ওদিকে সুমির জীবনে চরম শান্তি বিরাজ করছে স্বামী মারা যাবার পর। শোক যদি কিছু থেকে থাকে তা হল বিজয়বাবুর থেকে দূরে থাকার শোক। অল্প কদিনের মধ্যেই সে কাজে যোগ দেয়। রাত্রিবেলা অভিসারে একরাশ ব্যর্থতা নিয়ে প্রতিদিন ফেরার পর বুকের মাঝে বিজয়বাবুর জাঙ্গিয়াখানি চেপে সে পরম আনন্দে নিদ্রা যায়। সে আশায় দিন গোনে কবে আবার সে চরম সুখের পুনরাবৃত্তি হবে।
মাস ঘুরতেই মাথা ঘুরিয়ে বাজারে পড়ে যেতে ডাক্তারের কাছে যখন সে এতদিনের বাঁজা অপবাদকে হারানোর শুভ সংবাদ পেল।সুমির মন তখন বাঁধভাঙা আনন্দে নেচে উঠল। বাচ্চার বাবাকে একবার দেখার জন্য তার মন অস্থির হয়ে উঠল। কি ভাবে তার সংস্পর্শে সমস্ত দোষ কেটে জীবনে চরম শান্তি নেমে এল। অন্যদিকে প্রতিবেশীরা নাম না জানা সেই তান্ত্রিকের জয়গান গাইতে লাগল। যার কাছ থেকে প্রাপ্ত শিকড়ের সেবনে সুমি সন্তান লাভ করতে চলেছে।
অন্যদিকে বিজয়বাবুর সাথে মেয়েটির সম্পর্ক অনেক সহজ হয়ে গেছে। শারীরিক সম্পর্কের জন্য তাদের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। বিজয়বাবু ভুলেই গেছেন যে মেয়েটির স্বামী ও তারা একই ছাদের নিচে বসবাস করে।
বিজয়বাবুকে মেয়েটি বাধ্য করে ছেলেটির সামনে মিলিত হতে। ছেলেটি মাথা নিচু করে সে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। বিজয়বাবু একরাশ কৌতুহল নিয়ে মেয়েটিকে সন্তান লাভের সুখ দেবার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। যথারীতি মাসখানের মধ্যেই মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
আজ প্রথমবার তিনি প্রচন্ড অপ্রস্তুত যে তিনি কিভাবে প্যান্টি, ব্রা,ব্লাউজ,রজঃস্রাবের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনবেন। নিজের হাতে সমস্ত কিছু কিনবেন বলে বাজারে পৌঁছে তিনি এদিকওদিক ঘুরতে ঘুরতে সুমির দোকানে গিয়ে পৌঁছলেন।
সুমির ওনাকে সশরীরে দেখে থতমত খেয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই দুজনের দুরকম ভাবনায় এক হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।
বিজয়বাবুর আত্মীয়ার জন্য সুমি সমস্তকিছু কেনা কাটার ব্যাপারে সহযোগিতা করল। সুমির বুকের ভিতর এক অজানা আনন্দের ঢেউ ফিরে ফিরে আসছিল। সেই রাত্রের চরম মুহুর্ত গুলি একের পর এক তার মনে নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল। সে এই সুপুরুষ ব্যক্তিকে দুচোখ ভরে দেখার এমন সুযোগের পূর্ন সদ্ব্যবহার করল।
কয়েক মাসের মধ্যেই বিজয়বাবুর সাথে সুমির সম্পর্ক ক্রমে ক্রমে সহজ হয়ে এল। বাজারে সুমির সাহায্য গ্রহনে বিজয়বাবু ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন। এজন্য বিজয়বাবুর কাছ থেকে কোনরকম আর্থিক সাহায্য নিতে সে অস্বীকার করত। সুমি দ্ব্যর্থক ভাবে তার সন্তানের পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত এবং বলত জীবনে সে যদি তাকে একবার জানাতে পারত এ সুখবরের কথা।
বিজয়বাবু জানতেন সুমির স্বামী পুত্রলাভের সুখবর শোনার আগেই মারা যায়। তার অবাক লাগে সুমি তার স্বামী সম্পর্কে কত উদাসীন। কিন্ত সন্তানের পিতার প্রতি তার আবেগ যেন বাঁধনছাড়া। গুটি গুটি পায়ে দিন কাটতে লাগল। সুমির উদর ক্রমশ স্ফীত হচ্ছিল। দোকানে আসতে তার বেশ কষ্ট হয়।
আজ বিজয়বাবুর সুমিকে এভাবে দেখে তিনি যা নয় তাই বলে দারুন অপমান করলেন এ অবস্থায় দোকানে আসার জন্য। বিজয়বাবু নিজেও অবাক হলেন যে সুমি মাথা নিচু করে ছিল অন্যদিন যে ছটফট করে কথা বলার জন্য সে আজ কোন উত্তর দেয়নি। আজ তিনি নিজের সীমারেখা যে পাড় করে ফেলেছেন সেটা বুঝতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে এলেন।
তারপর থেকে বিজয়বাবু সুমিকে আর দোকানে দেখেননি। তিনি একদিন ঠিক করলেন যে তিনি সুমির বাড়ী যাবেন। কিন্ত তার বাড়ীতেও মেয়েটিকে দেখাশোনার কাজে তিনিও মোটামুটিভাবে ব্যস্ত।
এতদিন সুমি তাকে কেনাকাটার ব্যাপারে সাহায্য করত কিন্ত আজ তিনি কি করবেন। আজ কি মনে করে তিনি একটা লিস্ট করে ছেলেটিকে নিয়ে বাজারে গেলেন আর তাকে কোথা থেকে কি কি কিনতে হবে সেটা বুঝিয়ে দিয়ে তিনি সুমির বাড়ীর দিকে চললেন। সুমির বাড়ী খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগে গেল।
