্ছে। একের পর এক কাহিনী। যখন শেষ হলো পুরো ঘর নিস্তব্ধ। অনেকক্ষণ পর নীরবতা ভাঙলো রিতুই।
    রিতু- আমার এই সেলাই মেসিন তাহলে তোমার পরিশ্রমের টাকায় কেনা নয়?
    সাগ্নিক- না। তবে যে কাজের টাকায় কেনা, তাতেও পরিশ্রম আছে।
    রিতু- আমি ভেবেছিলাম….
    সাগ্নিক- কি ভেবেছিলে?
    রিতু- না থাক। কিছু না। চা খাবে?

    সাগ্নিক- না। তুমি বলো আমি এখন কি করবো?
    রিতু- তোমার জীবন সাগ্নিক। আমি কিই বা বলতে পারি।
    সাগ্নিক- কিছু তো বলো। দেখো আমি চাইলে তোমাকে কিচ্ছু না বলতে পারতাম।
    রিতু- কি বলি বলো? তুমি তো উপভোগ করো ব্যাপার গুলো। তাহলে আর কি!
    সাগ্নিক- তুমি না বললে আমি ছেড়ে দেবো এসব।

    রিতু- পারবে না। তার চেয়ে এক কাজ করো। যাও। এতদিন যা করেছো, নিজের ইচ্ছায় করেছো। কাল যা করবে তা কিন্তু ইচ্ছায় হবে না। হবে টাকায়। যদি উপভোগ না করো, ছেড়ে দিয়ো।
    সাগ্নিক- বলছো?
    রিতু- বলছি। দেখো আমরা গরীব মানুষ। আমরা সৎ থাকলেও মানুষ মানবে না। এই দেখো না পাড়ায় কি চলছে।
    সাগ্নিক- কি চলছে?
    রিতু- তোমার আমার মধ্যে না কি গোপন প্রেম চলছে। তাই না কি আমি বুদ্ধি করে আমার বরকে তার নিজের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
    সাগ্নিক- কি? কে বলছে এসব?

    রিতু- পাড়ার প্রায় সবাই। হয়তো উঠে যেতে বলবে এ পাড়া থেকে। উল্টোদিকের সাহা বাড়ির মল্লিকা সাহা হলো এর মূল পান্ডা।
    সাগ্নিক- মল্লিকা সাহা? ওর তো ঢের বয়স হয়েছে।
    রিতু- হমমম। ওই ষাট এর ওপর হবে। বয়স যতই হোক। বড়লোক। কথার মূল্য দেয় সবাই।
    সাগ্নিক- ওর বর কি করে যেন?
    রিতু- বর ব্যবসা করে। আর ছেলে কোথায় যেন চাকরি করে। সপ্তাহে ২-৩ দিন বাড়ি আসে।
    সাগ্নিক- দাঁড়াও আগে কালকেরটা সেড়ে আসি। তারপর এই ব্যাপারটা দেখছি।
    রিতু- অন্য সময় হলে হয়তো আমি এসব শোনার পর তোমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিতাম। কিন্তু এখন না। আমি বুঝে গিয়েছি এরা আমাদের ভালো ভাবতে পারবে না। তাই আমি তোমাকে বাধা দিচ্ছি না সাগ্নিক।

    চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লো সাগ্নিক। নিজের মনকে হাল্কা যেমন করতে পারলো তেমনি নতুন চিন্তাটাও বেশ ভাবাতে শুরু করলো তাকে। বেচারি রিতু মুখ বুজে সহ্য করছে সব। কষ্ট হলো। কিছু একটা ভাবতে হবে। কারণ পাড়া ছাড়তে হলে ব্যবসাটাও যাবে। বাপ্পাদাও হয়তো আর ভালো চোখে দেখবে না। এসব ভাবতে ভাবতে পড়াতে এলো সাগ্নিক।
    পাওলা- আরে মাস্টারমশাই আসুন আসুন। সকালে তো দুধ দিয়েই চলে গেলে। তা কেমন কাটলো বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান?
    সাগ্নিক- ফাটিয়ে মজা করেছি।