সুমির প্রতিবেশীরা বেশ অবাক এবং ঈর্ষান্বিত হল যে বিজয় নাগেন্দ্র চোধুরী স্বয়ং সুমির খোঁজ করতে এসেছে। সুমির দূরাবস্তা তিনি যা আন্দাজ করেছিলেন তার থেকেও খারাপ। তবু অদ্ভুত লাগে সে তার কাছ থেকে বিন্দুমাত্র আর্থিক সাহায্য গ্রহন করেনি। আর কি আশ্চর্য তিনি তাকে কোনদিন কিছু দেবেন সে ভাবনাও আজ পর্যন্ত কোনদিন আসেনি।
তিনি জানতে পারলেন যে সুমি হাসপাতালে ভর্তি। তিনি এরমধ্যেই তার সাথে সুমির আলাপের বিষয়টিকে খোলসা করে দিলেন। তিনি জানতেন যে বিষয়টি নাহলে অন্য মুখরোচক রুপ নেবে। তাতে যদিও তার কিছু আসে যায় না। তবু তিনি একটু কায়দা করে বললেন যে তার বাড়ীতে একজন কাজের মহিলা প্রয়োজন সুমি কথা দিয়েছিল সে জোগাড় করে দেবে। কিন্ত এখন দেখছি তার নিজেরই কাজের প্রয়োজন।
বিজয়বাবুর দূরসম্পর্কের আত্মীয়া গর্ভবতী সেটাও জানালেন। যাইহোক তিনি সেখান থেকে সরাসরি হাসপাতালে গেলেন। সুমির আজ প্রসবের দিন কিন্ত তার জন্য পাশে কেউ নেই। এ কেমনতর সমাজ। গরীব বলে কি একটু সহানুভূতি পাবার যোগ্য নয়। এদিক ওদিক সমস্ত জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে তিনি একজন বৃদ্ধা মহিলার সন্ধান পেলেন যে সুমির সাথে আছেন।
সুমির সাথে তিনি এখন দেখা করতে পারবেন না। যাইহোক যথা সময়ে সুমি সন্তান প্রসব করল। তিনি দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সুমির সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেন। সন্তান ও মা দুজনেই সুস্থ আছে। সেই বৃদ্ধা সুমিকে বললেন যে বিজয়বাবু সারাদিন কিভাবে তাকে সাহায্য করেছে। সুমি আকাশের দিকে চেয়ে শুধু মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ জানাল।
একসময়ে ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হল। বিজয়বাবুকে এবার যেতে হবে তিনি দরকারী সমস্তকিছু কিনে বৃদ্ধাটির হাতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আসলেন। সুমি নিতে চাইছিল না। কিন্ত তিনি ধমক দিতেই সে চুপ করে গেল। তিনি খেয়াল করেছেন সুমি তাকে যথেষ্ট সমীহ করে। সুমির সন্তানটিকে একবার চোখের দেখা তিনি অনেক রাত্রে বাড়ী ফিরলেন। ক্লান্ত অবসন্ন বিজয়বাবু আজ প্রচন্ড খুশী। কয়েকদিন পর তিনিও পিতা হবেন।
সকালে ডন বৈঠকের জন্য গায়ে তেল মালিশ করলেও আজ মন কেমন যেন অস্থির। গতকাল মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি জাঙ্গিয়া পড়ে বসেই রইলেন ব্যায়াম আর করতে ইচ্ছে করছে না। তিনি স্নান করে ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালে চলে গেলেন। বিকেলে তিনি প্রচন্ড শক পেলেন যখন শুনলেন যে ডাক্তার নিজেই হার্ট ফেইল করে মারা গেছেন।
তার মনে অস্থিরতা বাড়তে লাগল। এসময় কোন অন্য হসপিটালে নেওয়াও বিপদজনক। রাত্রে ডেলিভারি রুমের বাইরে ছেলেটি শান্ত হয়ে বসে থাকলেও তিনি শান্ত হতে পারছেন না। মনের ভিতর চিন্তাগুলি দাপাদাপি করছে। তিনি এসময়ে সুমির উপস্থিতিও টের পেলেন না।
যখন বিজয়বাবুর চোখ সুমির উপরে পড়ল তখন তার সমস্ত টেনশন এক নিমেষেই দূর হয়ে গেল। সুমি কিছু বলতে যাবে তখন ডাক্তার বাবু বাইরে বের হলেন। তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। তিনি সেই ছেলেটিকে ডেকে একপাশে নিয়ে গেলে বিজয়বাবু সুমিকে ইশারা করলেন।
সুমি ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গিয়ে নিজেকে মেয়েটির দিদি বলে পরিচয় দিয়ে জানতে পারল যে গর্ভবতী অবস্থায় মেয়েটির সাথে সঙ্গমের কারনে মেয়ে এবং মা দুজনেরই শারীরিক অবস্থার প্রচন্ড অবনতি হচ্ছে। দুজনের কাউকেই বাঁচানো সম্ভব নয়। ভালো সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়ও চিরস্থায়ী নয়।
দুসংবাদটি যথাসময়ে সবাই জানতে পারল। বিজয়বাবু সেখান থেকে বেরিয়ে বটগাছের নীচে চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে বসে রইলেন। দুচোখ বেয়ে জলের ধারা বইতে লাগল নিশব্দে। সুমি হাসপাতালের যাবতীয় কাজ মিটিয়ে ফেলল।
বাংলা চটি কাহিনীর সঙ্গে থাকুন …