    পাওলা- বাহ! বেশ। এভাবেই আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে ফেরো বুঝলে? তোমার দাদাও বলছিলো।
    সাগ্নিক- বাড়ি ফিরলে তোমাদেরকে মিস করবো বৌদি। তাই ফিরতে চাই না।
    পাওলা- আমরা রাস্তার মানুষ। আজ আছি, কাল নেই।
    সাগ্নিক- কি যে বলো।
    পাওলা- ঠিক আছে পড়াও। যাওয়ার সময় একটু শুনে যেয়ো সাগ্নিক।

    এই একটা কথায় বেশ অস্বস্তি হতে লাগলো সাগ্নিকের। কি বলবে যাওয়ার সময় বৌদি? সাগ্নিক কি কিছু অপরাধ করেছে? পড়াতে লাগলো, কিন্তু মন বসাতে পারলো না সাগ্নিক। পড়ানো শেষ করে পাওলাকে ডাক দিলো।
    সাগ্নিক- কি ব্যাপার বৌদি?
    পাওলা- বহ্নিতার সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক?
    সাগ্নিক- মানে? কেমন আবার? বহ্নিতা বৌদি দুধ নেয় আমার থেকে। ভালো কাস্টমার।
    পাওলা- বহ্নিতা কেমন তা কি আর তোমার কাছে শুনতে হবে সাগ্নিক?

    সাগ্নিক বুঝলো কিছু একটা গরমিল আছে। কিন্তু মুখে কিছু ভাব ফুটতে দিলো না।
    সাগ্নিক- আমি কিছু বুঝতে পারছি না বৌদি। কি হয়েছে?
    পাওলা- তোমার দাদা যেন না জানে।
    সাগ্নিক- জানবে না।
    পাওলা- বহ্নিতা এসেছিলো কয়েকদিন আগে। ও তোমাকে নিয়ে খুব উৎসাহী। ফোনেও তোমার খবর নেয় টুকটাক। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

    সাগ্নিক- ও। আমি কি বলি বলো। আমি তো কিছু জানি না।
    পাওলা- বুঝতে পারছি। তুমি খেটে খাওয়া ছেলে। তাই বললাম। ওর থেকে সাবধানে থেকো। আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
    সাগ্নিক- আমি কি ওই বাড়িতে দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেবো?
    পাওলা- তা বলি নি। ওর সাথে বেশী ঘনিষ্ঠ হয়ো না।
    সাগ্নিক- ঠিক আছে বৌদি৷ তুমি বললে যখন। আসি এখন।

    পাওলা মিষ্টি করে হেসে দিলো। সাগ্নিকের মনে হলো ওই হাসির জন্য সবকিছু ভুলে থাকা যায়। যদিও সবার হাসি দেখেই তাই মনে হয় সাগ্নিকের। বহ্নিতা তাকে ভালোই ঝামেলায় ফেলছে। আনমনে সাইকেল চালাতে চালাতে বাপ্পাদার হোটেলের দিকে রওনা হলো সাগ্নিক। গিয়ে যথারীতি একটু সাহায্য করলো। সাগ্নিকের ডেডিকেশন দেখে বাপ্পাদা অবাক হয়ে যায়।

    রাতে ফিরে রিতুর কাছে খেয়ে একবারে ঘরে ঢুকলো সাগ্নিক। রিতু আজ গোমড়ামুখো। সেটাই স্বাভাবিক যদিও। সাগ্নিকও বেশী ঘাটালো না। থিতু হবার সময় দিলো একটু। দুদিন বাদে ঠিক হয়ে যাবে।
    ঘরে ঢুকে সব খুলে ল্যাংটা হয়ে শুয়ে পড়লো সাগ্নিক। অনেক বড় কাটলো আজকের দিনটা।

    চলবে…..
    মতামত জানান [email protected] এই ঠিকানায় মেইল করে। পাঠিকারাও মেইল করতে পারেন। সকলের গোপনীয়তা বজায় রাখা আমার কর্তব্য। হ্যাংআউটেও মেসেজ করতে পারেন।